শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার

হাদি-উল-ইসলাম
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪

নিজ দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও বসবাস করার স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। শান্তির ধর্ম ইসলামেও এই অধিকার আছে। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাচল ও বসবাস করার অধিকার রাখে। ধর্ম-বর্ণ, গোত্র-দল-নির্বিশেষে এর কোনো পার্থক্য নেই।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য সুগম করেছেন। কাজেই তোমরা তাঁর দিকে যাতায়াত করো এবং তাঁর দেওয়া জীবিকা আহরণ করো।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ১৫)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তুমি বলো, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো, তারপর দেখো, মিথ্যাবাদীদের কেমন পরিণতি হয়েছে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১১) নিজ দেশের পাশাপাশি কেউ চাইলে স্বেচ্ছায় চাকরি, ভ্রমণ কিংবা কোনো ভালো উদ্দেশ্যে অন্য দেশে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করবে, সে পৃথিবীতে বহু প্রশস্ত স্থান ও সচ্ছলতাপ্রাপ্ত হবে এবং যে কেউ গৃহ থেকে বহির্গত হয়ে আল্লাহ ও রাসুলের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করে, তৎপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাহলে নিশ্চয়ই এর প্রতিদান আল্লাহর ওপর ন্যস্ত রয়েছে এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০০)
এসব আয়াত থেকে বোঝা যায়, মানুষ আল্লাহর এই পৃথিবীতে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে শুধু নিজ দেশে নয়, সব দেশে সে অবাধে চলাফেরা ও বসবাস করতে পারবে। অথচ অনেক মানুষকে অন্যায়ভাবে নিজ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এই মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সমগোত্রীয় কিছুসংখ্যক লোককে তাদের বসতি থেকে উচ্ছেদ করেছ, তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করেছ এবং তারা যখন যুদ্ধবন্দিরূপে তোমাদের সামনে উপস্থিত হয় তখন তোমরা তাদের থেকে মুক্তিপণ আদায় করো, অথচ তাদের বসতি থেকে বহিষ্কৃত করাই তোমাদের জন্য হারাম ছিল।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮৫)
তবে কখনো কোনো মানুষ বা মানবগোষ্ঠী সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-নিপীড়ন বা কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মাধ্যমে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করলে ইসলাম সে ক্ষেত্রে তাদের স্থান ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করার নির্দেশ দিয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জনপদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি এটাই যে তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা তাদের জন্য দুনিয়াবি লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অভ্যন্তরীণ এবং বহির্দেশে স্বাধীনভাবে বসবাস ও চলাচলের স্বাধীনতা আছে। তবে অত্যাচারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, সাহল ইবনু আনাস আল-জুহানি (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে অমুক অমুক যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এতে লোকজন (সৈনিকরা) বাসস্থান সংকুচিত করে ফেললে এবং চলার পথ বন্ধ করে দিলে নবী করিম (সা.) ওই লোকজনের মধ্যে একজন ঘোষক পাঠিয়ে ঘোষণা করে দিলেন, যে ব্যক্তি বাসস্থান সংকুচিত করে ফেলল অথবা চলার পথ বন্ধ করে দিল, তার জিহাদ করার প্রয়োজন নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬২৯)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com