শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

সাফ নারী ফুটবল শিরোপা জয়ে অন্যন্য ভূমিকা রেখেছে সাতক্ষীরার তিন কন্যা

রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪

টানা দ্বিতীয়বারের মত সাফ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ এর দ্বিতীয় শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাতক্ষীরার তিন নারী ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, রক্ষনভাগের খেলোয়াড় মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকার প্রান্তির বাড়ি সাতক্ষীরায়। ইতিমধ্যেই এই তিন কৃতি খেলোয়াড়ের নিজ জেলায় শুরু হয়েছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ফেরার পর সাতক্ষীরায় আনন্দ র‌্যালি করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছেন খেলোয়াড়দের বাড়িতে। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের। সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২২ সালে প্রথমবার সাফ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সাথে ছিলেন ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন। এবার ২০২৪ এর দ্বিতীয় শিরোপা জয়ে তাদের সাথে যুক্ত ছিলেন জাতীয় দলের আরেক ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকার প্রান্তি। দলের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনজনই। অধিনায়ক সাবিনার পাশাপাশি ডিফেন্ডার হয়েও গোল করেছেন মাছুরা ও প্রান্তি। তাই ২০২২ সালের মত এবার সাতক্ষীরায় পৌঁছালে খোলা বাসে শহর ঘুরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হবে সাতক্ষীরার তিন কন্যাকে। এজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলার ক্রীড়া সংগঠকরা বলেন, স্পন্সারশিপ না থাকা ও পর্যাপ্ত ক্রীড়া সামগ্রীর প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও সাতক্ষীরার মেয়েরা দেশের ফুটবল অঙ্গনে ভূমিকা রেখে চলেছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে সাতক্ষীরায় আরো নারী ফুটবলার তৈরি হবে বলে আশা করেন জেলা ক্রীড়া সংগঠকরা। সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ এলাকায় সাবিনাদের বাস। বাবা সৈয়দ আলী গাজীর পাঁচ মেয়ের মধ্যে সাবিনা চতুর্থ। সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন, আমার মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শুনে কী যে আনন্দ লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার মেয়ের ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে ঘিরে। ওর বাবা বেঁচে থাকলে আরো বেশি খুশি হতেন। তিনি আরও বলেন, খেলায় জেতার পর সাবিনা নেপাল থেকে কয়েকবার আমাকে ফোন করেছিল। জানতে চেয়েছে, আমরা তার ফাইনাল খেলা দেখেছি কিনা। সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরার বাড়ি সরকারের দেওয়া আট শতক জমির উপর টিনশেডের দুই কক্ষের ঘর। সেখানেই বসবাস করেন তার পরিবার। ২০২২ সালে সাফ শিরোপা জয়ের পর সরকারিভাবে তাদের এই জমিটা দেওয়া হয়েছিল। তবে কথা বলাতে মাছুরার বাড়িতে গিয়েও পরিবারের কারো সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি। সাতক্ষীরার সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা আফঈদা খন্দকার প্রান্তি। ফুটবল কোচ আরিফ হাসান প্রিন্সের ছোট মেয়ে তিনি। তার বাবা একজন ক্রীড়া সংগঠকও বটে। আফঈদা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে ফুটবল অনুশীলন করতেন। জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক আরিফ হাসান প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিমে সাতক্ষীরার তিন কৃতি সন্তান রয়েছে। এদের অবদানের জন্যই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমার মেয়ের প্রথম সাফ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ও গোল করে দলের জয়ে অবদান রেখেছে। এজন্য বাবা হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত, আমার পরিবারও গর্বিত। সাতক্ষীরাবাসী আমাদের যেভাবে উৎসাহিত করেছে তা অকল্পনীয়। তিনি আরও বলেন, শুধু এই তিন ফুটবলারই নয় সাতক্ষীরায় প্রায় এক ডজন নারী ফুটবলার রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে। সযোগ পেলে তারাও দলের জন্য অবদান রাখতে পারবে। তবে এবারের সাফল্যে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য রয়েছে অসংখ্য শুভকামনা। সাতক্ষীরার তিন কন্যা দেশের গর্ব এবং তাদের সাফল্য বাংলাদেশের ফুটবলকে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সাবেক ফিফা রেফারী তৈয়ব হাসান বাবু জানান, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ আবারও গৌরব অর্জন করেছে। পরপর দুটি সাফ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ গৌরব অর্জন করল। এই দলে আমার নিজ জেলা সাতক্ষীরার তিন কৃতি খেলোয়াড় রয়েছে। যার মধ্য বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বদানকারী সাবিনা খাতুন রয়েছে। তার সাথে রয়েছে মাসুরা ও প্রান্তি ক্রীড়া অঙ্গনে বাংলাদেশের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা অনেক এগিয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিমে সাতক্ষীরার তিনজনই সাফ জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যে কারণে নবীন এবং পুরাতনদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ টিম আবারও প্রমাণ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে বাংলাদেশ আসলেই চ্যাম্পিয়ন। এই বিজয় নতুনভাবে উদযাপন করবে বাংলাদেশের মানুষ। কারণ মেয়েরা আমাদের গৌরবের জায়গায় নারী ফুটবল টিমকে আবারও চ্যাম্পিয়ন করেছে। আমাদের মেয়েদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা এবং অভিনন্দন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি রিপন জানান, ফুটবলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনজন খেলোয়াড় সাতক্ষীরা থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের অন্যন্য অবদানে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মত সাফ নারী ফুটবল শিরোপা জিতেছে। সাতক্ষীরার নারী ফুটবলারদের অধিকাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। তবে পরিবার ও মা বাবার আত্মবিশ্বাসের কারনে আজ তারা বেড়ে উঠেছে। সংগ্রাম ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আজ বিশ্বমানের নারী ফুটবলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তারা। জেলায় ফিরলে ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে পূর্বের ন্যায় এবার ছাদ খোলা বাসে শহর ঘুরিয়ে তাদের সংবর্ধনা দেয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com