ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পৃথক পৃথক বৈঠক
পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা বিজয়কে নস্যাৎ করার চক্রান্ত করছেন: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থা নিয়ে (শেখ হাসিনা) দেশের জনগণের বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য আবারও চক্রান্ত শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল সোমবার বিকাল ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠক শেষে এ অভিযোগ করেন তিনি। এরআগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিকাল ৪টায় এই বৈঠক শুরু হয়।
গতকাল সোমবার বৈঠক শেষ ৪টা ৫০ মিনিটে যমুনা থেকে বের হয়ে আসেন বিএনপির নেতারা।এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মহলটি, যারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে হরণ করে নিয়েছিলো-তারা পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিজয়কে নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এত হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের পর সেই দলটি আবারও বিভিন্ন রকম কথা বলছে। যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকার অবশ্যই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু কোনো হত্যাকারীর
সঙ্গে না। যারা ছাত্র, শিশু, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে নির্দিষ্ট একটা সময় লাগবে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টা অবশ্যই দিয়েছি। আর আমরা তাদের সব বিষয়ে সমর্থন দিয়েছি।
ফখরুল বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কি কি করা যায়, সে বিষয়ে মতামত দিয়েছি। তারাও কি কি করতে যাচ্ছেন তা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও বেগম সেলিমা রহমান।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদল নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেনি বলে জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁরা সরকারকে সময় দিচ্ছেন।
বিএনপির প্রতিনিধিদল যমুনায় থাকতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সেখানে যায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলিনি। আগেও বলেছি, এটার জন্য কিছু সময় লাগবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদের অবশ্যই সেই সময় দিচ্ছি। আমরা তাদের সব বিষয়কে সমর্থন দিচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতার চেষ্টা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা, সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে, এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হন। জনগণ যাতে আগের মতো ধর্মীয় সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রেখে, জনগণের নিরাপত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখে সরকারকে সহায়তা করেন। আমরা পুরোপুরিভাবে সেভাবে সহায়তা করছি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গণতন্ত্র হত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের ওপর দীর্ঘদিন অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়ে মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে তার থেকে মুক্তি পেয়ে মুক্ত পরিবেশে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বসেছেন বিএনপির নেতাদের সঙ্গে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায়, সে বিষয়ে তাঁরা মতামত দিয়েছেন। সরকারও তাদের মতামত জানিয়েছে।
‘এখন মনে করি সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য’Íএমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে মহলটি, যারা মানুষের অধিকার হরণ করেছিল, তারা আবার বাইরে থেকে, এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে, সেখান থেকে বাংলাদেশের বিজয় নস্যাৎ করার চক্রান্ত করছে।
আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনক, এত হত্যা-নির্যাতনের পরও সেই দলটি আবারও বিভিন্ন রকম কথা বলছে। তিনি মনে করেন এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সব দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলা প্রয়োজন, কিন্তু হত্যাকারীর সঙ্গে নয়।