শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন

আল্লাহর রাস্তায় নিহতরা অমর

নাজমুল হুদা মজনু
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৪
শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন

জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় ইসলাম-ঈমান এবং নেক আমল কস্মিনকালেও প্রতিবন্ধক নয়; বরং সৃজনশীলতা ও প্রজ্ঞা প্রকাশে অনির্বচনীয় এবং অতুলনীয়। কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু লোক তুচ্ছ নাম যশ খ্যাতি অর্জনের মোহে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর তকমা লাগিয়ে নিজেদের ঢোল নিজেরাই বাজায়; ধরাকে সরা মনে করে অবশেষে সমাজ-সংসার রাষ্ট্রে পরিণত হয় ঘৃণিত ও পাপিষ্ঠ প্রাণীতে।
অথচ আসমানি জ্ঞানের অধিকারী আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জ্ঞানের উৎস সূচনা ও পরিধি জগৎসমূহের স্রষ্টা মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আরশে মাকাম পর্যন্ত বিস্তৃত। তারপরও তিনি জানা-বোঝা-মানার ব্যাপারে অমুখাপেক্ষী নন। অবিরাম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতের কাঙ্গাল; তাঁর দয়া-মায়া-প্রীতির প্রত্যাশী তিনি। সেই সাথে তাকওয়া- পরহেজগারি তথা আল্লাহভীতির অনন্য উদাহরণ। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা ফাতির-২৮)
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবিবের উদ্দেশে আরো বলেন, হে নবী, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ কুশলী, তোমার মালিকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা কিছু ওহি নাজিল হয় তুমি শুধু তারই অনুসরণ করো; তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সে সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিফহাল রয়েছেন, তুমি (শুধু) আল্লাহ তায়ালার ওপরই নির্ভর করো; চূড়ান্ত কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহ তায়ালাই (তোমার জন্য) যথেষ্ট। (আল-আহজাব : ১-৩)
আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রেরিত পরম প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজ রহমতের চাঁদমাখা আলোয় অবগাহন করিয়ে পথহারা বান্দাদের দিয়েছেন পথের দিশা। কুরআন মাজিদে আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর (সাক্ষাৎ) ও আখিরাতে (মুক্তির) প্রত্যাশা করে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (আল-আহজাব-২১)
শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেজা আল কুরআন অবতীর্ণ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অন্ধকার অমানিশা ভেদ করে জ্যোৎস্না স্নাত সরল সুন্দর পথ দেখিয়েছেন তার বান্দাদের। অভাবনীয় অমূল্য এই কিতাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়ার জিন্দেগিতে বান্দার চলা-বলা, কাজকর্ম, আদান-প্রদান, লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ প্রভৃতি বর্ণনা করে ইহকালের পথনির্দেশ ও পরকালের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয় দান করেছেন। পাশাপাশি দুর্গম এই চলার পথের উপায়-উপকরণসহ বিস্তৃত বর্ণনা করেছেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ খরিদ করে নিয়েছেন মু’মিনদের থেকে তাদের জান ও তাদের মালের বিনিময়ে যে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, কখনো হত্যা করে এবং কখনো নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আল্লাহর চেয়ে নিজের ওয়াদা অধিক পালনকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ করো তোমাদের সে সওদার জন্য যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ। আর তা হলো বিরাট সাফল্য। তারা তাওবাহকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোজাদার, রুকুকারী, সিজদাকারী, ভালো কাজের আদেশদাতা, মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হিফাজতকারী; (এসব গুণে গুণান্বিত) মু’মিনদের তুমি খোশখবর শুনিয়ে দাও। (আত-তাওবাহ ১১১-১২)
মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মুমিন জীবনের প্রধান লক্ষ্য। তাই এ কথা মনে রাখতে হবে যে, এ পথ পুরোপুরি কুসুমাস্তীর্ণ নয়; তবে আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তার জন্য সহজ করে দেন।
এখন আমাদের কী করতে হবে সে নির্দেশনা কুরআনুল কারিমের পাশাপাশি আল্লাহর হাবিবের হাদিসেও বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই; বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়ত। যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হয়, তখন বেরিয়ে পড়। (বুখারি-২৭৮২)
রাহমানির রাহিম-মহা দয়াময় ও দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন, যেসব মানুষ পরকালের (মনোরম জান্নাতের) বিনিময়ে এ পার্থিব জীবন ও তার সুখ-সাচ্ছন্দ্য বিক্রি করে দিয়েছে, সেসব মানুষের উচিত আল্লাহ তায়ালার পথে লড়াই করা, কারণ যে আল্লাহর পথে লড়াই করবে সে এ পথে জীবন বিলিয়ে দেবে কিংবা বিজয় লাভ করবে, অচিরেই আমি তাকে (এ উভয় অবস্থার জন্যই) বিরাট পুরস্কার দেবো। (আন-নিসা : ৭৪)
আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে আল্লাহর পথে লড়াই-সংগ্রামে শহীদদের মর্যাদার অপূর্বগাথা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত সামুরা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যক্তি আমার কাছে এলো এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠল। এরপর আমাকে এমন উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিলো যে, আগে আমি কখনো এর চেয়ে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যক্তি আমাকে বলল, এটি হচ্ছে শহীদদের ঘর। (বুখারি-২৭৯১)
সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যারা যুদ্ধ করে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে অকাতরে জীবন বিলিয়ে শহীদ হন তাদের সম্মান-সম্মাননা দান করেন স্বয়ং আল্লাহ জাল্লা শানুহু। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহতরা অমর। অশেষ দয়াময় ও দাতা মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তোমরা তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পারো না। (সূরা বাকারাহ : ১৫৪)
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com