পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হতদরিদ্রদের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল বিতরন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে দলীয় বিবেচনায় ডিলারশিপ নিয়োগ এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হামলা, মামলার ভয়ে এসব ডিলারারা আত্মগোপনে থাকায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল উত্তোলন ও বিতরন নিয়ে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া দলীয় বিবেচনায় নিয়োগকৃত এসব ডিলারশিপ বাতিলের দাবী করেছে বিএনপি। ইউনিয়ন ও উপজেলা খাদ্য বান্ধব কমিটিও এখন অকার্যকর। এতে উপজেলার ১২ ইউনিয়নে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ২০ হাজার ১৫৩ জন উপকারভোগীর স্বল্প মূল্যে চাল ক্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ৩৪ জন খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ডিলার নিয়োগ দেয়া হয় বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে। নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে এসব ডিলারদের অধিকাংশই নিয়োগ পায় দলীয় বিবেচনায়। এসব ডিলারদের অনেকের বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কতিপয় ডিলারের বিরুদ্ধে চাল মজদু ও কালোবাজারে বিক্রী নিয়ে গনমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করে খাদ্য অধিদপ্তর। খাদ্য বান্ধব কমিটি ও অফিস ম্যানেজ করেই চলতো ডিলারদের এ অনিয়ম, দুর্নীতি। একই চিত্র দেখা গেছে ওএমএস ডিলারদের কার্যক্রমেও। লাইনে দাড়িয়ে স্বল্প মূল্যে চাল, আটা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রভাবশালী এ সব ডিলারদের হাতে মারধর, নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেক হতদরিদ্র উপকারভোগী। এরপরও অভিযুক্ত ডিলাররা প্রভাবশালী হওয়ায় আইন এদের স্পর্শ করতে পারেনি। খাদ্য অধিদপ্তর এসব ঘটনার সত্যতা পেলেও ক্ষমতার দাপটের কাছে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে বার বার। এরপরও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গুড বুকে থাকে অভিযুক্ত ডিলার ও অফিস সংশ্লিষ্টরা। চলতে থাকে অনিয়ম, দুর্নীতি। দীর্ঘ বছর ধরে এভাবেই রাতা রাতি বিত্তবান হয়ে ওঠে ডিলাররা। আর ভেস্তে যায় খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠে ’নো পোভারটি’ ও ’জিরো হাঙ্গার’ অর্জনে ঘোষিত ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দারিদ্র দূরীকরনের অভিপ্রায়। সূত্রটি আরও জানায়, প্রতিটি ইউনিয়নে উপকারভোগী পরিবার নির্বাচন নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। নীতিমালা নির্দেশিত মানদন্ড বিবেচনায় না নিয়ে দল, নির্বাচনে পক্ষে কাজ করা, অর্থিক লেনদেনে নির্বাচন করা হয় উপকারভোগী। এছাড়া উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা বিভাজন ব্যতীত স্বজনপ্রীতী ও আত্মীয়করনে বিত্তবানদের নাম দেখা যায় তালিকায়। চাল বিতরণে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ থাকলেও কখনও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এরপরও ইউনিয়ন ও উপজেলা খাদ্য বান্ধব কমিটি দলকানা হয়ে চূড়ান্ত করে উপকার ভোগীর এ তালিকা ও ডিলারশিপ নিয়োগ প্রক্রিয়া। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে প্রনীত জাতীয় খাদ্যনীতিতে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এরপর ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরন নীতিমালা সংশোধন করে কার্যক্রম আরও সুসংহত করতে ’খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী নীতিমালা, ২০১৭’ প্রনয়ন করা হয়। বালিয়াতলি ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মো. মজিবর রহমান বলেন, ’আমার ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ আমলের এসব দলীয় ডিলার দিয়ে এখন আর চাল বিতরন করা চলবে না, আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। কেননা ভিন্ন দল, মতের উপকারভোগী পরিবারকে চাল দেয়া হয়নি কখনও। তাই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগকৃত এসব ডিলারশিপ বাতিল করার দাবী আমাদের।’ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল্লাহ বলেন, ’খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় মার্চ, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি উপকারভোগী পরিবার ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবে। সেপ্টেম্বর মাসে এ উপজেলায় ২০ হাজার ১৫৩ উপকার ভোগী পরিবারের অনুকূলে ৬০৪.৫৯০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ১২ ইউনিয়নের ৩৪ জন ডিলারের মাধ্যমে উপকারভোগী পরিবারের মাঝে বিতরন করা হবে।’ মো. নুরুল্লাহ আরও বলেন, ’আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে চারজনের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর দু’একজন ডিলারের নামে মামলা হওয়ায় তারা আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জেনেছি। সুষ্ঠু চাল বিতরন কার্যক্রম পরিচালনায় আমরা নীতিমালা অনুসরন করে পদক্ষেপ নেবো।’ উপজেলা খাদ্য বান্ধব কমিটির সভাপতি, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ’অনিয়মের অভিযোগ পেলে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী পরিচালনায় পুরনো ডিলারশিপ বাতিল করে সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে নীতিমালা অনুসরন করে নতুন ডিলারশিপ নিয়োগ দেয়া হবে।