ভারতের ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ার খবরে বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পদ্মা নদী বিধৌত এলাকাগুলোতে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যা ও ভয়াবহতা নিয়ে ছেয়ে গেছে নানা গুজব ও অভিযোগ। তবে এখনো আতঙ্কের কোনো কারণ দেখছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তাদের দাবি, রাজশাহী অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেও এ অঞ্চলে বন্যার কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার নির্ধারিত আছে। গত ১৮ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত রয়েছে পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। যা মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত আছে। তবে ১৭ আগস্ট চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার ছিল। এছাড়াও গত রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর রাজশাহী অংশে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় যা ছিল ১৬ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার। এদিকে নদী সংলগ্ন ও চরের বাসিন্দাদের ভাষ্য, প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমেও ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দিয়েছে ভারত সরকার। তবে নদী সংলগ্ন চরগুলোর দু’এক জায়গায় পানি ঢুকলেও রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি এখনও স্বাভাবিক আছে। আগামীতে খারাপ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না সেটি নিয়েও শঙ্কিত অনেকেই।
জানতে চাইলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ভূবন পাড়া গ্রামের কৃষক ফারুক আলী বলেন, পদ্মা নদীর পানি এখনো বৃদ্ধি পায়নি। তবে নদীতে প্রচ- ঢেউ এবং ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিগত চার-পাঁচ বছরে যে পরিমাণ ভাঙন দেখা দেয়নি এবার সেটা দেখা দিয়েছে, যে কারণে আবাদি জমিগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। তাই ফারাক্কা গেট খুলে দেওয়ায় আমরাও কিছুটা আতঙ্কে আছি।
একই ইউনিয়নের ট্যাক পাড়া গ্রামের কৃষক জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পায়নি। তবে নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে আমাদের ফসলের জমিগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ফারাক্কার সমস্ত গেট খুলে দিলেও পানি তেমন বৃদ্ধি পায়নি। তিন দিন আগে যেখানে পানি ছিল এখনো সেখানেই রয়েছে। শুধু পানির চাপ বাড়ার ফলে আবাদি জমি ভেঙে যাচ্ছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। ২০১৩ সালের পরে আমাদের দিকে পানি বিপৎসীমা পার হয়নি। রাজশাহীর সব পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির যে উচ্চতা ছিল, আজ দুপুর ১২টার দিকেও সেটাই ছিল।
তিনি আরও বলেন, ভারতের বিহার অঞ্চলের পানি বেড়ে গেলে সেটা মূলত আমাদের এদিকে প্রবেশ করে। সেখানে যদি আরও পানি বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে আমাদের বিপৎসীমার আশপাশে পানি আসতে পারে। তার আগে মুর্শিদাবাদ এলাকায় পানি প্রবেশ করবে। তাই আপাতত কোনো আতংকের কারণ নেই। আর আগামী ৫-৭ দিনেও রাজশাহী অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস নেই। উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, সাধারণত ১০ দিনের জন্য নদ-নদীর পানি বাড়ার পূর্বাভাস দেন তারা। সেই হিসাবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই। তবে আগামী কয়েকদিন উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে সর্বশেষ দেখে পদ্মার পানির প্রকৃত অবস্থা ও পরবর্তী পরিস্থিতি অনুমান করা সম্ভব হবে।