বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৩৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর রোপা আমন, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

এহসান বিন মুজাহির (শ্রীমঙ্গল) মৌলভীবাজার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সম্প্রতি মৌলভীবাজারে আকস্মিক বন্যায় কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলায় ৩৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষেত ও আগাম চাষ করা শীতকালীন নানা ধরণের শাক-সবজি। শেষ হয়ে গেছে বন্যাকবলিত এলাকায় প্রান্তিক কৃষকদের স্বপ্ন। এবারের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত মৌলভীবাজার জেলার প্রায় সব এলাকা থেকে নেমে গেছে বন্যার পানি। পানি নামার সাথে সাথে কৃষকের ফসলের মাঠের ক্ষত দৃশ্যমান হয়ে ওঠেছে। এবারের বন্যায় জেলার ৬ উপজেলার ৭২টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবারের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৩৯ হাজার ৪শ ৮২ হেক্টর রোপা আপন তলিয়ে গেছে। আর ৩৪৩ একর বীজতলা এবং ২৭৭ একর জমির সবজি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬শ ২৭ হেক্টর, রাজনগর উপজেলায় ৯ হাজার ৭শ ৮০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৪ হাজার ৮শ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ৫ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলায় ৭ হাজার ৮শ ১০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলায় ১ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর এবং জুড়ী উপজেলায় ৪ হাজার ৮শ ১০ হেক্টর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি অফিস জানায়, এবার জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করা হয়েছিল। যার মধ্যে তলিয়ে গেছে ৩৯ হাজার ৪শ ৮২ হেক্টর। বন্যায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতির ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মইনুল ইসলাম গেদু বলেন, আমার চার বিঘা আমন ক্ষেত রয়েছে পানির নীচে। চোখের সামনে ক্ষেতের সব ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। কাটাও যাচ্ছে না আধা পাকা ধানগুলো। চোখের সামনেই ধান পানির নিচেই পচে নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার লামুয়া গ্রামের কৃষক শামসুল হক বলেন ২০০৪ সালের পর এবছরই শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে বন্যার পানি বেশি হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের কৃষক রানা লাল দাশ বলেন, ‘আমাদের এলাকাসহ আশপাশ এলাকার মানুষ অনেকটা দরিদ্র ও কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিই আমাদের ও আশপাশ এলাকার প্রধান জীবিকার উৎস। এবারের বন্যায় আমাদের এলাকার কৃষি পুরোপুরি বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। লোকালয় থেকে বন্যার জল (পানি) নামলেও সাধারণ মানুষ ও কৃষকরা এখনো চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন। এবারের ভয়াবহ বন্যায় কৃষিতে চরম আঘাত এসেছে। যা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। আমরা সরকারের কাছে এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি।’ শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩ নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের হাইল হাওর পাড়ের জেটি রোডের কৃষক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘এবারের বন্যা আমাদের হাইল হাওর পাড়ের শত শত কৃষকদের জন্য সর্বনাশ স্বরূপ। আমার ১৪ একর জমির রোপা আমন পুরোপুরি বন্যার পানিরে নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে এবারের মৌসুমে আমার পরিবারের খাদ্যের সংস্থান শেষ হয়ে গেল। এবার আমাদের খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।’ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎসি গ্রামের কৃষক স্বাধীন মিয়া বলেন, ‘ইবার (এবার) অন্যান্য বছরের থাকি খুব বড় বন্যা অইছে। আমরার ক্ষেতের ফসল সব শেষ অই গেছে। আমরা ইবার কিতা খাইয়া বাচমু (বেঁচে থাকবো)? জেলার রাজনগর উপজেলার ৭ নম্বর কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘১৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত আমার ইউনিয়নের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। ওই এলাকাগুলোর ফসলের মাঠ ও সবজি ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ক্ষতি পূরণ হবার নয়। আমাদের এলাকা পুরোপুরি কৃষিনির্ভর এলাকা। কৃষিই আমাদের এলাকার প্রধান ও অন্যতম আয়ের উৎস। এই এলাকার ফসলের মাঠ ও সবজি ক্ষেত ভাসিয়ে নেওয়ায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। চলতি মৌসুমে আমার ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের অভাব আর সংকট চরম মাত্রায় পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।’ কুলাউড়া উপজেলার ৯ নম্বর টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক জানান, ‘এবারের বন্যায় টিলাগাঁও ইউনিয়ন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্থকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। অধিকাংশ ফসলের মাঠ বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ স্থাপনাগুলো মেরামতে ব্যাপক কষ্ট হবে সাধারণ মানুষের। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় কৃষিতে এলাকায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। ফলে মানুষের আর্থিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। সরকারিভাবে সহায়তা নিশ্চিত করা না গেলে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করবে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এবার রোপা আমন ধানের প্রত্যাশা ছিল গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু বন্যায় এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পিছিয়ে গেল। তিনি জানান, সম্প্রতি বন্যায় জেলার ৩৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর আমন তলিয়ে গেছে। গত বছর জেলায় ২ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়েছিল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com