বেশ কঠিন এক সময়ে দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব পান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দুই মাসে নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আসছে নানা সাফল্যের খবরও। ধীরে ধীরে কাটছে দুর্যোগের মেঘ, জনগণের আস্থা বাড়ছে সরকারের ওপর। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই ধারাবাহিক সাফল্য ব্যাহত করতে নতুন করে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। নেটিজেনদের অভিযোগ, একটি মহল তাকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্র সফল হলে ড. ইউনূস সরকারের সাফল্যের ধারাবাহিকতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এতে সুবিধা হবে পতিত স্বৈরাচারের।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। তাকে প্রধান উপদেষ্টার পদে বহাল রেখে দেশকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে নিজেদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে দেখা গেছে অসংখ্য সচেতন দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতাকে।
উল্লেখ্য, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্ব্তী সরকারের প্রথম দুই মাসে তুলনামূলক সাফল্য এসেছে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ব্যাংকিং খাতে নানা উদ্যোগে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক নানা তৎপরতা বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক স্বপ্ন দেখাচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে।
মাহবুব করিম লিখেছেন, একটি মহল ড. ইউনূসকে সরিয়ে অন্য কাউকে প্রধান উপদেষ্টার চেয়ারে বসাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের অদূরদর্শী এই পদক্ষেপে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এর সুবিধাভোগী হবে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা।
তুহিন সরকার লিখেছেন, ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট বানানোর ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। আমি মনে করি, ড. ইউনূসকে সরিয়ে দিলে দেশ আরও পিছিয়ে যাবে। তার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থেকে দেশ যে উপকৃত হচ্ছিল তা ব্যাহত হবে। তাই আমরা সচেতন নাগরিক চাই তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদেই বহাল থাকেন।ড. ইউনূস সরকারের সাফল্যে তুলে ধরে সুরেন্দ্র কুমার লিখেছেন, রিজার্ভ থেকে কোনো অর্থ খরচ না করেই দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সাথে আশা করা যাচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি সব দেনা (আদানি, সুদ, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) শোধ করে অর্থনীতি পজিটিভ ধারায় ফিরবে। আওয়ামি দালাল আর লুটেরাদের কথায় না নেচে ধৈর্য্য ধরি, দেশে গড়ায় যার যার জায়গা থেকে পজিটিভ কন্টিবিউশান অব্যাহত রাখি।
মাসুদ আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এই জন্য যে আজকে যদি ডাঃ ইউনুস স্যার ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা সকলেই ব্যর্থ। আমাদের পিছনে আওয়ামী ইবলিশ লেগেই আছে। সবাইকে বলতে চাই তারা যেন ফ্যাসিবাদী দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয়। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করে আশিক চৌধুরী লিখেছেন, চেষ্টা করলে অবশ্যই সম্ভব ইনশাআল্লাহ, যেমন আফগানিস্তান চেষ্টা করতেছে। আর আমরা এক দল চেষ্টা করছে আরেক দল তাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করছে। এরকম করলে দেশের উন্নতি কেউ করতে পারবে না যতক্ষণ না দেশের সব মানুষ প্রকৃত উন্নয়ন চাবে, আইনের শাসন চাবে, যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ করতে চাবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা, দেশ ছেড়ে পালান ভারতে। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারে ছাত্রদের দাবিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ নিতে রাজি হন ড. ইউনূস।
গত ৮ আগস্ট সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. ইউনূস। গত ২ মাসে কম বাধা-বিপত্তি যায়নি নতুন এই সরকারের ওপর দিয়ে। একে তো দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা, তার ওপর প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন দুর্নীতি আর লুটপাটের কালো থাবা। প্রশাসনও অকার্যকর আর সব জায়গায় ফ্যাসিবাদীদের দোসরদের আধিপত্য।
সবকিছু মিলিয়েই গত ২ মাস কঠিন সময় পার করেছে ইউনূস সরকার। তবে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও রিজার্ভ বৃদ্ধি, বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু সাফল্য সম্প্রতি ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়।
দুর্নীতি যেন এ দেশের প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির কালো ছায়া। এছাড়া পদে পদে স্বৈরাচার সরকারের দোসররা তো আছেই। তাই বাংলাদেশ সচিবালয়ে শীর্ষ পদ, বিভিন্ন সংস্থা বা দপ্তরে ও মাঠ প্রশাসনে একের পর বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। পুলিশের আইজিপি, এসবি, র্যাব, পুলিশ কমিশনার পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সব জেলায় পুলিশ সুপারসহ থানায়ও পরিবর্তন আসছে।