শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

তুলসি চা পান করলে শরীরে যা ঘটে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তুলসি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই পাতা দারুণ কার্যকরী। একই সঙ্গে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, শরীরের বর্জ্য পদার্থ দূর করতে, মানসিক সুস্থতায় তুলসি কাজ করে।
তুলসি পাতায় কী কী পুষ্টি মেলে? তুলসি পাতায় ইউজেনল, ক্যারিওফাইলিন ও ইউক্যালিপটলের মতো প্রয়োজনীয় তেল আছে, যার মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে। এই তেলগুলোই মূলত তুলসির থেরাপিউটিক প্রভাবের চাবিকাঠি।
এছাড়া তুলসি পাতায় মেলে ভিটামিন এ ও সি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে আরও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান। যা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায় অবদান রাখে। এই প্রাকৃতিক ভেষজটি ফ্ল্যাভোনয়েড ও ফেনোলিক যৌগ সমৃদ্ধ। যা শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এই যৌগগুলো ফ্রি র্যাডিকেল দূর করতে সাহায্য করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে ও সেলুলার ক্ষতি প্রতিরোধ করে। সর্দি-কাশি সারাতে তুলসি দুর্দান্ত কাজ করে। এজন্য অনেকেই তুলসি চা পান করেন। তবে জানলে অবাক হবেন, তুলসি চা শুধু সর্দি-কাশিই কমায় না বরং শারীরিক একাধিক সমস্যারও সমাধান করে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক নিয়মিত তুলসি চা পান করলে শরীরে কী ঘটে-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তুলসি চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে পরিচিত। ভেষজটিতে ইউজেনল ও ইউরসোলিক অ্যাসিডের মতো যৌগ আছে। এসব যৌগে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই মূলত ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। নিয়মিত তুলসি চা পান করলে মৌসুমী সর্দি-কাশি, ফ্লুসহ অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে সহজেই লড়াই করতে পারবে আপনার শরীর।
স্ট্রেস কমায়: জানলে অবাক হবেন, তুলসি চা পান করলে মানসিক সুস্থতাও মেলে। অর্থাৎ স্ট্রেস কমাতে দারুণ কার্যকরী এই চা। তুলসি চা পান করলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা সহজেই কমতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস ও উদ্বেগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এমনকি এই চা পানে আপনার মেজাজ ভালো থাকে ও সামগ্রিক মানসিক সুস্থতা মেলে। এমনকি এ চা ব্রেইনের ফাংশনেরও উন্নতি ঘটায় যেমন- ফোকাস ও মেমরি উন্নত হয়।
হজমশক্তি বাড়ায়: তুলসি চা পান করলে হজমের এনজাইমের নিঃসরণ বাড়ে। ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এই চা নিয়মিত পান করলে গ্যাস ও বদহজমের মতো সমস্যা সহজেই দূর হয়।
শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:তুলসির অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- সর্দি-কাশি ও হাঁপানির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এমনকি বুকে জমে থাকা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতেও প্রাকৃতিক দাওয়াই হিসেবে কাজ করে তুলসি চা।
শরীরকে ডিটক্সিফাই করে: অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় তুলসি চা পানে ত্বকের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের স্বাস্থ্য ফেরে। তুলসি চা পান করলে রক্ত বিশুদ্ধ হয় ও ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় থাকে। ফলে ব্রণ ও ত্বকের ফুসকুড়ি অনেকেটাই কমে।
তুলসি চা কীভাবে তৈরি করবেন? এক কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে এক মুঠো তুলসি পাতা দিন। ১০-১৫ মিনিট পানি ফুটিয়ে নিন। এরপর পাতা ছেঁকে নিন। ব্যাস তৈরি আপনার তুলসি চা, যা স্বাস্থ্যের জন্য এক প্রাকৃতিক দাওয়াই। হালকা ঠান্ডা করে চায়ের মতো পান করুন এই বিশেষ পানীয়। বাড়তি স্বাদের জন্য লেবুর রস বা মধুও ব্যবহার করতে পারেন।
দিনে কতটুকু তুলসি চা পান করবেন? প্রতিদিন ১-২ কাপের বেশি তুলসি চা পান করা উচিত নয়। কোনো কিছুরই অতিরিক্ত ব্যবহার ভালো নয়। তাই তুলসি চা পান করার ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
কারা তুলসি চা পান করবেন না? যদিও তুলসি পাতার স্বাস্থ্যগুণ অনেক, তবে গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানো নারীদের তুলসি চা পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তুলসিতে যেহেতু রক্তচাপ কমানোর ক্ষমতা আছে, তাই আপনি যদি এরই মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খান, তাহলে ডায়েটে তুলসি চা যোগ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদিও বিরল, তবুও কিছু ব্যক্তির তুলসি থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। আপনি যদি তুলসি চা পান করার পর ত্বকে চুলকানি, ফুলে যাওয়া বা শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো কোনো লক্ষণ দেখেন তাহলে এই চা পান করা এড়িয়ে চলুন।
যেহেতু তুলসি পাতায় রক্তে শর্করা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের গুণ আছে, তাই যারা এসব সমস্যার জন্য এরই মধ্যে ওষুধ খাচ্ছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই তুলসি চা পান করুন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com