দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর উপর নির্মিত কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কাজ ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬ শত ৩১ টাকায় ৫৭০ মিটার দীর্ঘ সেতু এখনো সম্পন্ন হয়নি, যা ৪ বছর ধরে চলমান। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে নির্মাণ কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া সেতুটির মেরামতের কাজ কবে শেষ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৪ বছর আগে শুরু হওয়া এই নির্মাণ কাজের ১৫২টি পাইলের মধ্যে ১৪১টির কাজ সম্পন্ন হলেও ১১টি পাইলের নির্মাণ কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এর ফলে প্রায় অর্ধলক্ষ বাসিন্দা যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। এলাকাবাসী বলছেন, সেতুর অভাবে তাদের যাতায়াতে কষ্ট ও ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলা সদর থেকে উত্তর ইউনিয়ন এবং তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কিছু অংশে যেতে খেয়া নৌকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা সময়ের অপচয় এবং দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য এবং ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বাহেরচর ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলিম জানান, এই ইউনিয়নের লোকজন, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবয়াসী ও কৃষকদের যাতায়াতের জন্য সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা খুবই দরকার । তাছাড়া এই সেতুর অভাবে দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়নসহ মেঘনা ও তিতাস উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার বাহেরচর, বাজরা, বটতলী ও গঙ্গাপ্রসাদ, হাসনাবাদ ভিটিকান্দি, কান্দারগাঁও, তিতাস উপজেলার কাকিয়ালী, মোহনপুর, উজিরাকান্দি, সাতানী, দুধঘাটা, দড়িগাঁও, চরকাঁঠালিয়া, চারআনি, নন্দীরচর, মঙ্গলকান্দি, বারকাউনিয়া, কালীরবাজার, ভুঁইয়ারবাজার, নন্দনপুর, বালুয়াকান্দি, জগতপুর ও চরকুমারিয়া এবং মেঘনা উপজেলার হিজলতলী আলীপুর, বিনোদপুর, চরবিনোদপুর ওই ২৮টি গ্রামের মানুষ নৌকা নিয়ে গোমতী নদী পারাপার করে। বাহেরচর গ্রামের কৃষক আসলাম বলেন, ‘এই ব্রিজের কারণে ফসলও নিতে পারছিনা। নৌকায় কী এতো কিছু নেয়া যায়। মোহনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আশিক বলেন, সেতু না থাকায় মালামাল আনা নেওয়া অনেক সমস্যা হয়। সেতু না থাকায় নৌকায় নদী পার হতেই চলে যায় অনেক সময়। তারপরেও ঠিকমতো নৌকা পাওয়া যায় না। সেতুটা হইলে আমাদের জন্য যে কত ভালো হতো। পূর্ব হাসনাবাদ ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহজাহান জানান, এ সেতু নির্মিত হলে উপজেলা সদর উত্তর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২৮ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার যাতায়াতের অসুবিধা দূর হবে। এই বিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী স্নেহাল রায় জানান, ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬ শত ৩১ টাকা ব্যয়ে ওই নদীতে ৫৭০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের জন্য কাজের দায়িত্ব পায় কুমিল্লার মঈনউদ্দিন বাশী লিমিটেড ও মেসার্স জাকির এন্টার প্রাইজ (জেভির)। যৌথ কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে সেতু নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত করোনাকালে কাজ বন্ধ থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু করে। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সেতুর কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে সময় বেঁধে দেওয়া হলেও তারা সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে সেতু নির্মাণ কাজের এই ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে, স্থানীয় জনগণের আশা, সেতুর নির্মাণ শেষ হলে তাদের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে এবং কদমতলী ও হাসনাবাদ এলাকার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। তারা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করে সেতুর কাজ সম্পন্ন করা হোক, যাতে তারা যাতায়াতের দীর্ঘ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পান।