মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আলোচিত মিনি টমটম চালক আবুল খায়ের হত্যা মামলার প্রধান আসামি রুবেল আহমদ সাগর ওরফে জসিমকে গ্রেফতার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে গ্রেফতারকৃত আসামিকে পুলিশী প্রহরায় মৌলভীবাজার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে আদালত আসামি জেল হাজতে প্রেরণ করেন। থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট চা বাগানের ১১নং সেকশন থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় মিনি টমটম চালক আবুল খায়েরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় গতকাল একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী সুমনা আক্তার। শ্রীমঙ্গল থানার এফআইআর নং-১৫, জিআর নং-২৪০, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। মামলা সুত্রে জানা যায়, হত্যাকা-টি শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮নং কালীঘাট ইউনিয়নের কালীঘাট চা বাগানের ভেতর ১২ নম্বর সেকশনের কাঁচা রাস্তার পাশে চা বাগানের সামান্য ভেতরে গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ৮টা হতে ১৫ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ৯টার মধ্যে যেকোন সময় ঘটেছে। হত্যাকা-ের শিকার আবুল খায়ের(৩১) শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের গাজিপুর এলাকার মৃত আনছর আলীরর পুত্র। গ্রেফতারকৃত আসামি রুবেল আহমেদ সাগর ওরফে জসিম (৩০) শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের পশ্চিম তিতপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান এর পুত্র। জানা যায়, ভিকটিম আবুল খায়ের পেশায় মিনি টমটম চালক। তিনি প্রবাসী হান্নান সিরাজী এর নিকট থেকে একটি মিনি টমটম (মিশুক) ভাড়া নিয়ে বিগত দেড় মাস যাবত চাল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৪ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ৯ ঘটিকায় মিনি টমটম নিয়ে ভিকটিম বাসার ভেতর থেকে ভাড়ায় চালানোর জন্য এলাকার উদ্দেশ্যে বের হন। ওইদিন তিনি দুপুর বেলা খাবারের জন্য বাড়িতে না এসে গাড়ি চালাতে থাকেন। রাত্র আনুমানিক সাড়ে ৭ ঘটিকায় গাড়ির মালিক হান্নান সিরাজীর স্ত্রী রোমেনা বেগম এর মোবাইল নম্বর দিয়ে ভিকটিম আবুল খায়ের এর মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে ভিকটিম বলেন তিনি দক্ষিণ মুসলিমবাগ গাড়ি নিয়ে আছেন। ভিকটিমের ভাই মোঃ আবুল বাশার রাত আনুমানিক ৮/সাড়ে ৮ ঘটিকায় ভিকটিমকে দক্ষিণ মুসলিমবাগ জাকিরের চা দোকানের সামনে গাড়ি নিয়ে দাড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। ভিকটিম রাতে বাসায় না আসায় ভিকটিমের বোন ইয়াছমিন ভিকটিম আবুল খায়েরকে একাধিকবার ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পান। পরে রাতব্যাপী তারা খোঁজাখুজি করেন। পরদিন মঙ্গলবার আনুমানিক ৯ ঘটিকায় কালিঘাট চা বাগানে একটি মরদেহ পাওয়ার খবর শুনে ভিকটিমের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিমের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। এসময় শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় অজ্ঞাতনামা আসামীগন ভিকটিমের হাতে, বুকে, মুখে, গলায় চাকু দিয়া একাধিক জায়গায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য চা বাগানের ভেতরে ফেলে রাখে। ঘটনার পরপরই নৃশংস হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একাধিক চৌকস টিম কাজ শুরু করে। মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সার্বিক দিক নির্দেশনায় শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) তৌকির আহমেদ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামী রুবেল আহমেদ সাগর ওরফে জসিমকে সনাক্ত করে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গতকাল ১৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৬ ঘটিকায় তাকে আটক করে শ্রীমঙ্গল থানায় ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের স্ত্রী বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে আসামীকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় যে, সেসহ তার সঙ্গীয় আরও ৩/৪ জন আসামী মিলে গত ১৪ অক্টোবর আনুমানিক রাত ৯ঘটিকার সময় ভিকটিমকে অটোরিক্সাসহ কালিঘাট চা বাগানে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমের মিনি টমটম (মিশুক) নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম আসামীদের বাঁধা দিলে সকল আসামীগন ধারালো চাকু দিয়া ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। আসামীদের ধারালো চাকুর আঘাতে একপর্যায়ে রক্তক্ষরন হয়ে ভিকটিম মৃত্যু বরণ করলে আসামীগন ভিকটিমের অটোরিক্সা নিয়া চলে যায়। আসামীগন ভিকটিমের পরিচিত হওয়ায় এবং অটোরিক্সা ছিনতাই করার সময় ভিকটিম আসামীদের চিনতে পারায় আসামীগন ভিকটিমকে হত্যা করে। আসামীকে সাথে নিয়ে গতকাল রাত ৪ ঘটিকার সময় আসামীর বসতঘরে অভিযান করিয়া আসামীর সনাক্ত মতে ঘটনার সময় আসামীর পড়নে থাকা একটি ধূসর রংয়ের কাপড়ের ফরমাল প্যান্ট, যাহার সামনের ডান অংশে রক্তের দাগ আছে এবং একটি বেগুনী রংয়ের গোলগলা গেঞ্জি, যাহার কলারের পেছনের অংশ ছেড়া উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, চমটম চালক খুনের ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামিকে গ্রেফতা করে বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া হত্যা মামলার ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামীদের গ্রেফতারের জন্য শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে রয়েছে বলে তিনি জানান।