পাবনা শহরের মোজাহিদ ক্লাব এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে একটি স্কুলের উন্নয়ন কাজ গত ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, সেই সাথে ছাদের উপর থাকা কাঠ ও লোহার অবকাঠামো, নির্মান সামগ্রি ভেঙ্গে পড়ে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা মৃত্যু ঝুকি রয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা না হলে, দুর্ঘটনা ঘটে জীবনহানির মত ঘটনা ঘটতে পারে। অকালে ঝড়ে যেতে পারে একাধিক প্রান। পাবনা শহরের পৌর মোজাহিদ ক্লাব সংলগ্ন শহীদ ফজলুল হক পৌর উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে ৫৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। পাবনা শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৩য় তলার উপরের বিল্ডিং এর চতুর্থ তলার জন্য কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়। বসুন্ধরা হাউস বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায়। টেন্ডারের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে গত ২৩মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শুরু করেন। যা আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারী মধ্যে শেষ করার চুক্তি রয়েছে। ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী উন্নয়নমুলক কাজ শেষ করতে যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে একদল দুর্বত্ত রাতের আধারে স্কুল প্রাঙ্গনে প্রবেশ করে। রাতে দায়িত্বে থাকা স্কুলের কর্মচারীদের স্কুলের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করতে বলেন ও ভয়ভীতি দেখান এবং স্কুলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করেন। পরদিন দুপুরে পাবনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান সুইটের পরিচয় দিয়ে ১০/১২ জন যুবক প্রধান শিক্ষককে বিল্ডিং এর কাজ করতে নিষেধ করে চলে যান। এর পর ঠিকাদারে প্রতিনিধি মামুনকেও তসলিম হাসান সুইট ফোন করে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এর পর থেকে স্কুলের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলের আঙ্গিনায় নির্মান সামগ্রি মজুত থাকায় এবং ওই ভবনের ৪ তলায় নির্মান কাজ শুরু হওয়ায় ভবনটির শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে আরেকটি ভবনে। ফলে ৫৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী একই ভবনে গাদাগাদি করে ক্লাশ করতে হচ্ছে। রুম সংকট ও দুর্ভোগের কারনে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতিও কমে গেছে। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। স্কুলের মাঠ সংকুলান হওয়ায় এসেম্বলি করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া খেুলাধুলা বা স্কুলের প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার অনুরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ৪র্থ তলায় চলমান কাজ বন্ধ থাকায়, সেখানে বিম ও ছাদ ধালাইয়ের জন্য তৈরীকৃত বাশ ও কাঠের অবকাঠামোসহ রড রাখা হয়েছে। সেগুলো সঠিকভাবে স্থাপন না করায়, যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়ে জান ও মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবান রয়েছে। স্কুল সংলগ্ন পাবনা নগরবাড়ি সড়ক। যে কোন প্রান্তে ভেঙ্গে পড়লেই জান-মালের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কতিপয় যুবক এসে আমাকে স্কুলের উন্নয়নের কাজ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, তোমাদের কে পাঠিয়েছে। উত্তরে আগত যুবকরা বলেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক তসলিম হাসান সুইট এই স্কুলের কাজ বন্ধ করতে পাঠিয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক সেখ একই কথা বলেন। এদিকে ঠিকাদারের প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মামুন হোসেন জানান, তসলিম হাসান সুইট আমাকে ফোন করে বলেন, স্কুলের কাজ বন্ধ করতে হবে। কাজ বন্ধ করা না হলে আমার হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেন। এদিকে এ ঘটনায় আছিয়া বিনতে ওয়াজেদ ১০ লাখ টাকা চাদার অভিযোগ এনে তসলিম হাসান সুইটের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় চাদাবাজির একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে গত রোববার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এনডিসি মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি হেডমাষ্টার সাহেব আমাকে জানিয়েছেন, আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধন করবো এবং স্কুলের নির্মান কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারকে সহায়তা করা হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত কাজ শেষ করে স্কুলের লেখা পড়ার পরিবেশ করে দিতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন। এদিকে তসলিম হাসান সুইটের মোবাইল ফোনে কল করা হলে, তিনি কাজ বন্ধ করার কথা অস্বিকার করেন।