৯৬ হাজার কোটি টাকা ফিরল পুঁজিবাজারে
দীর্ঘ ১৬ বছরের একটানা ক্ষমতার ন্যক্কারজনক অবসান হয়েছে। একটা চরম অস্থিরতায় ছিল দেশের মানুষের মতো পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক পতনের খেলা তারা বিনিয়োগের প্রাণ বাঁচাতে স্বল্প মুনাফায় তুলে নেয় অর্থগুলো। এখন দেশের পটপরিবর্তনে ভরসা পাওয়ায় নতুন করে ফিরেছে ডিএসইতে সাড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর চট্টগ্রাম স্টকে ফিরেছে ৪৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নত শাসনব্যবস্থার আশায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে। যার প্রভাব বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে বলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিদায়ী সপ্তাহের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের একটা পূর্বাভাসের হাওয়া স্পর্শ করে দেশের পুঁজিবাজারে। ফলে সেখানে ফিরতে উদ্বুদ্ধ হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিনই সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আসা শুরু করেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে নেই বিক্রেতা। লাভের আশায় সবাই এখন শেয়ার ধরে রেখেছে। ঢাকা স্টকে ৮৫ শতাংশ ক্রেতার কেনার চাপের বিপরীতে বিক্রেতা ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর। ঢাকা স্টকে প্রধান সূচকে ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ২৩১.৮৮ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক ১০৯.৫৩ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। কিন্তু এসএমই সূচকটি এই জোয়ারেও ৭৪.৪৭ পয়েন্ট হারিয়েছে।
গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৫৬ কোটি টাকার বেশি। আর শেয়ার বেচাকেনা বেড়েছে ১২ কোটি ৬৩ লাখের বেশি। মোট লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং শেয়ার লেনদেন বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ২৪ লাখের বেশি। যেখানে দিনে গড়ে ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার টাকায়, সেখানে গেল সপ্তাহে ২৭ কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ বা ৮৩৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। পুরো সপ্তাহে আগে যেখানে ডিএসইতে ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে মোট দুই হাজার ৩৯৩ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকায়, সেখানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সপ্তাহে ১১১ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রি হয়েছে মোট তিন হাজার ৩৩৯ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। এ দিকে ব্লক মার্কেটে গেল সপ্তাহে ১২৭ কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। আর এসএমইতে ৪৯ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। বাজারে ইতিবাচক লম্ফনের কারণে মূলধন ৫০ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা যুক্ত হওয়ায় ডিএসইর বাজারমূলদন এখন সাত লাখ তিন হাজার ৯১৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
পর্যালোচনার তথ্য বলছে, ডিএসইতে বাজারমূলধনে ‘এ’ শ্রেণীর ৮৬.৫ শতাংশ, ‘বি’ শ্রেণীর ১০.১ শতাংশ, এস শ্রেণীর ১.৩ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার অংশীদারিত্ব ২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে শেয়ারের ক্রেতা ছিল ৬৬ শতাংশ। কিন্তু কেনার চাপ ছিল ৮৫ শতাংশ। যেখানে ২৭ শতাংশ বিক্রেতার বিপরীতে বিক্রির চাপ ছিল ১৫ শতাংশ।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টকের দেয়া তথ্য বলছে, তাদের তিনটি সূচকই এক হাজার পয়েন্টের বেশি ফিরে পেয়েছে। সিএএসপিআই এক হাজার ৬৮০.৩৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক এক হাজার ৪৪৬.৭৮ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স এক হাজার ১৮.৭ পয়েন্ট পেয়েছে। ৩২৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দর বৃদ্ধিতে ছিল ২৫৬টি, দরপতনে ৫৮টি এবং ৯টির দর অপরিবর্তিতত ছিল। দুই কোটি ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ২৬০ কোটি ৪৭ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬১ টাকা বাজারমূল্যে। বাজারমূলধন ৪৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন সাত লাখ ২৭ হাজার ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য ৫৯০.৮ পয়েন্ট অথবা ১১.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৯২৪.৮১ পয়েন্ট হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নত শাসনব্যবস্থার আশায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে। যার প্রভাব বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। গড় টার্নওভার ৭৪.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহ জুড়ে ৩৪৯টি শেয়ারের বাজার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৯টি শেয়ারের বাজার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ১৭টি সেক্টর বিদায়ী সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিভিন্ন ব্রোকাজ হাউজের সংশ্লিষ্ট ও ডিএসই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় একটা গোমট ভাব ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আরো বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন এবং নতুন একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার হওয়াতে মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরেছে। তারা এখন পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেছে। এখন সরকারের উচিত বাজারের এই চাঙ্গা গতিকে ধরে রাখার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে টেকসই করা।