ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিশুসহ ৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। উদ্বেগ উৎকন্ঠা শংকার মধ্যে দিয়ে দিন-রাত পার করছেন এলাকাবাসী। বিশষে করে শুক্রবার দিন গত রাতটি ছিল বন্যার ভয়াবহ রূপ। উপজেলা জুড়ে বন্যা দুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি,হাহাকার,আতংকে নির্ঘুম ভয়াল রজনীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয় ও উপজেলার বাহিরের সেচ্ছাসেবী ও মানবিক সংগঠন গুলোর ঝাঁপিয়ে পরা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখনো সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ উপজেলা প্রশাসন,আইন শৃংঙ্কলা বাহিণীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও সেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। যার কারনে মানুষের জান মালের অনেক ক্ষতি রোধ করা গেছে বলে সচেতন মহল মন্তব্য প্রকাশ করেন। বুধবার থেকে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলার বাগানবাজার, দাঁতমারা ইউনিয়নসহ ফটিকছড়ি পৌরসভা, নাজিরহাট পৌরসভা, সুন্দরপুর, পাইন্দং, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, নারায়ণহাট, ভূজপুর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।হালদার উপর নির্মিত নারায়নহাটের কাঠের ব্রীজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্বিক কেন্দ্র মাইজভা-ার দরবার শরীফসহ আশে পাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে নিঁখোজ হওয়ার একদিন পর সামি(১২) নামে এক শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। নিহত সামি দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সাদিনগরের ভাড়াটিয়া হামিদের পুত্র বলে জানা যায়।
এছাড়াও নিখোজ রজি আহমদ নামে এক বৃদ্ধ ও ইমরামের লাশ পাওয়া যায় পানির মধ্যে। অন্যদিকে সুন্দরপুরে ২১ বছরের এক যুবক বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ নিহত হয়। এদিকে পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চাষের জমি,পুকুর,মাছের প্রজেক্ট,পোল্ট্রী ফার্ম। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন,উপজেলা চাষাবাদদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছ। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ সম্ভব হবে। উপজেলায় দুই পৌরসভাসহ প্রায় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রন কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প অফিসার আবুল হোসেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধ্বস পরিস্থিতির জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে ২০ টি ইউনিয়ন মেডিকেল টীম ও ৫ টি সদর মেডিকেল টিম। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টীম গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,ফটিকছড়ি উপজেলার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে।বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রাতে আসা সেচ্ছাসেবক ও বোট দিয়ে বিপুল সংখ্যক দূর্গতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই শুকনো খাবার বিতরণ করতে চাচ্ছেন, বিক্ষিপ্তভাবে বিতরণ না করে উপজেলা প্রশাসন এর সহযোগিতা নিতে পারেন। উপজেলা প্রশাসন এর নিকট শুকনো খাবার বা ত্রান পৌছে দিলে আমরা দূর্গত এলাকার মাত্রা অনুসারে শুকনো খাবারগুলি পৌঁছে দিতে পারি। তিনি আরো বলেন,ফটিকছড়ির মানুষের জন্য সারাদেশের অভাবনীয় এই ভালোবাসা অতুলনীয়।