সিরিয়ার জালিম প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। একথা জানিয়ে দেশটির বিরোধী নেতারা ঘোষণা দিয়েছে, সিরিয়া এখন মুক্ত। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে সংগ্রামরত গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) জানায়, ‘আমরা দামেস্ককে (সিরিয়ার রাজধানী) জালিম বাশার আল-আসাদের হাত থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।’ এর আগে বিবিসির খবরে বলা হয়, বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বিবিসির সরাসরি সম্প্রচারে (লাইভ) বলা হয়, বাশার আল-আসাদ কোথায় গেছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সিরিয়ার দুজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানায়, বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ করে দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর খবর দিয়ে সংগ্রামী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) পক্ষ থেকে সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এইচটিএস বলেছে, একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। বিরোধী নেতারা বলেছেন, বাশার আল-আসাদ পরিবারের অর্ধশতাব্দীর শাসনামলে
যাঁরা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বা কারাবন্দী হয়েছেন, তাঁরা এখন নিজ নিজ ঘরে ফিরতে পারবেন। এইচটিএস বলেছে, এটি হবে একটি নতুন সিরিয়া, যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবেন। এই সিরিয়ায় ন্যায়বিচারের জয় হবে। গতকাল রোববার বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে টেলিগ্রামে বলা হয়, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারে প্রবেশ করেছেন তাঁরা। তাঁরা কারাগারের ফটক খুলে দিয়েছেন। রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছেন সিরিয়ার বিপ্লবীদের। পালিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। ভেঙে ফেলা হচ্ছে আসাদের বাবা সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের ভাস্কর্য। ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই বছরই সিরিয়ার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। টানা দুই যুগ ধরে (২৪ বছর) তিনি সিরিয়া শাসন করেন। তাঁর আমলেই ২০১১ সালে সিরিয়ায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায় কয়েক বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হন বাশার আল-আসাদ। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। কয়েক বছর পর গত ২৭ নভেম্বর আসাদ বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করেন সিরিয়ার বিপ্লবীদের। হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এবারের আক্রমণের গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে সরকারি বাহিনী তাদের সামনে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
অভিযান শুরুর মাত্র ১২ দিনের মাথায় গতকাল রোববার তাঁরা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেন। গতকাল শনিবার দামেস্ক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে জেরমানা শহরতলির কেন্দ্রে থাকা হাফিজ আল-আসাদের একটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই আরেক শহরতলি দ্রুজের বাসিন্দা। তাঁরা সে সময় ফাঁকা গুলি ছোড়েন ও আসাদের পতন দাবি করেন। বিরোধীরা দামেস্কে প্রবেশ করেন। পরে জনতা দামেস্কে হাফিজের আরেকটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। এএফপি ওই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ছবি প্রকাশ করেছে।