স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন সীমান্ত হত্যার ঘটনা না ঘটে, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে এখানে একটু আলোচনা হয়েছে। এ জন্য এখানে আমি শুধু বলব, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, এই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ করেছি। আশা করব, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না। আপনাদের (সাংবাদিক) কাছেও অনুরোধ করব, ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, আপনারাও আমাকে সাহায্য-সহযোগিতা করবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পূজার সময় আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়। যেহেতু আমাদের লোক যাওয়া-আসা করে, এপারের লোক ওপারে পূজা দেখতে যায়, ওপারের লোক এপারে পূজা দেখতে আসে। এ জন্য এখানে সবাইকে আমি অনুরোধ করেছি, এবার যেন আপনারা বর্ডার বেল্টে (সীমান্ত এলাকায়) ভালো ভালো পূজামণ্ডপ করেন, যেন আমাদের লোক ওপারে না যায় পূজা দেখার জন্য। আর ওপারের লোকও যেন এপারে না আসে, এটার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
এবারের সম্ভাব্য পূজামণ্ডপের তথ্যও তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যা পেয়েছেন তাতে এবার সারা দেশে পূজামণ্ডপ হবে ৩২ হাজার ৬৬৬টি। তবে এই সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। গতবার পূজামণ্ডপ ছিল ৩৩ হাজার ৪৩১টি।
পূজামণ্ডপ নির্মাণের সময় থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা শুরু হবে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এবারের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগটি একটু ভিন্ন হবে। দেশের যেকোনো নাগরিকদের মধ্য থেকে নিয়োগ করা হবে। এই স্বেচ্ছাসেবককে সময়ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হবে। যেমন কাউকে রাত একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত। এই স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা রাতে কমপক্ষে তিনজন এবং দিনে কমপক্ষে দুজন হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সভায় আলাপ হয়েছে (পূজার সময়) আজান ও নামাজের সময় যেন বাদ্যযন্ত্র ও মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়। আজানের কমপক্ষে পাঁচ মিনিট আগে এ ধরনের বাদ্যযন্ত্র ও মাইকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ রাখতে হবে।
এ বিষয়ে আজকের বৈঠকে উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও একমত হয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা। এবারের পূজা নির্বিঘ্নে হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। পুলিশ সংস্কারে শিগগির কমিটি গঠন করা হবে: পুলিশ সংস্কারে শিগগির একটি প্রাথমিক কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে ও কাদের অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ সংস্কার করা হবে, তা এই কমিটি নির্ধারণ করবে বলে জানান তিনি। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলারের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে দুই পক্ষের মধ্যে পুলিশ সংস্কার, বন্যা পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। তবে শিগগিরই পুলিশ সংস্কারের লক্ষ্যে প্রাথমিক কমিটি গঠন করা হবে। প্রাথমিক কমিটি কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে ও কাদের অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার করা হবে, তা নির্ধারণ করবে।
ইউএনডিপির প্রতিনিধিদলকে উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক কমিটির সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নেওয়া হবে এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। ইউএনডিপি ও আগ্রহী অন্যান্য দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে তাদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। তবে যেসব মতামত ও পরামর্শ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সংগতিপূর্ণ হবে, কেবল সেগুলোই পরবর্তী পদক্ষেপ ও বাস্তবায়নের জন্য বিবেচিত হবে।
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ সংস্কার এমনভাবে হওয়া উচিত, যাতে জনগণ পুলিশের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে এবং কোনো সমালোচনা না হয়। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে এ সংস্কার বাস্তবায়ন করা দরকার। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। বৈঠকে বাংলাদেশের বন্যার্তদের পুনর্বাসনে ইউএনডিপি সমীক্ষা চালাচ্ছে বলে জানান ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি। এ কাজে ইউএনডিপির পক্ষ থেকে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে বলেও জানান তিনি।