শহীদ নূর হোসেন দিবসে রাজধানীর গুলিস্তানে নূর হোসেন চত্বরে বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। আজ রোববার ভোর থেকে এই শ্রদ্ধা নিবেদন চলছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে সকাল থেকে নূর হোসেন চত্বর ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের শাহবাগ থানা যুবদল ও পল্টন থানা যুবদল বলে পরিচয় দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দেখা গেছে। কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজনকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে পুলিশকে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নূর হোসেন চত্বরে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু উৎসুক জনতা জড়ো হয়েছেন। যান চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম।
সকাল ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে একদল মানুষকে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তাঁরা নিজেদের শাহবাগ থানা যুবদল বলে পরিচয় দেন। ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গুমখুনের অপরাধে খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেন তাঁরা। সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।
পল্টন থানা যুবদলের পরিচয় দিয়ে আরেকটি দল সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে মিছিল নিয়ে নূর হোসেন চত্বরে যায়। পরে সেখান থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যায়। তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। সাড়ে ১০টার দিকে তারা আবার সেখান থেকে চলে যায়। সকালে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) টহল দিতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেখানে অবস্থান নিয়েছে।
সকালের দিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজনকে পুলিশকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার শাহরিয়ার আলী প্রথম আলোকে বলেন, নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নূর হোসেন চত্বরে যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ও জাতীয় গণফ্রন্ট।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন বুক ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে মিছিলে নেমেছিলেন। সেদিন পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান। ১৯৮৭ সালে তাঁকে হত্যার আজকের এই দিনে ঢাকার জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর তা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
দলটির ওই কর্মসূচির বিরুদ্ধে অন্তর্র্বতী সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে গতকাল শনিবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এক ফেসবুক পোস্টে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজপথে কোনো মিছিল-সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ব্যানারে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচির শিরোনাম পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত।