আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। মানুষ ও জিন জাতির কল্যাণ, সফলতা এবং মানসিক শান্তি রয়েছে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যেই।
আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল সা: উপহারস্বরূপ আনলেন গোটা উম্মাহর জন্য। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এত গুরুত্ব রয়েছে যে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তা ত্যাগ করবে, সে কুফরি করার কারণে কাফের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুশুখুজুর (বিনয়ের) সাথে আদায় করবে, আল্লাহ তাকে বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করলে সগিরা গুনাহের কাফফারা আদায় হয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজান থেকে অপর রমজান কাফফারা হয় সেসব গুনাহের জন্য যা এদের মধ্যবর্তী সময়ে হয়, যখন কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচা যায়।’ (মুসলিম-৫৭৪) আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে রয়েছে বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, যা আদায় করলে মানুষের স্বাস্থ্য এবং মন দুটোই ফুরফুরে থাকে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফজিলত।
ফজরের নামাজের ফজিলত : ফজরের নামাজ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক ফজিলতপূর্ণ। এটি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রথম নামাজ এবং এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। ফজরের নামাজের কিছু ফজিলত হলো : ১. ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।’ (মুসলিম) ২. ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে ‘যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও।’ (আবু দাউদ) ৩. সরাসরি জান্নাতপ্রাপ্তি ‘যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে, জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হলো ফজর ও আসর।’ (বুখারি) ৪. রিজিকে বরকত আসবে- আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, সকাল বেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বণ্টন করা হয়।
জোহরের নামাজের ফজিলত : জোহরের নামাজ মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১. অল্প সময়ের মধ্যে অধিক সওয়াব : রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য দান করবেন।’ (মুসলিম) ২. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি : রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দ্বার খুলে দিবেন।’ (সহিহ মুসলিম) ৩. শয়তান থেকে রক্ষা : রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে শয়তান থেকে রক্ষা করবেন।’ (বুখারি)
আছরের নামাজের ফজিলত : নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আছরের নামাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর রয়েছে।’ (আহমদ) ২. একটি বিশেষ হাদিস : ইবনু মাযা থেকে বর্ণিত, নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আছরের নামাজ পড়বে, তার কাজগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে অঙ্গীকার হবে এবং সে তার দিনটি সফলভাবে অতিবাহিত করবে।’ (মুসলিম) ৩. আছরের নামাজে আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি : নবী সা: আরো বলেছেন, ‘আছরের নামাজ এমন একটি নামাজ, যার সময়ে আল্লাহ তায়ালা আসমানে তাঁর বিশেষ রহমতের নজর দেন।’ (বুখারি)
মাগরিব নামাজের ফজিলত : ১. মাগরিব নামাজের দোয়া ও ফজিলত : নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ পড়বে, তার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত এবং সে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম) ২. মাগরিব নামাজের পর দোয়ার গুরুত্ব : এক হাদিসে এসেছে, নবী সা: বলেছেন, ‘মাগরিব নামাজের পরে যে ব্যক্তি দুই রাকআত নামাজ পড়বে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে।’ (আহমদ) ৩. মাগরিবের বিশেষ দোয়ায় আল্লাহর রহমত : মাগরিবের নামাজের পর একটি বিশেষ দোয়া পাঠের ফজিলত সম্পর্কে নবী সা: বলেছেন, ‘মাগরিব নামাজের পর, আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন যারা ভয়ে এবং আশা নিয়ে তাঁর কাছে দোয়া করে।’ (বুখারি)
এশার নামাজের ফজিলত : ১. নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইশা নামাজ জামায়াতে পড়বে, সে যেন অর্ধেক রাত্রি নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজর এবং ইশা নামাজ জামাতে পড়বে, সে আল্লাহর রহমতে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম) ২. নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামায়াতে পড়বে, তার জন্য পরবর্তী দিন পর্যন্ত নিরাপত্তা থাকবে।’ (বুখারি) ৩. নবী সা: বলেন, ‘ইশার নামাজের সময়টি এমন যে, যদি কেউ এটা নিয়মিত পড়তে থাকে, আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করবেন, যদি সে নিষ্ঠা ও ঈমানের সাথে সালাত আদায় করে।’ (মুসলিম) । লেখক : শিক্ষার্থী, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা, নরসিংদী