শিষ্টাচার হলো ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ, যা মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। এই গুণ হঠাৎ করেই কারো মধ্যে গড়ে ওঠে না। এর জন্য গ্রহণ করতে হয় দীর্ঘ প্রস্তুতি। শিষ্টাচারের বীজ মূলত বপন করা হয় শিশুকালে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক ভূমিকাই প্রধান। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। পরিবারের বড়রা যে ধরনের ব্যবহার করে শিশুরাও তা-ই অনুসরণ করে। আদর্শ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম।
শিষ্টাচারের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের ২৫ ভাগের এক ভাগ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৬)
নি¤েœ প্রতিদিনের জীবনে ইসলামী শিষ্টাচারের কিছু দিক তুলে ধরা হলো:
প্রতিদিনের জীবনে শিষ্টাচার: জীবনের প্রতিটি কাজ একটি নীতি-আদর্শ অনুসারে বা শিষ্টাচার অনুযায়ী করতে হয়। শৃঙ্খলা অনুসারে চললে সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে। নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা না হলে সে কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় না এবং তাতে কাঙ্ক্ষিত ফলও অর্জিত হয় না।
মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা, পানাহার, বসবাস ও সহাবস্থান সমাজজীবনের মৌলিক কাজ। এসব প্রাত্যহিক কর্মকা-ে শিষ্টাচারের সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন মহানবী (সা.)। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা : আল-কলম, আয়াত : ৪)
সালাম বা সম্ভাষণ: ইসলামী জীবন বিধানে ছোট-বড়, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সালামের জবাব দেওয়ার জন্যও অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদনপ্রাপ্ত হও, তখন তোমরা তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর সম্ভাষণ করো অথবা একইভাবে অভিবাদন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৬)
প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা:প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা মুসলমানের অন্যতম কর্তব্য। সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আবু শুরাইহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, কে সে জন, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদে থাকতে পারে না।’ (মিশকাত, হাদিস : ৪৯৬২)
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা: শিষ্টাচারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২২। রাগ না করে হাসিমুখে কথা বলা : রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। এবং ক্রোধান্বিত হওয়া থেকে বিরত থাকতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)
কুধারণা পরিহার করা: এক মুসলিম অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটা মানবতার মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ। কুধারণায় পরিবার, সংসার ও প্রতিষ্ঠান—সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। ইসলামে কুধারণা পাপ। কোনো মানুষের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা সমীচীন নয়। কেননা এতে মানুষ কষ্ট পায়। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা বেশি বেশি ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
আন্তরিকতা ও নিরাপত্তা: ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনে চলার পথে কারো মধ্যে কোনো মন্দাচার দেখলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে হিকমতের সঙ্গে বলা, যাতে সে সংশোধন হয়ে যায়। অন্যের ক্ষতি থেকে তাকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অন্য মুমিনের ভাই। তারা একে অন্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)। আল্লাহ তাআলা সবাইকে শিষ্টাচারসম্পন্ন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।