আওয়ামী প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে ভারত বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানাচ্ছে: বিজন কান্তি সরকার
ভারত ও ভারতীয় জনগণের একাংশ আওয়ামী প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নাগরিকরা বিপদে পতিত হয় ও সর্বক্ষণ আতঙ্কিত থাকে, নানা আকারে প্রকারে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত হয়। অন্যান্য সরকারের সময়েই হিন্দু জনগণ শান্তিতে জীবন নির্বাহ করেছে, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও সমঅধিকার নিয়ে বসবাস করছে।
বিজন কান্তি সরকার আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২-৭৪ এবং গত ১৬ বছরে আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্নমতাবলম্বী মুসলিমরা পর্যন্ত নানাভাবে নির্যাতিত ও নিগৃহীত হয়েছে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার নিজ দলের কর্মী-সন্ত্রাসী ছাড়া আর কাউকেই রেহাই দেয়নি। আওয়ামী সরকার ক্ষমতার জন্য দিল্লি তোষণ করে আর অপর দিকে দেশে হিন্দু নির্যাতন চালায়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্নমতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি, দেবোত্তর সম্পত্তির অধিকাংশ আওয়ামী কর্মীদের অবৈধ দখলে। মন্দির ভাঙচুর, নারী নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারী ছিল ৯৮ শতাংশ আওয়ামী নেতাকর্মী। বিজন কান্তি সরকার আরও বলেন, ভারত ও ভারতীয় জনগণের একাংশ আওয়ামী প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে প্রকৃত বন্ধু বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানিয়ে আসল শত্রু আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের প্রতি অন্ধ অনুসারী হয়েছে। ভারতীয় জনগণ, গণমাধ্যম ও দিল্লি সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নিন।
ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার বলেছেন, বাংলাদেশে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নাগরিকরা বিপদে পতিত হয় ও সর্বক্ষণ আতঙ্কিত থাকে। নানা আকারে প্রকারে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত হয়। অন্যান্য সরকারের সময়েই হিন্দু জনগণ শান্তিতে জীবন নির্বাহ করেছে, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও সমঅধিকার নিয়ে বসবাস করছে।
বিজন কান্তি সরকার বলেন, বাংলাদেশে যত মন্দির পোড়ানো হয়েছে তার ১০০ ভাগ পুড়িয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এমনকি আওয়ামী এমপিদের নেতৃত্বে ও ইন্ধনে হিন্দু বাড়ি-ঘর পুড়ানো হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে সংবাদমাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। ভারতীয় মিডিয়াও আওয়ামী অনৈতিক অপপ্রচারে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সম্পৃক্ত হয়। আওয়ামী লীগ কখনও কোনো নির্যাতন দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, বিচার করেনি।
তিনি বলেন, ভারত ও ভারতীয় জনগণের একাংশ আওয়ামী প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে প্রকৃত বন্ধু বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানিয়ে আসল শত্রু আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের প্রতি অন্ধ অনুসারী হয়েছে। ভারতীয় জনগণ, গণমাধ্যম ও দিল্লি সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নিন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৫ দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো:
১। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মিথ্যা প্রোপাগান্ডা প্রচার হতে ভারতের মিডিয়া এবং ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে বিরত রাখতে হবে।
২। কোনো ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীর ভিত্তিতে নয়, প্রতিবেশী দেশের মানুষের সাথে সম্পর্কের ভিত্তি হবে মানবতা।
৩। বাংলাদেশ-ভারত উভয়ই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। উভয় দেশের পারস্পরিক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।
৪। বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট দলের বা মতের প্রতি অযৌক্তিক আনুকূল্য প্রদর্শন হতে ভারত সরকারকে বিরত থাকতে হবে।
৫। বাংলাদেশের জনগণের সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে ভারতীয় সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের সকল অপকৌশল বন্ধ করতে হবে।
ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হিন্দুরা রুখে দাঁড়াবে: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের রংপুর জেলা সভাপতি বাবু উত্তম কুমার সাহা বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যম ও ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হিন্দুরা রুখে দাঁড়াবে। হিন্দুরা এ দেশে ভালো আছে। তাদের নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার ও ভারতীয় উগ্রবাদীদের বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন বিএনপি ও দলের নেতারা।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারা বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের মেতে উঠেছে ভারত। ও দেশের মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন ধরে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে এখানে নিরাপদে আছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তবে ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে এ দেশের হিন্দুরা রুখে দাঁড়াবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা। তারা বলেন, দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তার ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হয়ে ভারত সরকার তা বাস্তবায়ন করছে। এসব ষড়যন্ত্র দিয়ে এ দেশের মানুষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা যাবে না। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে যেভাবে হামলা করা হয়েছে তাতে তারা বাংলাদেশকে সতর্ক করতে চেয়েছে যেন তাদের গোলামি করা হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষ দিল্লির গোলামি আর করবে না। সমাবেশে বক্তব্য দেন- হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সহসভাপতি নিরঞ্জন রায়, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক তপন কুমার রায়, সদস্য ডা. নারায়নসহ আট উপজেলার নেতারা।