বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

আত্মমর্যাদাবোধ

জুবায়ের বিন মামুন
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪

একজন প্রকৃত মুমিন কখনো অর্থলিপ্সু বা লোভাতুর হয় না। অহঙ্কারী হয় না; বরং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়।
তার জীবনজুড়ে থাকে আত্মমর্যাদা, বিনয় ও নম্রতার সমাবেশ। যার দরুন জীবনের ভাঁজে ভাঁজে আত্মমর্যাদা তাকে হীনচরিত্রের অধিকারী বা অর্থলিপ্সু বানায় না। অন্তিম লগ্নে তার আর্থিক প্রয়োজন হলেও। এমন প্রকৃত মুমিনের প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যাদের অন্তরের লিপ্সা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’ (সূরা আল হাশর-৯) এই মর্মে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘মুমিন আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন আর আল্লাহ তাদের চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন।’ (মুসলিম-২৭৬১)
যাপিত জীবনে মুমিনের আত্মমর্যাদাবোধ কেমন হওয়া উচিত: আত্মমর্যাদা আত্মশুদ্ধি অর্জনের সহায়ক : লোভলালসা, অহঙ্কার, ঘৃণা, হিংসা, ক্রোধ ইত্যাদি মানবীয় স্বভাব যা ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস করে দেয়। এ ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদা একজন মানুষকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে। এই মর্মে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আত্মমর্যাদা ঈমানের অংশ আর আচরণে উগ্রতা কপটতার লক্ষণ।’ (সুনানে বায়হাকি-১০/২২)
শালীনতা ব্যক্তিত্ব বজায় রাখে : লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। লজ্জাশীলতা মানুষের ঈমান ও ব্যক্তিত্ব ধরে রাখে আর লজ্জাহীনতা মানুষকে ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে। ফলে সে অনায়াসে যেকোনো কাজ করে বেড়ায়। অথচ বিশ্বমানবতার পরতে পরতে যে কুফরি ও মূর্খতার ছোঁয়া লেগেছিল, তা চূড়ান্তভাবে মূলোৎপাটন করার জন্য যুগে যুগে যে নবীরা এই সৃষ্টিলোকে আগমন করেছেন তারাও উম্মতদের লজ্জাশীলতার উপদেশ দিয়েছেন। হজরত আবু মাসউদ উকবা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আম্বিয়ায়ে কেরামের যেসব উক্তি মানবজাতি লাভ করেছে, তার মধ্যে একটি হলো- যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করো।’ (বুখারি-৩৪৮৩)
সংযত দৃষ্টি প্রবৃত্তি দমন করে : কুদৃষ্টি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই বিপদসঙ্কেত। এমনকি জিনায় লিপ্ত হওয়ার বিশেষ মাধ্যম। বিশেষত রাস্তাঘাটে চলাফেরায় কুদৃষ্টি নারীকে বিব্রত ও লজ্জিত করে এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যদের আত্মমর্যাদা তাতে ক্ষুণœ হয়। এ জন্য পুরুষ ও নারী উভয়কে দৃষ্টি অবনত রাখতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘মুমিনদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হিফাজত করে। এটিই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সূরা নূর, আয়াত-৩০)
অভাব-অনটনে মানুষের সাহায্য লাভ : মানুষ আল্লাহর মুখাপেক্ষী; মানুষের নয়। বিপদাপদে আল্লাহর কাছে কেউ সাহায্যের হাত পাতলে তার সম্মান বাড়ে। আর মানুষের কাছে হাত পাতলে তার সম্মান কমে। ইসলাম এ ধরনের আবেদন-নিবেদনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘কেউ যদি অভাব-অনটনে পড়ে এরপর তা মানুষের কাছে উপস্থাপন করে তাহলে তার অভাব-অনটন দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি অভাব-অনটনে পড়ে এরপর তা আল্লাহ তায়ালার কাছে উপস্থাপন করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্রুত অথবা বিলম্বে রিজিক দান করেন।’ (তিরমিজি-২৩২৬)
সামাজিক জীবনে স্বীয় ব্যক্তিত্ব : ব্যক্তিজীবনে যার চিন্তাচেতনা যত উন্নত, সামাজিক জীবনে মানুষের সাথে ওঠাবসা, চলাফেরা, খানাপিনা, পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে তার আত্মমর্যাদা থাকে ততটাই সমুন্নত। আর যার মধ্যে স্বীয় মর্যাদা বজায় রাখার চিহ্নমাত্র নেই, তার দৃষ্টি কখনো উচ্চ হতে পারে না। মানুষের নজরেও তার সম্মান বর্ধিত হয় না। তার কথার মূল্য দেয়া হয় না।
সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য ইসলাম এবং ঈমানের নিয়ামত ও ইজ্জত এমন একটি সম্পদ যার মোকাবেলায় যাবতীয় নিয়ামত এবং সম্পদ খুবই নগণ্য। আর প্রকৃত মুসলমান তো সে, যে আল্লাহ তায়ালাকে ছাড়া কাউকে পরোয়া করে না। সে কারো সামনে মাথা নত করে না। সে কারো দরজায় সাহায্যের হাত পাতে না এবং মুসলমান হিসেবে সে নিজের অবস্থানকে দুনিয়ার অন্যান্য বস্তু থেকে উচ্চ মনে করে। লেখক : শিক্ষার্থী, মাদরাসাতুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া রাখালিয়া, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com