সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সোনালি পাট বাছার কাছে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষাণীরা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে সোনালি স্বপ্ন নিয়ে সোনালি আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষানির ব্যস্ততা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডোবা ও বর্ষার বিলের পানির মধ্যে জাগ (পঁচাতে) দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন কৃষক-কৃষানি। এক সময় সোনালি আঁশের পাট প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল বাংলাদেশে। পাট চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও পাটের দাম কমে যাওয়াতে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে । বর্তমানে পাটের দাম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবার পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকরা। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বর্ষা আসায় সময়মতো পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিতে পারছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার জলাশয়ে জাগ দেওয়া পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাক-কৃষাণীরা। সরজমিনে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কেউ পাট কাটছে জমি থেকে আবার কেউ বা পাট জাগ দিচ্ছে পানিতে। জাগ দেওয়া সেই পাটগুলো গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ মিলে রাস্তার পাশে বসে কিংবা বাড়ির উঠোনে বসে পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করে ধোয়ার পর রোদে শুকাছে। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমে নতুন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষক-কৃষানিরা। এখন চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ। শুধু কৃষক নয় এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা থাকায় কৃষকদের সঙ্গে প্রতিবেশীরাও আঁশ ছাড়িয়ে দিয়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন। পাট ছাড়ানো কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক শেফালী , লাখি, মনোয়ারাসহ অনেকেই জানান, বর্ষা এলেই পাট কাটা ও পাটের আঁশ ছাড়ানো ধুম পড়ে যায়। এ সময় নারীদের তেমন কোন কাজ না থাকায় কেউ টাকার বিনিময়ে আঁশ ছাড়ান আবার কেউ বা পাটকাঠি নেওয়ার শর্তেও পাটের আঁশ ছাড়ান। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের চাষ আমার এলাকায় বেশী হওয়ায় অনেকেই পাটের আঁশ ছাড়ানো শর্তে বাড়তে আয় করছেন অনেক নারীরা। সংসারে একটু সুখ আনতেই পাটের আঁশ ছাড়ানো কাজ করেন। কৃষক সলেমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন , আমাদের এলাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছরের পাট চাষ বেশি হয়েছে। পাট চাষে খরচ কম হওয়ায় ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেকে পাট চাষ করেছেন। আমরা আশা করছি পাটের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে বর্তমানে যে দাম আছে। বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে পাটের দাম মান অনুযায়ী প্রতিমণ ৩ হাজার দুইশো থেকে ৩ হাজার সাতশো পর্যন্ত দাম উঠা নামা করছে। উল্লাপাড়া পাট ব্যবসায়ী মখলেছ বলেন পাটের মান অনুযায়ী, বাজারে সোতা পাট ২৫শ থেকে ২৭শ এবং তোসা ,মেস্তা ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৭শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান, গত বছর উপজেলায় ১৬২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিলো। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১৬৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সময় মতো বর্ষার পানি আশায় কৃষকদের পাট জাগ দেওয়া এবং আঁশ ছাড়ানো কোন সমস্যা নেই এবং পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুশি।