মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুজ্জামান তানভিন স্বপ্ন দেখতেন দেশ ও বিদেশের আকাশে তার বানানো ড্রোন উড়বে। রঙিন এ স্বপ্নে ভরা ছিল তার দু’চোখ। মূলত এ নিয়েই ছিল তার বেঁচে থাকা। কিন্তু তার স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়লো এক নিমিষেই, বুলেটের আঘাতে। অন্যলোকের বাসিন্দা জাহিদুজ্জামানের স্বপ্নটাও রয়ে গেলে অধরা। ঝরে গেলো অচেনা এক অন্যভূমে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তানভীনের মা বিলকিস জামান(৪৫)।
তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই দুপুরে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে পুলিশ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় তানভীন। ঘটনাস্থলে শহিদ হয় সে। পুলিশের গুলি তার গলার পাশ ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। বুকে ছিল অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন। আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে সেটা কখনও কল্পনাও করিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে বাইরে গেল সাড়ে ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে। সেদিন আমি ব্যস্ত ছিলাম। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খেয়েছে। চেয়ারে বসে ভাবছিলাম টেবিলে এঁটো প্লেট-বাটি এলোমেলো হয়ে আছে। এগুলো গুছিয়ে নেই। এই ভেবে দরজা পর্যন্ত গেলাম না। তানভীন এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে দরজার সামনে এগিয়ে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেল। অন্যদিনের মতো বিদায় জানানো হয়নি তানভিনকে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। প্রতিদিন তার সালামের উত্তর দিয়ে তিন কুল (সূরা) পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম।
তানভীনের ছোটবেলা থেকে এই-ই হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিনের এই চর্চার ব্যত্যয় ঘটে গেল কেবল ১৮ জুলাই। সালাম দেওয়ার পর সালামের উত্তর দিয়েছি শুধু। এতোটুকুই আমার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা। এ যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে তা তো আমি বুঝিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’
কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন,‘আমি তখন বাসায় ছিলাম। ওর মোবাইল দিয়ে কেউ একজন আমারে কল করে বলল, আপনার ছেলে গুলি খাইছে। হাসপাতালে আসেন। তা শুনে আমি অতি দ্রুত উত্তরায় কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে যাই।’
জাহিদুজ্জামান তানভীন(২৪) গৃহিণী মা বিলকিস জামান ও ইঞ্জিনিয়ার বাবা শামসুজ্জামানের সঙ্গে উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজার জামতলার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তানভীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ২০২২ সালে তিনি স্নাতক শেষ করেন। পরে তিনি তার তিন বন্ধুকে নিয়ে তাদের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে দেশের প্রথম এবং একমাত্র ড্রোন বিক্রি, বাণিজ্যিক আবেদন এবং সেবাসমূহের ‘অ্যান্টস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটি জরিপের নানা ধরনের কাজ করার পাশাপাশি অনলাইনে ড্রোন বিক্রিও করতো। তানভীন এই প্রতিষ্ঠানে ‘চীফ টেকনিক্যাল অফিসার’ হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে বুয়েট নেভাল ডিপার্টমেন্টের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেস্ট শিফট ডিজাইন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় তার দল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের প্রতিযোগিতাতেও দ্বিতীয় পুরস্কার অর্জন করে। একাধারে ২০২০ ও ২১ সালে আননেমড এরিয়াল প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করে তানভীন ও তার দল।
এছাড়া বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএএসএ- নাসা) আয়োজিত ইউরোপিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় তানভীন ও তার গ্রুপ বিশ্বের দশম এবং এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরবর্তীতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিক্যাল, মেকানিক্যাল এন্ড প্রোডাকশন বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাকালীন তানভীন বুয়েট আয়োজিত ‘মডেল শিপ প্রপালশান কম্পিটিশন ‘ এ অংশ নিয়ে পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর দেশের গ-ি পার হয়ে তিনি ও তার দল যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনস্টিটিউশন অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আয়োজিত ইউএএস এয়ারক্রাফট সিস্টেম কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। এ কম্পিটিশনে ছয়টি পুরস্কারের মধ্যে তিনটিই লাভ করে তানভীন ও তার দল।
তানভীনের মা বিলকিস জামান বলেন, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি গভীর মনোযোগ ছিল তার। প্রযুক্তিই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। প্রখর মেধাবী ছিল আমার তানভীন। সে কখনো কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ড্রোন নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আইসিটি ডিভিশনের অধীনে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ড প্রতিযোগিতায় জিতে অনুদান পাওয়া ১০ লাখ টাকা দিয়ে ড্রোন বানানোর প্রতিষ্ঠান ‘এ্যান্টস’ নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে।
আমার ছেলে অনেক বিনয়ী এবং ভদ্র ছিল। সে ড্রোন বানিয়ে নিজে বিক্রি করতো। নানা ধরনের পুরস্কার পেয়েছে। দেশের বাইরে যেতে চায়নি। দেশে ও দেশের বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সফল হতে চেয়েছিল। ওর আব্বু ওকে বিসিএস পরীক্ষা দিতে বলছিল। তানভীন বলেছিল,‘আমি ব্যবসা করব। কোন দিনই সরকারি চাকরি করবো না। তাহলে কেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবো?’
জাহিদুজ্জামান এর মামা সমকালের টঙ্গী প্রতিনিধি আবু সালেহ মূসা (বাবু) বাসসকে জানান, ১৮ জুলাই আমি আন্দোলনের তথ্য সংগ্রহ করছিলাম। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে আমার মেজ বোন তানভীনের মা আমাকে মোবাইলে ফোন করে বললেন,‘ বাবু, কোটা সংস্কার আন্দোলনের জায়গা থেকে তোর ভাগিনার শরীরে গুলি লাগছে। তার অবস্থাতো ভালো না।’ এই কথা শুনে আমি টঙ্গী থেকে উত্তরার দিকে রওনা দেই। আব্দুল্লাহপুরে আসার পরপরই আপা আবার ফোন করে আহাজারি করে জানায়,‘বাবুরে তোর ভাগিনা তো আর নাই।’ জানতে পারি কুয়েত- মৈত্রী হাসপাতালে আমাদের সবার প্রিয়, আমাদের দুই পরিবারের বংশের বড় ছেলে তানভীনের মরদেহ পড়ে আছে। আমি বহু বাধা-বিপত্তি পার হয়ে হাসপাতালে পৌঁছাই। গিয়ে দেখি হাসপাতালের বাথরুমে (তাৎক্ষণিকভাবে ডোম ঘর বানানো) তানভীন ছাড়া আরো চারটি লাশ পড়ে আছে। মরদেহ আনতে গিয়ে পুলিশ ও হাসপাতালের ডাক্তারদের বাধার মুখে পড়ি। অনেক বাকবিত-ার পর তার মরদেহ উদ্ধার করি বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। পরে তাকে নিয়ে আজমপুরে তাদের ভাড়া বাসায় এসে প্রথম জানাজা দেয়ার পর তার মরদেহ ব্রাহ্মণবাাড়িয়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। আনুমানিক রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভাগ্নে ছোটবেলায় আমাদের কাছে পড়াশোনা করেছে। জাহিদুজ্জামান তানভীন টঙ্গী থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী থেকে এইচএইচসি পাশ করে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর আগে।
তার বাবা শামসুজ্জামান(৫২) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং তার একমাত্র বোনও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার।্ সে এখন আমেরিকাতে বাস করছে। আমাদের মামা ভাগিনার সম্পর্ক ছিল মধুর। বাসা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে থাকা বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়েছে।’
এ্যান্টস এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও বন্ধু তাওসিফুল ইসলাম তওসিফ বলেন, ‘তানভিন এ্যান্টস এর টেকনিক্যাল সাইডটা দেখতো। আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটা করা। খুবই ট্যালেন্টেড ইঞ্জিনিয়ার ছিল সে। অসম্ভব ভালো একজন মানুষও। মৃত্যুর আগের দিন ১৭ জুলাই রাত দশটা পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ১৮ জুলাই যেদিন ও চলে গেল সেদিনও কিছু ইন্টারভিউ নেয়ার কথা ছিল। পরে রাতে যখন শুনতে পারি দেশের সিচুয়েশন খুব খারাপ হয়ে গেছে তখন তা ক্যানসেল করে সিদ্ধান্ত নেই যে কালকে(১৮ জুলাই) কেউ অফিসে আসবো না। পরের দিন ওর আম্মু ওকে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য পাঠিয়েছিল। এরপরে পৌনে একটার দিকে খবর আসে যে ওর গায়ে গুলি লেগেছে। পরে এক ফ্রেন্ড কল দিয়ে জানায় ও আর নেই।’
তাওসিফ আরো বলেন, ড্রোনের সম্প্রসারণ নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল। তানভীনকে ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান হয়তো কখনোই দাঁড়াতো না। অ্যান্টস বর্তমানে ড্রোনের পাইলটিং ও ম্যাপিং নিয়ে কাজ করে। অ্যান্টস বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি, কৃষি অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। তানভীন তার সৃজনশীলতা ও কর্মস্পৃহা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়ে গেলো। তাানভীন চলে যাওয়ায় এ খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
‘এ্যান্টস’ এ তানভিনের সহকর্মী ও বন্ধু দেওয়ান ফাহিম ফয়সাল বাসসকে জানান, তানভীনের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে। ব্যাডমিন্টন কম্পিটিশনের জন্য পার্টনার খুঁজছিলাম। তখন সে আমাদের গ্রুপে পোস্ট ও কমেন্টস করেছিল। প্রথম থেকেই দেখতাম তানভীন অনেক কিছু নিয়ে ইন্টারেস্টেড এবং সিরিয়াস ছিল তার উদ্ভাবনী কাজ নিয়ে। মনে পড়ছে বুয়েটে একটা কম্পিটিশনের জন্য সে নৌকা বানিয়েছিল। কম্পিটিশনের দিন ভোরবেলা ক্যাম্পাসের লেক এ নৌকাটি চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ইয়ারের কেউ এমন একটা কাজ করতে পারে, এই জিনিসটা আমাকে অনেক বেশি ইমপ্রেস করেছিল।
ফয়সল জানান, এরপরে বিভিন্ন ক্লাসের ইভেন্টের জন্য নিজেদের মধ্যে কানেকশন ছিল। আইইউটিই থেকে বের হওয়ার পর যখন অ্যান্টস এ কাজ করতাম দেখা যেত নিয়মিত দেখা হতো ওর সাথে। অ্যান্টস এ জয়েন করার পর আসলে তানভীনের সঙ্গে আমার বেশি সময় স্পেন্ড করা হয়েছে। ওর মধ্যে কাউকে আপন করে নেয়ার বিষয়টা ছিল। আমি অন্যদেরকেও বলি তানভীন অনেক কেয়ারিং ছিল। ইভেন এখনো মনে আছে আমি দুপুরে লাঞ্চ করেছি কিনা বা কোন কিছু লাগবে কিনা কি করে যাব এমন সব ছোটখাটো অনেক বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করতো। বাইরে থেকে অফিসের দিকে আসলে হাতে করে কিছু নিয়ে আসতো।
তিনি বলেন, যখন ঘটনাটা ঘটে তখন আমি জানতে পারি দুপুর ১ টার দিকে। জানার সাথে সাথে ওর নাম্বারে কল করেছিলাম। আরেকজন ধরে বলে, ‘আপনার ফ্রেন্ড মারা গেছে’…আমি তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এরপরে ওর আম্মুর নাম্বারে ফোন দিয়েছি। আন্টির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওর আম্মু হাসপাতালে ছিল। উনি নিজের চোখে দেখেছেন ও (তানভীন) মারা গেছে। তখন আসলে কিছু সময়ের জন্য বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিভাবে হল কেন হল। ঐদিন তো রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ ছিল।
শ্যামলীর বাসা থেকে উত্তরা এসেছিলাম। কিন্তু শেষ দেখা হয়নি। আমি তানভীনকে এভাবেই মনে রাখতে চাই যে, আমার এমন একটা বন্ধু এমন একজন কলিগ, যে নিজের সাধ্য ও সাধ্যের বাইরেও যতটুকু পেরেছে আমার জন্য করেছে। আমার ভালো চেয়েছে । আমার ছোটখাটো ভালো কিছুতে ও যেভাবে সাহস দিয়েছে, আনন্দিত হয়েছে,আমি অন্ততপক্ষে ওর আশেপাশে যেসব মানুষ আছে, তাদের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।
তানভীনরা দেশের জন্যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। শুরুর আগেই জীবন নিঃশষে বিলিয়ে দিয়েছে। তানভিন শহিদ হওয়ার পর তাই তার এলাকার গোল চত্বর পাঁচ মাথার মোড় গোদাগাড়ীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘শহিদ তানভীন চত্বর’। আগে এই চত্বরের নাম ছিল ফিরোজ গোল চত্বর। দুটি গাছও সেখানে লাগানো হয়েছে।