‘ছবি তুলে আর লাভ কী? এবার বাগানগুলোতে গোলাপ নাই। বাজারে দাম ভালো থাকলেও আমাদের মতো কৃষকের লাভ কী? আমাদের বাগানে তো আর গোলাপ নাই।’
গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের ‘গোলাপ গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত বিরুলিয়ার শ্যামপুর এলাকার গোলাপ বাগানের ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন এভাবেই কথা বলেন।
হতাশা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দিনে দিনে সাভারে ফুল চাষ কমছে। ভালো ফলন না পেয়ে অনেক কৃষকই এখন গোলাপ চাষ ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন।’
সরেজমিন দেখা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপের বাগান। বাতাসে দুলছে গোলাপ। তবে কৃষকরা বলছেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন কম। ছত্রাকের আক্রমণে বেশিরভাগ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গাছের পাতা, ডাল, কুঁড়ি পচে যাচ্ছে। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও মিলছে না প্রতিকার। তার সঙ্গে অতি শীতে নষ্ট হচ্ছে ফুল।
ফুলচাষি আব্দুল জলিল জানান, লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ফুলও তিনি তুলতে পারেননি। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই সব পচে যাচ্ছে। স্বাভাবিক উৎপাদন হয়নি। বাগানে গোলাপের খরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বিরুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে ২৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয় বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ। এবছর বিরুলিয়ায় গোলাপ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮-১০ কোটি টাকার। অন্যান্য বছর ছিল ২০ থেকে ৪০ কোটি পর্যন্ত।
বাগানে ফুলের খরায় প্রভাব পড়েছে বাজারে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব ফুল। নবীনগর ফুল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রকারভেদে প্রতিপিস গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। যা আগের বছর ছিল ২০-৩০ টাকা।
নবীনগর ফুল ঘরের মালিক রিপন জানান, অন্যান্য বছর চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ফুল কেনা যেতো। যে কারণে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কাছে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফুল বিক্রি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এবছর চাষিরাই দাম বেশি নিচ্ছেন। বাগানে ফুল কম, তাই দাম বেশি।
আরেক বিক্রেতা ময়েজউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সাভারেই প্রচুর গোলাপ চাষ হয়। কিন্তু এবার গোলাপের বাগানে ফুল নেই। রোগে পচন ধরে ফুল নষ্ট হয়েছে। বাগানেই পাইকাররা প্রতিপিস ফুল কিনছেন ৩০-৫০ টাকা দরে। এবার ১৬ ডিসেম্বরেও গোলাপের দাম থাকবে চড়া।’
সাভার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, সাভারে গতবছর ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হলেও এবার হয়েছে ২৩০ হেক্টর জমিতে। প্রকৃতির বিরূপ আচরণে এবার গোলাপের উৎপাদন কিছুটা কম।