বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
উলিপুরে জাতীয় ফুল শাপলার আদলে ধানক্ষেত বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় ও সাহসী, সকলকে ধৈর্যের সাথে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে-জেলা প্রশাসক পটুয়াখালী কমলগঞ্জে সীমানা পিলার উপরে ফেলে ভূমি জবরদখল করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা হলো জামায়াতের সাত শহীদের জন্মভূমি-অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে সচেতনতা সভা পাবনায় র‌্যাবের অভিযানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলার ২ আসামী গ্রেফতার নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এম এ ফয়েজের বিদায় সংবর্ধনা বাগেরহাট প্রেস ক্লাবকে সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে হবে-বিশেষ সাধারণ সভায় বক্তারা নেত্রকোনায় বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত পটুয়াখালীতে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোল টেবিল বৈঠক

নেত্রকোনায় বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪

নেত্রকোণায় অতি বৃষ্টিপাতে আর উজান থেকে নেমে আসা ভারি ঢলে সদর উপজেলা,দুর্গাপুর, কলমাকান্দা,পূর্বধলা, বারহাট্রায় বন্যায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে। মানুষের খাবারের পাশাপাশি গো খাদ্য সহ বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। এর মধ্যে দুর্গাপুরে ঢলের পানিতে তলিয়ে একজন মারা গেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নুরুজ্জামান জানান, জেলায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির আমন ও ১৬৭ হেক্টর জমির শাক-সবজি তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ,সোমেশ্বরীর পানি কিছুটা বেড়েছে। এখনও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীটির পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার দুই দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে বইছে। উপদাখালী নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে। কলমাকান্দা পয়েন্টে নদীটির পানি বিপৎসীমার শূণ্য দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার রনীচ দিয়ে বইছে। আরেক প্রধান নদ কংশের পানি জারিয়া পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে। সেখানে বিপৎসীমার শূণ্য দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে বইছে। তবে হিাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বাড়ছে। সেখানে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে বইছে। সদর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা কালিয়ারা-গাবরাগাতী ইউনিয়নের পাটলি গ্রামের মধ্য বয়সী নারী গৃহিনী আমেনা আক্তার বলেন, “কেমনে বাঁচবাম, কিছুই বুঝতাছিনা। কোমর হমান পানির মধ্যে কেমনে কি করাম। ঘরের মধ্যে পানি তই তই করতাছে। পোলাপান লইয়া বিপদে পড়ছি বেশি। হেরারে কি খাওয়াম। ঘরের মধ্যে থাহনেরই বাও নাই, রান্না কেমনে করাম। টয়লেটে যাওনের বাউ নাই। কইনছেন দেহি এইবায় কি আর বাঁচন যায়। ”প্রশাসন বা কোন জনপ্রতিনিধি বা কোন সংগঠন,সংস্থার কেউই কোন খোঁজ না নেয়ার আক্ষেপও করেন তিনি। আমেনা আক্তারের মতো সেখানের আরো বেশ কিছু পরিবারের একই অবস্থা। পাশের বাড়ি আরজ আলীও একই রকম কথা বলছিলেন। রবিবার রাত থেকে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। সোমবার সকালে ইউনিয়নটির অন্তত ২০ টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রামের বাসিন্দারা। দুর্গম এলাকার বানভাসি মানুষেরা ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, একই সাথে ৪টি ইউনিয়নসহ আরো কিছু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটা বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছি। গত দুই তিন ধরে আমাদের ত্রাণ কার‌্যক্রম চলছে। কিছু হয়তো অভিযোগ থাকতে পারে। আমরা সেই অভিযোগ প্রত্যেকটি আমলে নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে সহায়তায় আমরা দুর্যোগটি মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। এদিকে দুর্গাপুরে প্লাবিত ৫টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম থেকে ধীর গতিতে পানি নামতে শুরু করেছে। গেল সোমবার দুপুর থেকে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে ঢলের পানিতে ডুবে রুসমত খান(৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। মঙ্গলবার সকালে বাড়ির চারপাশ পানি থাকায় সড়কের পাশে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুহুল আমীন। তিনি জানান, পানিতে পুকুর ডুবে বাড়ির আশপাশে বুক সমান পানি হয়েছে।রুসমত খান এই পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারেননি কোথায় পুকুরটি। এসময় তিনি পুকুরে পড়ে পানিতে তলিয়ে মারা যান। দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শতাধিক মৎস্য চাষির পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বরাদ্দের ২০ টন চাল ও শুকনো খাবার ত্রান সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনরা পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রান বিতরণ করছেন। কলমাকান্দা উপজেলার পাগলা এলাকার এনামুল হক বলেন, তিন একর আমন লাগাইছিলাম। সবডাই তলায়া গেছে। কিছুই নাই। সদরের পাটলি গ্রামের মাছ চাষী রুকন উদ্দিন বলেন, গতকাল আমার চাষ করা পুকুর বন্যার পানিতে তলায় সব মাছ ভাইস্যা গেছে। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, নতুন করে বারহাট্রা উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এই মূহূর্তে জেলার ৫টি উপজেলা বন্যা কবলিত। ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে বানভাসী মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এ নাগাদ ৭০ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ও নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা উপজেলাগুলোতে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা ত্রাণ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা শিশু খাদ্য বিতরণ করছেন। ত্রাণের কোন ঘাটতি নেই। প্রত্যেক বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ পৌছে দেয়ার কাজ চলছে বলে জানান, জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com