শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনাকে মা ডেকে পেয়েছেন আলাদিনের চেরাগ শুন্য থেকে হয়েছেন কোটিপতি

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একাধিকবার স্বাক্ষাতের পর এক আশ্চর্য্য যাদুরকাঠি কিংবা আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন সুধীর নট্ট(৪২) নামের এক যুবক। যাদুরকাঠিকে কাজে লাগিয়ে সুধীর রাতারাতি শুন্য থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সুধীরের যাদুরকাঠি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করলেও পটুয়াখালীর বাউফল পৌর শহরের সুধীর নট্ট এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ফলে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে সুধীরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিশেষ অনুসন্ধানে এলাকাবাসির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ক্ষমতার সময়ে অনেক এমপি, মন্ত্রী, প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বিভিন্ন কাজের জন্য সুধীরের কাছে ধর্ণা ধরতেন। অথচ এই সুধীর নট্ট একসময় জীবন জীবিকার তাগিদে বাদাম বিক্রি করতেন। তার বাবা সুখ রঞ্জন নট্ট একসময় পান বিক্রি করতেন। তার মা দীপালি নট্ট অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। সুধীর নট্ট বাদাম বিক্রির পাশাপাশি সিনেমা হলের মাইকিং করতেন। তার গলার সুর ও ডায়লগ ভাল হওয়ায় একদিন নজরে পরেন স্থানীয় সাবেক এমপি আসম ফিরোজের। এরপর সুধীর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির মাইকিং করতেন। এভাবে সখ্যতা গড়ে ওঠে সাবেক এমপি ফিরোজের সাথে। তার ঢাকার বাসভবনে যাতায়াত করতেন সুধীর। প্রতিবার এমপির বাসায় যাওয়ার সময় নিয়ে যেতেন বড় মাছ, মুরগীসহ বিভিন্ন খাবার। একদিন সাবেক এমপি ফিরোজের মাধ্যমে সুধীরের পরিচয় হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখরের সাথে। একপর্যায়ে শিখরের সাথে সুধীরের সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওই সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সুধীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন। অভিনয়ে পাকা সুধীর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম দেখাতেই মা বলে সম্বোধণ করেন। এরপর স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুধীর একাধিকবার গণভবনে দেখা করেন। এভাবে অসংখ্যবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনি দেখা করেছেন। যখনই দেখা করতে যেতেন তখন তার এই মায়ের (শেখ হাসিনা) জন্য মাছ, মুরগীসহ নানাধরণের খাবার নিয়ে যেতেন। সে সুবাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাদুরকাঠি হয়ে যান। এরপর থেকে যাদুরকাঠিকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যান সুধীর নট্ট। সূত্রে আরও জানা গেছে, সুধীর নট্টর নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার ও স্ত্রী সন্তানের তোলা ছবি দিয়েও নানামহলে প্রভাব বিস্তার করতেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুধীরের তোলা এ ছবি ব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছেন সুধীরের আত্মীয়-স্বজনরাও। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের টানা মেয়াদে সুধীর ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নেওয়া, থানার দালালি ও চাকরির তবদির বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও এবং ওসি সবাই তাকে সমিহ করতেন। গ্রামের খড়ের ঘর ভেঙে নির্মাণ করেন আধাপাকা ঘর। এরপর পৌর শহরে সম্পত্তি ক্রয় করে সেখানে নির্মান করেন দ্বিতল ভবন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সুধীরের ক্রয়কৃত সম্পত্তি আর ভবনের মূল্যই হবে কোটি টাকার উপরে। তবে সু-চতুর সুধীর নিজের ব্যাংক হিসেবে কোন টাকা রাখতেন না। টাকা রাখতেন নিকট আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক এক মেয়রকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার শর্তে বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে প্রায় তিন কোটি টাকার একটি ব্রিজের কাজ বাগিয়ে নেয় সুধীর। এভাবে অনেক উন্নয়ন কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সুধীর নট্টর বিরুদ্ধে। এলাকার ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, প্রভাব বিস্তার করে পৌর শহরের দাসপাড়ার একটি সার্বজননীন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন সুধীর নট্ট। অভিযোগের ব্যাপারে সুধীর নট্ট বলেন, গ্রামের বাড়িটি আমার বাবা করেছেন। শহরের জায়গা ও দ্বিতল ভবনের মালিক আমি এবং আমার ছোট ভাই সুশীল। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ও ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি সত্য রঞ্জন সাহার কাছ থেকে জমি ক্রয়ের পর তার দাম আস্তে আস্তে পরিশোধ করা হয়েছে। তার ভাইয়ের প্রভাতী নামের একটি জুয়েলারী ব্যবসা প্রসঙ্গে বলেন, সত্য সাহার ছেলে স্বাধীন সাহার কাছ থেকে তিনি ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেছেন। বাদাম বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কাজ করেছি, তবে কোনদিন বাদাম বিক্রি করিনি। তবে সিনেমা হলে মাইক প্রচারের বিষয়টি স্বীকার করলেও ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নেওয়া, থানার দালালি ও চাকরির তদবির বাণিজ্য কোনকালে করেননি বলেও সুধির নট্ট উল্লেখ করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একাধিকবার স্বাক্ষাত ও তাকে মা বলে সম্বোধণের বিষয়ে তিনি কোন সদূত্তর দিতে পারেননি। তার বাবা ও মায়ের প্রসঙ্গে বলেন, তারা কাজ করতেন। কিন্ত কখনো পান ও শাপলা বিক্রি কিংবা কারো বাসায় ঝিয়ের কাজ করেননি। আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক হিসেবে টাকা রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, কারো ব্যাংক হিসাবে আমার কোন টাকা নেই। আমার পূর্বালী ও জনতা ব্যাংকে দুইটি এ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখেন কতো টাকা আছে? কোন ঠিকাদারী কাজ করেননি কিংবা কাউকে শেখ হাসিনার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার নামে কাজ বাগিয়ে নেননি বলেও সুধীর নট্ট উল্লেখ করেছেন। সূত্রমতে, সুধীরের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতিরা তার হাত থেকে বাঁচতে ২০২১ সালের ২৭ মে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক প্রধামন্ত্রীর শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। ওই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গণভবনে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সুধীরের। বর্তমানে তিনি (সুধীর) জুতার ব্যবসা করছেন। সুধীরের স্ত্রী শহরের একটি প্রাইমারি স্কুলের সহকারি শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, সুধীর তার স্ত্রীর চাকরিও নিয়েছেন প্রভাব দেখিয়ে। প্রথমে তার স্ত্রী দাসপাড়া গ্রামের একটি প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করতেন। কিন্ত বিধি লঙ্ঘন করে পৌর শহরের তাকে বদলি করিয়ে আনেন সুধীর। তার বড় ছেলে পড়াশুনা করেন দুমকি ক্যান্টমেন্ট স্কুলে। সুধীর নট্টর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দারপাড়া গ্রামে। তবে দীর্ঘদিন থেকে তিনি বাউফল পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়ার বাসায় বসবাস করে আসছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com