২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ঢাকাগামী রেলপথের ক্রস পয়েন্টে ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী ৬০৪ ডাউন কন্টেইনার এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের ধাক্কায় ভৈরব থেকে ঢাকাগামী ৭৫০ আপ এগার সিন্দুর গোধূলী ট্রেনের পেছনের ২টি বগী ৭৫০৩ এবং৭০১৩ উল্টে দুমড়ে মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় নারী শিশু সহ ১৯ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়াও শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছিল। তম্মধ্যে অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ভৈরব স্টেশন মাষ্টার ইউসুফ বলেন, তখন রেল মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে নিহত ১০ জনের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেয়া হয়। বাকী নিহত ৯ জনের পরিবার প্রকৃত কাগজ পত্রের অভাবে অনুদান থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ভৈরব রেলওয়ে যাত্রীকল্যান সমিতি এবং স্টেশন সংলগ্ন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় আজ বুধবার বিকালে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ভৈরব রেলওয়ে থানার এস আই এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আলী আকবর জানান-ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রী নজরুল ইসলাম(৩৯) এর ভাই বিল্লাল বাদী হয়ে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের চালক জাহাঙ্গীর আলম , সহকারী চালক আতিকুর রহমান ও পরিচালক (গার্ড) মোঃ আলমগীরকে আসামী করে ৩০৪-ক/৩৩৮/৮২৯ ধারায় প্যানেল কোডে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০২, তাং-২৪/১০/২০৩ইং। বাদী বিল্লাল নরসিংদী জেলার বেলাব থানার সররাবাদ গ্রামের দর্শন মিয়ার পুত্র। মামলায় উল্লেখ করা হয় গুরুতর আহত যাত্রী নজরুল ইসলাম কে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে পথিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মারা যায়। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের গাফিলতি আর তাচ্ছিল্য থাকায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। সঠিকভাবে দ্বায়িত্ব পালন করলে এ দূর্ঘটনা ঘটত না। তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আকবর বলেন, আসামী পরিচালক (গার্ড) মোঃ আলমগীর এর পূর্নাঙ্গ ঠিকানা আজও পাওয়া যাচ্ছে না। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পরদিনই কন্টেইনারবাহী ট্রেনের চালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী চালক আতিকুর রহমান ও পরিচালক (গার্ড) মোঃ আলমগীরকে বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল রেলওয়ে। তদন্তে ঢাকা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লোকমেটিক, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এর বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী। চট্রগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে ছিলেন, রেলওয়ে সিওপিএস মোঃ শহিদুল ইসলাম, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আরমান হোসেন, সিএসপি তুষার ও চিফ মেডিকেল অফিসার আহাদ আলী সরকার। অনুসন্ধানে জানা যায়, কন্টেইনারবাহী ট্রেনটি স্টেশনের আউটারে থাকার কথা কিন্তু সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে ঢুকার সময় এগার সিন্দুর গোধূলী ট্রেনের পেছনের ২টি বগীতে ধাক্কা দেয়ার কারণে দূর্ঘটনা ঘটে। ট্রেন দূর্ঘটনার পর ভৈরব ফায়ার সার্ভিস সহ পাশর্^বর্তী কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মবাড়িয়া জেলা থেকে ৮টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে ঢাকা থেকে ১টি বিশেষ ইউনিটসহ আরোও ৫টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। তারা ৬ ঘন্টা চেষ্টা করে ট্রেনের বগী কেটে ১৭ লাশ উদ্ধার করে। ট্রেন দূর্ঘটনার বিকট শব্দ শুনে এলাকাবাসীও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিল।এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন, র্যাব সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। স্থানীয় লোকজন জানায়, এত বড় ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনা ভৈরবে কখনো ঘটে নি।