সুপার সাইক্লোন সিডরে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে বরগুনার বেতাগী উপজলার বিবিচিনির তাঁতী পল্লীর শিল্পীরা। চৌদ্দ বছর অতিবাহিত হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পাড়েনি তারা। সর্বস্ব হারিয়ে এখন চরম কষ্টের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। তবুও নতুন আশায় বুকবেঁধে তাকিয়ে আছে সরকারী সহায়তার দিকে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কি.মি. দুরে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ সংলগ্ন কারিকর পাড়া। ৬ শতাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এখানে তাঁত শিল্পের গোড়াপত্তন শুরু হয় ২শ বছর পূর্বে। পাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে সে সময় তাঁত বোনার খট খট শব্দে মানুষ থমকে দাঁড়াতো। রাজধানী শহর ঢাকা থেকে অত্যন্ত কষ্টে কাঁচামাল সংগ্রহের পর লুঙ্গী, চাঁদর, শাড়ী বিছানার কাপড় ও হরেক রকম গামছা বুনতো। তাঁতীরা জানান, তৈরীকৃত মালামাল নিয়ামতি, বেতাগী বন্দরে বিক্রির পাশাপাশি বরগুনাসহ ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হতো। স্থানীয় প্রবীনরা জানায়, এক সময় এখানে ৬৫টি পরিবারই তাঁত বুনতো পরে ৪০টি, সিডরের আগেও কয়েকটি পরিবার তাঁতের কাজে আত্ম নিয়োগ ছিল। বিদেশী পন্যের বাজার দখলে এর কদর কমে যাওয়ার পরেও এত দিনে সংগ্রাম করে তারা টিকে ছিল কিন্তু সিডরে তাদের সব শেষ, পরবর্তীতে আইলা। তাঁতের কাজ করে জীবন-যৌবন সব শেষ করেছেন এমনই একজন কারিকর নুর মোহাম্মদ(৭৫) জানান, চৌদ্দ বছর আগে সিডরের সময় ঘর সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে কিছু টাকা হাতে পেয়ে ছিলেন কিন্ত এ শিল্পে কোন ধরনের সহযোগীতা না মেলায় যারা কাজ করতে আগ্রহী তারাও পেশায় আসতে পারছেন না। তাঁতী সুফিয়া বেগম(৫৫) অভিযোগ করেন, উদাসীনতা ও প্ষ্ঠৃপোষকতা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই এ পেশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। হাতেম কারিকর(৮০) বলেন, বংশ পরম্পরায় এখানের তাঁতীরা এ পেশায় জড়িয়ে জীবিকা অর্জনের অবলম্বন হিসেবে বেছে নিলেও এখন তার কিছুই নেই। অর্থাভাবে ধরে রাখতে পারিনি। জানা যায়, তাঁতী পরিবার গুলোতে তাঁতের কাপড় বুনতে পারে না এর সংখ্যা খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তাঁতী পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়া, সংসারে সহায়তা ও অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তাঁতে কাপড় বুনা তাদের জাতিগত গুন হিসেবে দেখা হয়। বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রেও এ বিষয়কে যথেষ্ঠ গুরুত্ব ও প্রধান্য দেওয়া হয়। আগে পণ নিয়ে এদের বিয়ে হতো। তাঁতী পরিবারের নতুন বংশধর বেল্লাল কারিকর (৩০) জানান, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে তারা নারাজ। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারো তারা পেশায় ফিরতে চান। কাপড় ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আব্দুল খালেক জানান, আগে এখানকার উৎপাদিত পন্যর এলাকায় প্রচুর কদর ছিলো কিন্ত সংশিষ্টদের নজরের না থাকায় এ পেশার লোকজনের বিলুপ্তি ঘটেছে। বিবিচিনি ইউপি চেয়ারম্যান নওয়াব হোসেন নয়ন বলেন, এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগের অভাবে এখানকার তাঁতীরা পেশায় ফিরতে পারছেনা। পেশায় ফিরতে উদ্বুদ্ব করন, সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষন, তাঁত ও সুঁতা কেনার জন্য সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান, উৎপাদন ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন এবং এ শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্নমুিখ পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুহৃদ সালেহীন জানান, আয়বর্দ্ধক কমসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।