মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রভাবশালী ব্যক্তি আরজু মিয়া, উপজেলা কৃষকলীগ নেতা বদরুল আলম শিপলু ও আরজু মিয়ার সহযোগীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হয়রানিমূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের পূর্ব লইয়ারকুল গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ আজিরুন বেগম। শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে শহরের ভানুগাছ রোডস্থ টি ভ্যালী পার্টি সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজিরুন বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আব্দুল মতিন ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। আমার কোন ছেলে সন্তান নাই। আমার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে লন্ডন প্রবাসী এবং এক মেয়ে দেশে স্বামী গৃহে বসবাস করছে। ২০১৯ সালে আমার একমাত্র দেবর আবুল কালাম আজাদ মৃত্যুবরণ করেন। আমার দেবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ফ্রান্স প্রবাসী। ছোট ছেলে জামাল মিয়া বাড়িতে থাকে। পুরো বাড়িতে আমি ও আমার দেবরের স্ত্রী ও ছোট ছেলে জামালসহ মোট তিনজন বসবাস করছি। আমাদের বাড়ির সামনে ও আশে-পাশে আরজু গংদের বাড়ি। আমি অসহায় ষাটোর্ধ মহিলা বিধায় এবং আমার পরিবারে কোন পুরুষ মানুষ না থাকার সুযোগে আরজু মিয়াগং গত দুই বছর যাবত আমাদের পারিবারিক জায়গা-জমি নিয়া বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানী করে আসছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ২২৬/২৪ইং নম্বর দলিল মূলে ফটিক মিয়া, দরছ মিয়া, ছালেক মিয়া গংদের নিকট থেকে রেজিস্ট্রি সাফ-কবালা দলিলে আমার তিন মেয়ে আমাদের বাড়ির সামনের অংশের কিছু জমি ক্রয় করে। আমার মেয়েরা ওই জমি ক্রয় করার পূর্বে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আরজু মিয়া ও তার ভাগনে সোহেল মিয়ার সাথে ফটিক মিয়া গংদের ওই জমিটুকু নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে বিচার শালিস হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশে সরকারি এবং বেসরকারি আমিন দ্বারা সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপরও ছালেক মিয়া এবং আরজু মিয়ার মধ্যে উক্ত জাগা জমি সংক্রান্তে মৌলভীবাজার আদালতে পক্ষ-বিপক্ষে দুটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দুটির দুইটি রায় ছালেক মিয়া গংদের পক্ষে আসে। রায়ের পর আমার তিন মেয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি জমি ক্রয় করার আনুমানিক ২-৩ মাস পর আমার বাড়ির পূর্ব পাশে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করি। যার পূর্বপাশে বর্তমান সরকারি পাকা রাস্তা রয়েছে। সীমানা দেয়াল নির্মাণের সময় উপজেলা কৃষকলীগের প্রভাবশালী নেতা বদরুল আলম শিপলু এবং আরো ৩-৪ জন লোক আমাকে দেয়াল নির্মাণে বাধা দিলে আমি আমার জমির কাগজপত্র ও মামলার রায়ের কপি দেখানোর পরও এবং সে আমাকে বলে সে সরকার দলীয় লোক (আওয়ামী লীগ) হওয়ায় আমি কোথাও বিচার পাব না। তাকে ২ লক্ষ টাকা না দিলে সে দেয়াল করতে দেবে না। আমি একজন অসহায় বয়োবৃদ্ধ মহিলা ও আমার বাড়িতে কোন পুরুষ লোক না থাকায় আমি নিরুপায় হয়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে বাড়ির সীমানা দেয়াল সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে সে আরো দেড় লক্ষ টাকা চাইলে আমি টাকা দিতে অস্বীকার করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিপলু ক্ষমতার দাপটে আমাকে আরজু মিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে আমাকে একের পর এক হয়রানী করতে থাকে। ফলে শিপলুসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ নম্বর আমল আদালতে চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করি।’ লিখিত বক্তব্যে আজিরুন বেগম বলেন উল্লেখ করেন, ‘গত ১৯ জুন বিকাল ৩ ঘটিকার সময় হঠাৎ আমার বাড়ির বাইরে অনেক মানুষের কথাবার্তা শুনতে পেয়ে তাৎক্ষণিক আমার মেয়ে তামান্না আক্তার আমার বাড়ির উঠানে বের হয়ে দেখতে পায় বেশ কিছু লোকজন রড, সাবল, খনতি, কোদাল দিয়ে আমার বাড়ির দেয়াল ভাঙ্গার জন্য আক্রমন করছে। আমার দেবরের ছেলে জামাল মিয়াসহ বাড়ির গেইটে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কারা? তখন একজন পরিচয় দিয়ে বললেন তিনি শ্রীমঙ্গলের ইউএনও। তিনি আমাকে বলেন, আপনারা সরকারি
জায়গায় ওয়াল দিয়েছেন কেন? ইউএনও সাহেবের কথার উত্তরে আমি বলি সরকারি কোন সম্পত্তিতে আমি দেয়াল দেইনি। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরকে বলেন কোন কথা বললে পুলিশ দিয়ে আমাদেরকে থানায় নিয়ে যাবেন। তখন ঘটনাস্থলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনৈক গফুর মিয়া, রফিক মিয়া, মানিক মিয়া, হারিছ মিয়া, আরজু মিয়া, চেরাগ মিয়া, শিষ আলী, আব্দুস শহিদ প্রমুখদের নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জন লোককে আমার দেয়াল ভাঙ্গার নির্দেশ দেন। নির্দেশমতো আমার সীমানা দেয়ালের নিচের অংশ ভাঙ্গার পর পানি প্রবাহিত হয়ে কারণে আমার বাড়ীর দুইটি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে এবং দেয়ালের ফাটলের কারনে আনুমানিক ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়। একপার্যায় আমি এবং আমার মেয়ে দেয়াল ভাঙ্গার প্রতিবাদ করলে উপজেলা কৃষকলীগ নেতা বদরুল আলম শিপলু, আরজু মিয়ার পরোক্ষ সহায়তায় আমাদের গ্রামের রফিক মিয়ার স্ত্রী সাহেনা বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমানেই আমার মেয়ে তামান্না আক্তারকে বেদম মারপিট করে। আমার মেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে আমরা উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার আদালতে জায়গা-জমি সংক্রান্ত একটি স্বত্ত্ব¡ মামলা দায়ের করি। মামলা নং-৭১/২৪। আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে আরজু মিয়া তার নিজ বাড়ির সামনে এবং পাকা রাস্তার সংলগ্ন পূর্বপাশে তার ঘরের বাথরুমের ময়লার পাকা ট্যাংকি নির্মাণ করেন। উক্ত ট্যাংকির ময়লার পানি নিস্কাশনের পাইপ ট্যাংকির পশ্চিম দিকে রাস্তার আনুমানিক তিন ফুট নিচ দিয়ে গর্ত করে আমার বাড়ির দিকে ময়লা পানির রাস্তা করে দেয়। এতে আমার বাড়ির ভিতরে ময়লা যায় ও দূর্গন্ধ ছড়ায়। আমি মাটি দিয়ে তার পাইপের মূখ ও আমার জায়গায় মাটি ভরাট করে দিয়েছি। এভাবে একের পর এক কায়দায় আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানী করে চলেছে আরজু মিয়া, বদরুল আলম শিপলু গংরা। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার জিলাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মো. আরজু মিয়াকে কয়েকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। উপজেলা কৃষকলীগ নেতা বদরুল আলম শিপলুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, ‘শুনেছি কয়েকদিন আগে এক পক্ষ আজ আবার অপর পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আসলে বিষয়টি এতো জটিল না। পূর্ব লইয়ারকুল থেকে আরজু মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন আমার কাছে অভিযোগ করেন যে, আজিরুন বেগম নামে এক মহিলা সরকারি রাস্তা দখল ও খাল ভরাট করে দেয়াল নির্মাণ করে সরকারিভাবে নির্মিত কালভার্ট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়ে পানি চলাচল আটকে দেন। সে সময়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এসময় দেখতে পাই এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত কালভার্টে পানি স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে। জনসাধারণের চলাচলে ও কালভার্ট দিয়ে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে কালভার্টের সামনে থেকে আজিরুন বেগমের দেয়া বস্তা সরিয়ে কালভার্ট থেকে মাটি সুরকি ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেই।’