ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদারের পথ ও পন্থা নিয়ে জরুরি আলোচনায় আজ শনিবার ঢাকা আসছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে আসছেন তিনি। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড। গত মে মাসে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেন দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল আলোচিত মার্কিন কূটনীতিক লু। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডনাল্ড লু তথা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধিদলের এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম বাংলাদেশ সফর। দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করা ছাড়াও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। লু’র সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মানবজমিনকে বলেছেন, সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়েই কথা হবে। আলোচনায় যাতে কোনো ছায়া না পড়ে এজন্য এখনই এর আলোচ্যসূচির বিস্তারিত বলতে চাননি তিনি। তবে গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের এক বিবৃতিতে লু’র সফরের বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তসংস্থা প্রতিনিধিদলে যোগ দেবেন ডোনাল্ড লু। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, তা নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে।
বিজ্ঞপ্তি মতে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ১০ থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশ সফর করবেন। দুই দেশ সফরের সময় তিনি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার বিকাশে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন। ডনাল্ড লু ভারত সফরের সময় দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ব্যবসা পরিষদ আয়োজিত ইন্ডিয়া আইডিয়াস সামিটে উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিকাশে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতার কথা তুলে ধরবেন। তিনি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের মুখ্য উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেডিদিয়া রয়েল এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠেয় অষ্টম যুক্তরাষ্ট্র-ভারত টু প্লাস টু আন্তঅধিবেশন সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। সংলাপটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব বাড়ানোর সুযোগ চিহ্নিত করবে এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও তার বাইরেও দুই দেশের সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে। এদিকে ঢাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার মতো বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার থাকলেও সার্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধনের অগ্রগতি জানতে চাইতে পারে প্রতিনিধিদলটি। কারণ আগামী দিনে ডিএফসি ফান্ড প্রাপ্তিসহ বাংলাদেশকে যেকোনো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা প্রদানে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমমানকে অগ্রাধিকারে রাখবে। বিশেষত আর্থিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রমমানের উন্নতি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তথা ডেমোক্রেটিক শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির ফোকাস হচ্ছে বিশ্বময় গণতন্ত্রের চর্চা। বাংলাদেশে ১৬ বছরের স্বৈরশাসনে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল রাষ্ট্রগুলোর অজানা নয়। সেই প্রেক্ষাপটে নতুন সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের আলোচনায় উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো আসবেই- এমনটা জানিয়ে সেগুনবাগিচার এক কর্মকর্তা বলেন, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে গত একযুগের বেশি সময় জুড়ে বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচনা ছিল। অন্তর্র্বতী সরকার এরই মধ্যে গুমবিরোধী সনদে সই করেছে। গুমের ঘটনাগুলোর বিচারে তদন্ত কমিশনও গঠন করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে। মোটকথা ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবে মার্কিন প্রতিনিধিদল।