শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

সম্পদ সঞ্চয়ে কী লাভ?

মীযান মুহাম্মদ হাসান
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪

টাকা-পয়সা ও অর্থসম্পদের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। মানুষ মাত্রই সম্পদ, সন্তান ও প্রাচুর্যের মোহে আচ্ছন্ন। এ কথা সত্য ও চিরন্তন। এটি প্রাচীনকাল থেকে প্রমাণিত। মহা গ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে-‘সুশোভিত করা হয়েছে মানবজাতির জন্য নারী, সন্তান-সন্ততি, সঞ্চিত স্বর্ণ ও রৌপ্যভা-ার, প্রশিক্ষিত ঘোড়া, পালিত পশু এবং শস্যক্ষেতের প্রতি ভালোবাসা ও আকর্ষণকে। এটি পার্থিব জীবনের সম্পদ এবং আল্লাহর কাছে রয়েছে শ্রেষ্ঠতম অবস্থান।’ (সূরা আলে ইমরান-১৪)। একসময় মানুষের ঘরে খাবার ছিল না। অভাব ছিল। দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, বন্যা, অতি বৃষ্টি ইত্যাদি কারণে মানুষকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। না খেয়ে, না পরে জীবন ধারণ করতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। বর্তমানে এমন অবস্থা সচরাচর খুব কমই চোখে পড়ে যে, মানুষ না খেয়ে; না পরে অনাহারে দিন পার করছে; বরং স্বাভাবিক খাওয়া পরা ও দরকারি নিত্যপণ্যও মানুষের হাতের নাগালে। কাজেই খাদ্যবস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পূরণ করার পরিবর্তে অর্থকড়ি সম্পদ সঞ্চয় করা কখনো ভালো কাজ হতে পারে না। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ যে, কষ্টে জীবনযাপন করে টাকা পয়সা জমিয়ে রাখা হবে। এ জাতীয় কৃপণতা কখনো কারো জন্য কাম্য নয়! বরং প্রয়োজনে সাধ্যমতো খরচ করাই জরুরি। এটিই ইসলামের শিক্ষা। এ জন্য হাদিসে নিজের পরিবারের জন্য খরচ করাকেও সদকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আল্লাহ তাদের যা কিছু দিয়েছেন, তাতে কৃপণতা করলে, তাতে তাদের মঙ্গল আছে; বরং এ (কৃপণতা) তাদের জন্য অমঙ্গল। তারা যে ধন সম্পদের জন্য কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাই তাদের গলার বেড়ি হবে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৮০)
আয়াতের তাফসিরে এমন কৃপণের কথা বলা হয়েছে, যে আল্লাহর দেয়া সম্পদ তাঁর রাস্তায় ব্যয় করে না। এমনকি সেই মালের ওয়াজিব জাকাতও আদায় করে না। সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে, ‘যাকে আল্লাহ তায়ালা ধন-সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে ব্যক্তি সেই ধন-সম্পদের জাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন (আজাবের জন্য) তার সব সম্পদকে মাথায় টাক পড়া (অত্যন্ত বিষাক্ত) সাপের আকৃতি দান করা হবে। যার চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে। সেই সাপকে বেড়ির মতো তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। এরপর সে তাকে দংশন করে বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সেই সঞ্চিত ধনসম্পদ।’ (বুখারি)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের এ শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, আমরা মাল সম্পদ প্রয়োজন অনুযায়ী অবশ্যই খরচ করব। শুধু জমা করে রাখব না। অযথা সঞ্চয় করা থেকে বিরত থাকব। এমন যেন না হয় যে, অর্থ সম্পদ সঞ্চয় করে সম্পদের মালিক হলাম। অঢেল প্রাচুর্য জমা করে রাখলাম। কিন্তু তা আমার কোনোই কাজে এলো না। নিজ প্রয়োজনে খরচ করে দুনিয়াতেও উপকৃত হতে পারলাম না। এমনকি নফল দান-সদকা ও জাকাত আদায় করার মাধ্যমে পরকালের মুক্তির পথও সুগম হলো না। আবার এমনও হতে পারে আমার মৃত্যুর পর আমার উত্তরাধিকার স্ত্রী-সন্তানরাও এ সম্পদের সঠিক ব্যবহার করল না। তখন কী হবে আমার উপায়? এই সঞ্চিত অঢেল প্রাচুর্য, ধন সম্পদ কী আমার কোনো কাজে আসবে? তবে এই সম্পদ সঞ্চয়ে কি লাভ? লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com