শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

কমলগঞ্জে টমেটোর চারা উৎপাদনকারীর বন্যায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি

আব্দুল বাছিত খান কমলগঞ্জ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাম্প্রতিক বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ‘গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদনে’ সফল উদ্যোক্তা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আং করিমের। বন্যায় পানিতে ১২০শতক জায়গার ফলনকৃত দেড় কোটি টাকার গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা তলিয়ে যায়। ফলে ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধের চিস্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আং করিম। এদিকে তার চারা উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত থাকা শতাধিক শ্রমিক বেকার অবস্থায় আছে। কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে ‘গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদনে’ সফল উদ্যোক্তা আং করিমের ক্ষতির সংবাদ জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসন ক্ষতি হওয়া করিমের কৃষি জমি পরিদর্শন করেছেন। জানা যায়, টানা বর্ষন ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর ১৪টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে কমলগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় উপজেলার ১৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বন্যার পানিতে কৃষি, মৎস্য, রাস্তা-ঘাট ও ঘরবাড়ি সহ কয়েকশত কোাট টাকার ক্ষতি ধান ও সবজী ক্ষেতসহ মৌসুমী ফসলের চারা বিনষ্ট হয়েছে। বৃহৎ মৌসুমী সবজী চারা উৎপাদনকারীদের মধ্যে শান্তিতে জাতিসংঘ পদকপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আং করিম (৫৫)। চাকরির সময়সীমা পার হওয়ার পর অবসরে চলে আসেন আং করিম। কর্মঠ উদ্যামী করিম চাকুরী থেকে অবসর নিলেও কাজ থেকে তার অবসর নেননি। কর্মঠ আং করিম নিজ আর্থায়নে ও কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে তিনি হয়ে উঠেন উপজেলার একজন ‘গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদনে’ সফল উদ্যোক্তা। এক সময় আং করিম নিজে একাই গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চারা উৎপাদন করা শুরু করেন। এখন তিনি নিজে স্বাবলম্বীতো হয়েছেন, করেছেন প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানও। গ্রামে প্রায় অর্ধশত কৃষক আছেন যারা আং করিমের গ্রাফটিং করা চারা ব্যবহার করে টমেটোর চাষ করছেন। আলাপকালে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আং করিম জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমার। বেকার হয়ে পড়েছে আমার কৃষি খেতে কাজ করা শতাধিক শ্রমিক। প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংক ঋণসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে এখন অসহায়ের মতো বসে আছি। ঋণের চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা। তিনি আরো জানান, এই গ্রাফটিং করা টমেটো গাছ পানি সহনীয়। ভারি বৃষ্টিতেও এই টমেটোগাছ নষ্ট হয় না। তাই বাজারে গ্রাফটিং চারার চাহিদা বেশী। আমার উৎপাদিত চারা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের আরো আট থেকে দশটি জেলায় সরবরাহ করেছিলাম। অনেকেই মৌসুম শুরুর আগেই চারার সংখ্যা জানিয়ে অর্ডার দিয়েছিলেন। বন্যায় চারা বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে সময়মতো সরবরাহ করতেও পারবো না। চারা উৎপাদন করবোতো দুরের কথা এখন বেকার সময় পার করছি। ‘অসময়ের টমেটো চাষী’ খ্যাত আং করিম সম্পর্কে জানতে চাইলে কমলগঞ্জের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা টমেটো চাষী মোতালেব বক্ত বলেন, আং করিম একসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। তিনি একজন উদ্ভাবনী কৃষক। নানা ফসল নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। টমেটোর এই গ্রাফটিং প্রযুক্তি তার কারণে সহজেই এলাকার সাধারণ কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। নিজে লাভবান হয়েছেন সাথে-সাথে এলাকার কৃষকদেরকে ও স্বাভলম্বী করেছেন। এবং প্রকল্পে এলাকার বেকার মানুষদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তবে বন্যায় তার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সকলের সহযোগীতা পেলে আবার উঠে দাঁড়াতে পারবেন।আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবদাল হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টমেটো চাষী আং করিমকে সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন জানান, আমরা টমেটো চাষী আং করিমের ক্ষতি হওয়া গ্রাফটিং করা চারার খামারগুলো পরিদর্শন করেছি। উনার দেড় কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগীতা করবো। যাতে করে তিনি পুনরায় ঘুরে দাড়াতে পারবেন। উল্লেখ্য,সাবেক এ সেনা সদস্য আং করিম ২০০২ সালে অবসরে এসে টমেটো চাষ শুরু করলে উৎপাদনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। টমেটো চাষে সফল চাষী হিসেবে তিনি ২০০৫ সালে পেয়েছিলেন জাতীয় কৃষি পুরষ্কার। এরপর থেকে এই উৎসাহকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন তিনি সফল কৃষক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com