খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা বদরুল হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত তিন ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। এঘটনায় থানায় জিডি করা হলেও পুলিশ এখনো ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে পারেনি। নিখোঁজ বদরুলের স্ত্রী, পরিবার ও সহকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
একমাত্র সন্তান দুই বছর পাঁচ মাসের শিশু সাফওয়ানকে নিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবে আসেন বদরুলের স্ত্রী সাঈদা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি
বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে খুলনা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও সোনারবাংলা গলিতে বসবাস করেন। বদরুল হাসান সরকারী হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপশি তিনি পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারে পার্টটাইম জব করতেন। এছাড়া সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গঠিত ত্রাণ সংগ্রহের কাজে দিন-রাত পরিশ্রম করে। ঘটনার দিনও সে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে ত্রাণ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল।
৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে আমার স্বামী বদরুল বাসা থেকে বের হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার সময় মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা হলে বদরুল জানায়, ‘আমি ত্রাণের কাজে ব্যস্ত আছি’। ‘দ্রুত বাসায় ফিরবো’। পরে আর বাসায় ফেরেনি। রাত ১১টার পরে আমি আমার স্বামীকে ফোন দিলে একবার নম্বর খোলা পাই। কিন্তু সে রিসিভ করেনি। তারপর থেকে নম্বর বন্ধ।
সাঈদা খাতুন আরো বলেন, এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে যোগাযোগ করি। তাছাড়া সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজেছি। কিন্তু কোনো খোঁজ না পেয়ে গত শুক্রবার সকালে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। এছাড়া ওইদিন রাতে খুলনা থানায় আরো একটি জিডি করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। ফলে পরিবারের সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বদরুলকে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা র্যাব-পুলিশ নিয়ে গেছে কিনা, অথবা কারো সাথে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদা খাতুন বলেন, ‘আসলে এই মুহূর্তে আমরা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছি না। তবে তাকে এখন খুঁজে বের করা জরুরি।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মুরছালীন ও আহম্মদ হাফিজ রাহাত বলেন, ‘বদরুল হাসান ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। খুলনায় আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারি থেকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া রহস্যজনক।’ এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানার ওসি তদন্ত আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো তার ক্লু পাইনি। তবে সে ত্রাণের কাজ করছিল আমাদের থানার ঠিক বিপরীত দিকে, যেটা পড়েছে খুলনা সদর থানার মধ্যে। ওখানে কাজ শেষে সে রাত ৯টার দিকে বাসায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সে বাসায় যায়নি। তারপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। সম্ভাব্য তার যেসব জায়গায় যাওয়ার কথা সব জায়গাতেই খোঁজ নেয়া হয়েছে। ফোনও ট্রেকিং করা হয়েছে, সেখানে দেখানো হচ্ছে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ত্রাণ দেয়ার কাজ যে জায়গায় করেছিল, সেই জায়গায় দেখাচ্ছে। আমরা তার সন্ধান পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’