আওয়ামী লীগের করা আইন দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যার বিচার করতে হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ঢাকা মহানগরী উত্তরের বার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রকাশ্যে বড় পরিসরে রুকন সম্মেলন করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর মহানগরীর জামায়াতে ইসলামী। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী দল। এদের চেয়ে বড় সন্ত্রাসী আর কেউ ছিল না। শুধু ছাত্র-জনতা হত্যাকা-ের বিচার নয়, এযাবৎকালের সব হত্যার বিচার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ নামে হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনী তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদেররা অহঙ্কার ও অন্যায় নিয়ে গর্ব করতেন। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। মানুষকে মানুষ মনে করতেন না। আজ তারা কোথায় গেলেন। প্রতিটি অপকর্মের ফল তাদের পেতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিশোধ নেবে না, তবে জুলুমের শিকার প্রতিটি মানুষকে ন্যায়বিচার দেবে। বিপ্লবের পর জামায়াতকর্মীরা চাঁদাবাজি কিংবা দখল করেনি। বরং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে চান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো: গোলাম রাজ্জাক।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী
সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ প্রমুখ।
সম্মেলনে মহানগরীর ১০ হাজার রুকন সদস্যের গোপন ভোটে নির্বাচন করা হবে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির। দিনব্যাপী সম্মেলন কয়েকটি সেশনে ভাগ করা হয়েছে। তবে দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, কেউ আমির পদে নিজে থেকে প্রার্থী হবেন না। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পল্টন ময়দানে বড় পরিসরে অভিন্ন ঢাকা মহানগরের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
গোটা জাতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আমরাও বৈষম্যহীন সমাজ চাই: গোটা জাতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার; জামায়াতে ইসলামীও একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটায় নগরীর কাজিরদেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আমীরে জামায়াত বলেন, এখলাসপূর্ণ সহিহ্ নিয়ত নিয়ে আল্লাহর জন্য কাজ করতে হবে। দ্বীন বিজয়ী হবে আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে। আমাদের বেশি বেশি কোরআন ও হাদিস পাঠ করতে হবে। নবীর জীবনীর সবকিছু মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান। এতে দারসুল কোরআন পেশ করেন বাইতুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ, ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর ড. অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ আবু নোমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কাউকে সন্তুষ্ট করতে কোনো কিছু করা যাবে না। যা কিছু করতে হবে সব হবে আল্লাহর জন্যে। মুমিনের সব কাজ হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। প্রত্যেক সদস্যকে বিচক্ষণতার অধিকারী হতে হবে। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাওয়া যাবে না। দ্বীনের সৌন্দর্য হচ্ছে সবার সাথে সাম্য রক্ষা করা। তবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তিনি হেদায়তপ্রাপ্ত হন। হেদায়াতপ্রাপ্ত হলে সেই মানুষের জীবন পাল্টে যায়। মুমিনের জন্য পেছনে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। মুমিনদের আল্লাহ যেকোনোভাবে সাহায্য করবেন। তিনি আরও বলেন, বেশি বেশি আত্মসমালোচনা করতে হবে। আল্লাহর জন্য নিজেকে সোপর্দ করতে হবে। চিন্তা-চেতনা, আমল-আখলাক সবকিছুতে আল্লাহকে হাজির নাজির জানতে হবে। ইনসাফ অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষকে দ্বীনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। আমরা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর মজলুম ছিলাম। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। বাংলার জমিনে জামায়াতে ইসলামী একমাত্র আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কারো ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে দেখা যাবে না। ঘুমানোর আগে অপরকে ক্ষমা করে দিয়ে ঘুমাতে হবে। বিদ্বেষমুক্ত অন্তরের অধিকারী হতে হবে। চট্টগ্রামকে ইসলামের প্রবেশদ্বার উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামী দিনে আমরা যেন এই চট্টগ্রাম থেকে ইসলামী বিপ্লবের সূচনা করতে পারি প্রত্যেক সদস্যদের ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ফ্যাসিবাদ ও জুলুমের ধারা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। আর কোন ফ্যাসিবাদকে এই জমিনে মাথা ছাড়া দিতে দেয়া হবে না। ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমানসহ শীর্ষ নেতৃত্ববৃন্দকে অন্যায়ভাবে হত্যা করছে। যে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, সেখানে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে এই দেশের মানুষের মন জয় করেছে। এজন্য আজ বাংলাদেশের মানুষ জামায়াতের নেতৃত্ব দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব না হলে বাংলাদেশের কোন কল্যাণ হবে না। এ জন্য আল্লাহভীরু জীবন গঠনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্বদানের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের (রুকন) জীবন গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের তৈরি করেছেন। এদেশের মানুষ জামায়াতকে নিরাপদ মনে করে। দেশের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সকল মানুষ জামায়াতকে দেশ পরিচালনায় দেখতে চায়। ইসলামের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাই দেশ ও জাতি গঠনে জামায়াত ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তা-আলা মুমিনদের উপর অর্পণ করেছেন। এ ব্যাপারে রুকন ভাইদেরকে সচেতন ও যতœশীল হতে হবে। ময়দানে বলিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আমাদেরকে ভূমিকা পালন করতে হবে। চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষের মাঝে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। আজকের সমগ্র বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আমাদের দিকে চেয়ে রয়েছে। গত ১৮ বছরে দূর্নীতি লুটপাট করে, ভূমি দখল থেকে শুরু করে নৈরাজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে যে সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সেই অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে টাকাগুলো পাচার হয়েছে শুধু দুইটা পরিবার থেকে যে টাকা পাচার হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে পারলে ৩ বছরের বাজেট হয়ে যাবে। আগামী দিনের বাংলাদেশে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে একটি সুখী সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়তে রুকন ভাইদেরকে ভূমিকা পালন করতে হবে।