শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

সাদেক মাহমুদ পাভেল:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:। দৃশ্যত একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই সদস্যদের মাঝে পরিচিত। কিন্তু অজানা কোন এক যাদু বলে সেই সোসাইটির একাউন্টের মাধ্যমে সাদা করার অভিযোগ রয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বহু প্রভাবশালীর শত শত কোটি কালো টাকা। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের কাছে এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সুইস ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নিয়ম ভেঙ্গে আমানত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এ প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার কাজ করে এসেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০০২,ও ২০১৩) এর ২৬ ধারায় বলা হয়েছে-বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ব্যতিত কোন সমবায় সমিতি উহার সদস্য ছাড়া অন্যকোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আমানত গ্রহন বা ঋণ প্রদান করতে পারবেনা। অথচ দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল)এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন আইন বহির্ভূতভাবে অখ্রীষ্টান ও অসদস্যদের সঞ্চয়ী বা বিনিয়োগকারি সদস্য নাম দিয়ে তাদের নিকট থেকে আমানত গ্রহন করছেন। এমনকি আইন ভঙ্গ করে তফসিলি ব্যাংকের আদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তথা সেন্ট্রাল এসোশিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস,লক্ষীবাজার খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, তুমিলিয়া খ্রীষ্টান

কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, নাগরী খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, হারবাইদ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, নয়ানগর খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:,দড়িপাড়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, রাঙ্গামাটিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ধরেন্ডা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ভাদুন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, মঠবাড়ী খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: সহ বিভিন্ন প্রাথমিক ও কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতিরও আমানত রাখছেন। এছাড়া, খ্রীষ্টানদের অনেক সামাজিক সংস্থার টাকাও এখানে আমানত হিসেবে জমা রয়েছে। যা সমবায় আইনের স্পষ্ট লংঘন। বিগত আওয়ামী সরকারের কতিপয় প্রভাবশালী সদস্যের সাথে সমিতির অবৈধ দখলদার চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন এর একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাবে কোন আইন কানুনকে মানতে হবে এমন ধারণাই ভূলে গিয়েছে প্রতিষ্ঠনিটি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মহা দুর্নীতির কলঙ্ক আটকে গেছে। শুধু কালো টাকা জমা রাখেননি। সমবায় সমিতির কার্যালয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক সমবায় প্রতিমন্ত্রীর ম্যুরাল স্থাপন করে তার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনে মশগুল ছিলেন এই পিউরিফিকেশন। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থ্যানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে আত্মগোপনে চলে যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পিউরিফিকেশনের কাছের প্রভাবশালীরা। কিন্তু দূরন্ধর পিউরিফিকেশন এখনো রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে,পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পিউরিফিকেশন মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে নিজেকে সাধু সাজাবার চেষ্টা করছেন। এ কাজে তিনি গণমাধ্যমের উচ্ছিষ্টভোগী একটি গ্রুপকে টাকার বিনিময়ে কেনার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। জানাগেছে, ইতোমধ্যে কালবের রিসোর্টে কথিত সেই গণমাধ্যম কর্মিদের একাধিক পার্টি হয়ে গেছে। যেখানে মদের আসরসহ নানা অনৈতিক আয়োজনের ব্যবস্থাও ছিলো। আগষ্টিনের আর্থিক সুবিধা নেয়া সুযোগ সন্ধানী এসব কথিত সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা তার বিরুদ্ধে যাতে নিউজ না হয়; এজন্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের পিছনে উঠে পড়ে লেগেছেন। এমনকি নিবেদিত সাংবাদিকদের হুমকি দেয়ার মত অনৈতিক কাজও করছেন। এছাড়া, আগষ্টিন বাঁচার জন্যে প্রশাসন ম্যানেজ করার জন্যে টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছেন। এমনকি বিএনপি নেতাদের আশির্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানাগেছে। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অবৈধভাবে উপার্জিত হাজার কোটি টাকা দি মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডে জমা রয়েছে। এছাড়া, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী কর্নেল(অব) ফারুক খান, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য,সাবেক ডিবি কমিশনার হারুনুর রশিদ,ডিবি বনানী জোনের পরিদর্শক নাজমুল হক, সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক আহসান কবির,উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুহুল আমিনসহ পুলিশের তেজগাঁও সার্কেল ও গাজীপুর জেলা পুলিশের সাবেক একাধিক কর্মকর্তার অবৈধ অর্থও এখানে আমানত হিসেবে রেখেছেন পিউরিফিকিশেন। জানা গেছে নিয়মের তোয়াক্কা না করে মুসলিম সহ অন্যান্য অখ্রীষ্টান সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকা চড়া সুদে আমানত রাখছেন। এমসিসিএইচএসএল এর আমানতের বিপরীতে সুদের হার ব্যাংকের প্রচলিত সুদের হারের দ্বিগুণেরও বেশি। ১৫% পর্যন্ত সুদ দেয়া হয়। সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে নিবন্ধকের সার্কুলার ও ব্যাংকের প্রচলিত সুদের হারের সাথে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদের হার নির্ধারন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুদের হার বেশি,আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের মত ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হয় না,আবার খ্রীষ্টান প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখলে কেউ জানতে পারবে না-এসব কারনে মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তা, সমবায় অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের উপার্জিত কালো টাকা এখানে আমানত রাখা নিরাপদ মনে করে রাখছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, এক্ষেত্রে খ্রীষ্টান সদস্যদের আইডি ব্যবহার করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অখ্রীষ্টানদের আমানত গ্রহন করা হয়। খ্রীষ্টানদের সদস্য হওয়া বা আমানত রাখার ক্ষেত্রে বিবাহিতদের ক্ষেত্রে গীর্জার বিবাহ সনদ এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে গীর্জার বাপতিস্ম সনদ দাখিল করতে হয়। আর মুসলিম সহ অন্যান্য অখ্রীষ্টান আমানতকারিদের নামে খ্রীষ্টান হওয়ার ভুয়া এফিডেভিট তৈরি করে ডকুমেন্টস হিসেবে অফিসে সংরক্ষিত করা হয়। কেবল কালো টাকা আমানত রাখার জন্যে কাগজ পত্রে তারা খ্রীষ্টান সাজার অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। এমসিসিএইচএসএল-এ মুসলিম নামে অনেক সঞ্চয়ী আমানত একাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিরাপদে কালো টাকা রাখার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ইতিমধ্যে এমসিসিএইচএসএল বাংলাদেশের ”সুইচ ব্যাংক” আখ্যা পেয়েছে। এছাড়া সমবায় সমিতি আইন-২০১৩ (সংশোধন) এর ১৮(১) ধারা ভঙ্গ করে এমসিসিএইচএসএল ১৪ টি শাখা কার্যালয় এবং সমবায় সমিতি বিধিমালা-২০০৪ এর ১২(২) বিধি লংঘন করে অনুমোদিত কর্ম এলাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসকল বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর পরিচালিত অডিট রিপোর্টে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। বেআইনী আমানত গ্রহন, শাখা পরিচালনা ও কর্ম এলাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধকরন এবং সমবায় আইন, বিধিমালা ও এমসিসিএইচএসএল’র উপ-আইন বহির্ভূত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে অডিট রিপোর্টে। দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে সমবায় অধিদপ্তর অবগত আছেন। তবে মাসোহারা গ্রহনকারি কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বিঘেœ অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সমবায় প্রতিষ্ঠানটি। উল্লেখ্য, এমসিসিএইচএসএল’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন সম্প্রতি ১১৩, হোলল্যান্ড, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাড়ি ক্রয় করেছে। বাড়ি ক্রয়ের সুবাদে তিনি মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়ায় আমেরিকায় টাকা পাচার করেছেন বলে সূত্রসমুহ দাবি করছেন। দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: কর্তৃক কালো টাকা আমানত গ্রহন ও অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল)এর চেয়ারম্যান আগস্টিনের বক্তব্য নেয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেননি। অফিস ও বাসায় গিয়েও দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com