শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন

উলিপুরে পানির অভাবে আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। উপজেলায় কৃষকেরা আমন চাষ সম্পূর্ণ বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। এখনো কোনো কোনো বছর ভরা বর্ষায়ও প্রচুর বৃষ্টির দেখা মেলে না। ফেটে চৌচির হয় ফসলের মাঠ। আগে আমন রোপণের সময়টায় ধানক্ষেতের পাশেই নালা-ডোবা, হাওর-বিল পানিতে থাকত টইটম্বুর। এ পানি দিয়েই আমন ক্ষেতে সেচ দিতেন কৃষকরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি সংকটে পড়েছেন কৃষকেরা। নিরুপায় হয়ে কিছু কিছু কৃষক জমিতে পানি ছাড়াই খুনতি দিয়ে আমন চারা লাগাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৫শত ৬০ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৩শত হেক্টর জমি। এখনো বাকি আছে ৫ হাজার ২ শত ৬০ হেক্টর। এবছর আমনের ফলন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৩ হাজার ১শত ৫২ মে.টন। মাঠে পানি না থাকায় কৃষকরা চারা রোপণ করতে পারছেন না। তবে কৃষকরা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন ধানের চারা রোপণ করার সময় পাবেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু জমিতে বৃষ্টি ও সেচের পানি দিয়ে আমনের চাষ করলেও বৃষ্টি ও সেচ না থাকায় আমন চাষ করতে না পারায় বিপাকে পরেছেন চাষিরা। এদিকে দেখা দিয়েছে সেচের পানি সংকট। অপরদিকে কেউ কেউ অল্প পানিতে চাষাবাদ করে শুকনো জমিতে খুনতি দিয়ে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। তারা বলেন, আমাদের জমির পাশে সেচ থাকলেও তারা পানি দিচ্ছেন না। যার কারণে এভাবেই আমন চাষ করা লাগতেছে। আবার কেউ পানির অভাবে শুকনো জমি ফেলে রেখেছেন। আমন চাষিরা জানান, চারা লাগানোর পর যদি বৃষ্টির পানি পাই তাহলে ভালো ফলনের আশা করা যাবে। এভাবে অতি খরা হতে থাকলে আমনের চারা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের তেতুলতলা এলাকার আমন চাষি রফিকুল ইসলাম(৪৮) বলেন, নিচু এলাকায় কিছুটা পানি থাকায় ৪০ শতক জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। বাকি ৬০ শতক জমি উঁচুতে থাকায় আমন চাষের বিঘœ ঘটছে। বৃষ্টি ও সেচের পানি না পেয়ে একটু পানিতে জমি চাষাবাদ করে নিয়ে খুনতি দিয়ে শুকনো জমিতে আমনের চারা লাগাচ্ছি। বৃষ্টির পানি পেলে ভালো ফলনের আশা কারা যাবে। এভাবে অনাবৃষ্টি চলতে থাকলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন চাষি জয়নাল মিয়া(৬২), জহুরুল হক(৪৫), ফুলবাবু(৫২), ছলেমন মিয়া(৬০) ও আলমগীর হোসেন(৩৫) সহ আরও অনেকে বলেন, অনেক কৃষকরা চারা রোপণ শুরু করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় উঁচু জমিতে চারা রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বীজতলার চারাও পরিপক্ব হয়ে লাল হয়ে উঠছে। সময়মতো আমন ধানের চারা রোপণ করতে না পারলে ফলন ভালো হবে না। আমাদের মত অনেক আমন চাষি বিপাকে পরেছেন। উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফ আলী বলেন, এবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টির পানি না থাকায় সেচ দিয়ে আমন চাষ করতে হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবারে খরচ অনেক বেশি। ফলন ভালো হলে কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। ফলন সুবিধা না হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় অর্জনের কাছাকাছি। এবারে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জমিতে পানি না থাকায় কিছু কিছু উঁচু এলাকায় আমন চাষে বিঘœ ঘটছে। এছাড়া সেচের পানি দিয়েও আমন চাষ করেছেন। আশা করছি পানির সংকট থাকবেনা। আমাদের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com