রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

জান্নাতে যাদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হবে

আহমাদ ইজাজ
  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে দুটি শর্ত প্রযোজ্য। (১) ঈমান আনা, (২) আমলে ছালেহ তথা সৎকর্ম সম্পাদন করা। এর পাশাপাশি হাদিস শরিফে এমন কিছু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। সেগুলো হলো
তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করা
প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে সব পাপাচার ও হারাম থেকে বিরত থেকে আল্লাহর আনুগত্য করার নাম হলো তাকওয়া।
যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আর যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্য আছে স্তরের ওপর স্তরবিশিষ্ট সুউচ্চ প্রাসাদ। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আর আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ২০)
সন্তান হারালে ধৈর্য ধারণ করা
সন্তান মারা যাওয়ার পর মাতা-পিতা যদি ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকেÍআল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘‘কোনো বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ।…আবার তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরি করো এবং তার নাম রাখো বাইতুল হামদ বা প্রশংসালয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০২১)
ঝগড়া-বিবাদ বর্জন করা
ঝগড়া আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় জিনিস। কেউ যদি ঝগড়া বর্জন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। যদিও তার জন্য সেই ঝগড়া করার অধিকার আছে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৯৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদে জড়ায় না, আমি তার জন্য মধ্য জান্নাতে একটি মহলের দায়িত্ব নিচ্ছি। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)
মিষ্ট ভাষায় কথা বলা এবং অন্যকে আহার করানো
নম্র ভাষায় কথা বলা এবং অপরকে আহার করানো এগুলো আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল। যে ব্যক্তি আমলগুলো করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতের প্রাসাদগুলো এমন হবে যে এর ভেতর থেকে বাইরের সব কিছু দেখা যাবে এবং বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এসব প্রাসাদ কাদের জন্য? তিনি বলেন, যারা উত্তম ও সুমধুর কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়, প্রায়ই রোজা রাখে এবং লোকেরা রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় জাগ্রত থেকে আল্লাহ তাআলার জন্য নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫২৭)
মসজিদ নির্মাণ করা
পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা মসজিদ। এর নির্মাণকাজে যারা সহযোগিতা করবে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩১৮)
সুন্নত নামাজ পড়া
ফরজ নামাজের আগে-পরে যেসব সুন্নত আছে, কেউ যদি নিয়মিত এই নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য মসজিদের ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় প্রতিদিন ফরজ ছাড়া আরো ১২ রাকাত নফল (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৫৮১)
ধৈর্যশীল হওয়া
ধৈর্যশীলতা নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দা জান্নাতে বিশেষ ধরনের অট্টালিকার মালিক হতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদানস্বরূপ জান্নাতের কক্ষ দেওয়া হবে এবং তাদের সেখানে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে অভিবাদন ও সালাম দ্বারা। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কতই না সুন্দর সেই আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল!’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৫-৭৬)
চার রাকাত চাশতের সালাত আদায় করা
নিয়মিত চার রাকাত চাশতের সালাত আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতের প্রাসাদের মালিক হওয়া যায়। এ সালাতকে আরবিতে ‘সালাতুদ দোহা’ বলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (সকালবেলা) চার রাকাত চাশতের সালাত আদায় করবে এবং জোহরের আগে চার রাকাত সালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হবে।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৬৩৪০)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com