অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী চায়, জনগণ কী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়, তা জানার জন্য অতিদ্রুত বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো ধরনের দুর্বৃত্তায়নের সাথে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি দুয়েকজন করে থাকে, তবে সেটি বিএনপি নয়। সেটা তারা ব্যক্তিগতভাবে করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ঢালাওভাবে মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে নেতাকর্মীদের বলেন, পুলিশের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যাচাই করে নিন। এমন কোনো মামলা দিবেন না, যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হবে না। সব মামলা কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে না করে, যেখানে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের নামে মামলা করতে হবে। অনেক জায়গায় জেলা প্রশাসকের নামেও মামলা দেয়া হচ্ছে, সেগুলো আবার নিচ্ছে। আমরা চাই বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে। যেভাবে মামলা হচ্ছে, তাতে এ বিপ্লবকে সঙ্গত করবে না।
গণবিপ্লবকে নস্যাৎ করতে বা ব্যর্থ করতে অনেক ধরনের চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এখনো অনেক ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেয়া। যেখানে বলা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে, যার এক পারসেন্টও সঠিক না।
বিএনপির গত ১৫ বছর ধরে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেশি ত্যাগ করেছে, করে যাচ্ছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর জেল খেটেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসিত হয়েছেন। বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যারা অন্যায় নিপীড়নের শিকার হয়নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে তারা সরকার চালাতে পারবে। তারা জনগণের চিন্তা ভাবনা করে ভিন্ন মতে। আমি সেই রাজনৈতিক দলের নাম বলছি না। আমরা লড়াইটা করেছি গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেটার জন্য তো আমরা নির্বাচনের কথা বলব। এটা তো আমাদের রাইট আছে। আমরা নির্বাচনের জন্যই এতদিন সংগ্রাম লড়াই করে আসছি। যখন তত্ত্বাবধায় সরকার বাতিল হলো, তখন সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য ওই দলগুলো মিলেই আন্দোলন করেছি। এ আন্দোলনের পর ওই দলগুলোকে কিন্তু অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি তাদের অফিস পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন ওই বিষয়টিকে বাদ দিয়ে তো কোনো রাজনৈতিক চিন্তা করব না।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার এসেছে, অবশ্যই আমরা তাদের যৌক্তিক সময় দিবো। সকল প্রকার সহযোগিতা আমরা এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা কিন্তু ভুলে যায়নি ওয়ান ইলেভেনে কারা কারা বিরাজনীতিকরণে ভূমিকা পালন করেছিল। রাজনীতির দরকার নেই, তারা একটি সিলেক্টেড গভর্মেন্টের কথা বলেছিল। সে সময় বিএনপিকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন ও বাতিল করার পাঁয়তারা করেছিল। এ কথাগুলো আমরা ভুলতে পারি না। দেশের জন্য, মানুষের জন্য রাজনীতির জন্য এ কথাগুলো তো মনে রাখতেই হবে। যখন আমরা তাদের আবার সামনে দেখি, তখন সন্দেহ হয়। প্রশ্ন এসে যায়। এজন্য আমরা বার বার বলে যাচ্ছি, এইবারের আন্দোলনে যারা বাধা দিয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের চেহারাগুলো দেখতে চাই না। একইসাথে যারা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার জন্য কাজ করেছে, সেই চেহারাগুলোও আমরা দেখতে চাই না।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতি দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আলোচনায় বসা দরকার। তারা কী চায়, জনগণ কী চায়, আমরা কী চাই- এ বিষয়টা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। না হলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।
জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপণ বাতিলের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই, যেকোনো দল যেকোনো ব্যক্তি তার স্বাধীন দল করার অধিকার আছে। এটিই গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য। কিন্তু স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে। স্বাধীনতাকে যারা বিশ্বাস করে না তাদের সমর্থন করা যাবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে কোনো বিরাজনীতিকরণের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখছি না। আমি সতর্ক করছি। কিছু ফেস দেখছি, যাদের আমরা কোনোদিন দেখিনি, হঠাৎ করেই তারা মিডিয়াতে ফ্রন্ট পেজে চলে আসছে। তাদের বক্তব্য, তাদের থিউরি- এগুলো আপনারা প্রচার করছেন। আমার কাছে মনে হয়, এটি সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভালো বিষয় নয়। আমি নাম বলতে চাই না, যাদের কোনোদিনই দেখলাম না, তারা হঠাৎ করেই ফ্রন্ট পেজে চলে আসছে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের তো আমরা চিনি না, তাদের বক্তব্য কী, কী করতে চান? সেটাও বুঝি না। দেশের মানুষও বোঝে না।