আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন ন্যায়পরায়ণ শাসক। শোষণ করা আল্লাহ তায়ালার শানের বিপরীত। তিনি তার কোনো সৃষ্টির উপরে কখনোই শোষণ করেন না। বরং শোষিত নিপীড়িত মানুষকে আসমানি সাহায্য প্রেরণ করে শোষকের সব অপতৎপরতা রুখে দেন। সুতরাং শোষকের পতন অপরিহার্য। পতন অতীতেও হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে ইনশাআল্লাহ। তাই দুনিয়ায় শোষকদের পতনে শুধু আনন্দে আত্মহারা না হয়ে বরং তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। প্রথম শিক্ষা হলো শোষকের ওপর বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে কিংবা অভিমান করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা যাবে না। কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বর্ণনা। ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতগুলো তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা নিসা) দেশের সম্পদ জনগণের কাছে আমানত। আর আমানত রক্ষাকারীদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রদানের ওয়াদা রয়েছে আল্লাহ তায়ালার।
যেমন কুরআন বলেছে, ‘নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনরা; যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত। যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। যারা জাকাত সম্পাদনকারী। যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে; নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীদের ছাড়া অন্য সবার থেকে, কেননা এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ এ ছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। এরাই হলো সেই ওয়ারিশ, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের মীরাস লাভ করবে। তারা তাতে সর্বদা থাকবে। (সূরা মুমিনুন)
‘দ্বিতীয় শিক্ষা হলো মানুষ সাধারণত প্রতিশোধপরায়ণ। তাই প্রতিশোধ নয় বরং ক্ষমা করতে হবে। ক্ষমাই হলো জান্নাতি বা মুত্তাকি মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি সব আসমান ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (মুত্তাকি হলো তারা) যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান)
বিশ্ব মানবতার মহানায়ক, আমাদের মহানবী মুহাম্মদ সা: মক্কা বিজয়ের দিন কাবার সামনে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমার সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? আমি তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করব? তারা বলল, আমরা শুধু উত্তমই আশা করি, হে সম্মানিত ভাই এবং সম্মানিত ভাতুষ্পুত্র। রাসূল সা: বললেন, আমি তোমাদের তেমনি বলব যেমন ইউসূফ ‘আ: তাঁর ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেন : ‘আজ তোমাদের প্রতি কোনো ভর্ৎসনা নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন।’ (সূরা ইউসুফ) তিনি বললেন, তোমাদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করা হলো। তারপরও রাসূল সা:-এর চাচা আবু সুফিয়ান দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বললেন, তোমার চাচির ব্যাপারে কী বলো? কারণ রাসূল সা:-এর চাচি অর্থাৎ আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা আমির হামজা রা:-এর ওপর ক্রোধে কলিজা চিবিয়ে খেয়েছে। রাসূল সা: বললেন, তাকেও ক্ষমা করে দিলাম।
তৃতীয় শিক্ষা হলো দুনিয়ার কোনো সরকার শোষক কিংবা কোনো জালিমই স্থায়ী নয়, একমাত্র স্থায়ী আল্লাহ তায়ালা। ‘জমিনের ওপর যা কিছু রয়েছে, সবই ধ্বংসশীল। আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা।’ (সূরা আর রহমান)
আল্লাহ তায়ালা শুধু পরীক্ষার বস্তু হিসেবে কাউকে বিত্তবৈভব কিংবা ক্ষমতা প্রদান করে অথবা কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন। যেমন কুরআন বলেছে- ‘বলো হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান’। ( সূরা আলে ইমরান)
চতুর্থ শিক্ষা হলো দুনিয়ায় কেউ আপন নয়। কারণ জালিম শোষকরা যখন শাহী মসনদে বসে মানুষের উপরে অত্যাচার নির্যাতন করে, তখন অনেকেই জালিমদের কাছে প্রিয়জন থাকার জন্য জালিমের আপনজন হওয়ার অভিনয় বা চাটুকারিতা করে। কিন্তু যখন জালিম বা শোষকের পতন হয় তখন কেউ পাশে থাকে না। বরং সবাই পালিয়ে যায় আপন জীবনের নির্মম পরিণতির কথা ভেবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করো অথবা যে কোনো মান্নত করো তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। (বাকারা) তাই আসুন জালিম শোষকরা যে সীমালঙ্ঘন করার কারণে তাদের পতন হয়েছে। আমরা তার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি এবং আমরাও সেই একই সীমালঙ্ঘন না করি।