দিন যত পার হচ্ছে বুকের ধন সন্তান হৃদয়ের শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে বাবা মায়ের চোখের সামনেই তার জীবন প্রদীপ আজ নিভতে বসেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন হৃদয়ের শরীরে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে। কিন্ত গ্রুপে মিল না হওয়ায় পরিবারের একান্ত আপনজনদের কারও কিডনিও কাজে আসছে না। এখন ব্যয়বহুল কিডনি কেনার কোনো বিকল্প নেই। যে জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১২ লক্ষ টাকা। কিন্ত হতদরিদ্রতায় কোথায় পাবেন এতো টাকা এই নিয়ে ভাবনা পরিবারের সকলের। এখন মানুষের কাছে হাত পেতে ৮ হাজার টাকা খরচে সপ্তাহে ২ দিন ডাইলোসিস করে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বাবা মায়ের মনে সব সময় সঙ্কা প্রিয় সন্তানের জীবন প্রদীপ কখন জানি নিভে যায়। টাকার অভাবে চোখের সামনেই সন্তানকে হারিয়ে ফেলবেন কোন বাবা মায়ের পক্ষেই এটা সহ্য করা সম্ভব নয়। কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন বাবা মহিন্দ্রনাথ দাস। সাথে সাথে সন্তানের পাশে বসে অঝোরো কাঁদছেন মা কমলা দাসও। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহের মহারাজপুর ইউনিয়নের বড় খড়িখালি গ্রামে। হৃদয় দাস বিষয়খালী এস এম স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র। হৃদয়ের মা কমলা রানী দাস জানান, ৩ বছর আগে হঠাৎ প্রচন্ড জ্বরে তার ছেলে হৃদয় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় চিকিৎসক দেখানো হয়। ব্যবস্থাপত্র দিয়েও তারা হৃদয়ের জ¦র ও ব্লাড পেসার নিয়ন্ত্রন করতে পারেননি। সে সময়ে তার ক্রমেই অসুস্থতা বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে ধারদেনা ও একমাত্র সম্বল বসতবাড়ি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতের ভেলরে নিয়ে যান। তখন পরীক্ষা নিরীক্ষায় কিডনির কোন জটিলতা ধরা পড়েনি। সেখানে ১ মাস চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর ভালোই ছিল হৃদয়। কিন্ত ২ বছর পরে এখন আবার হৃদয় একইভাবে অসুস্থ হয়ে শরীর ফুলে পড়েছে। মাস খানেক আগে ধারদেনা করে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষায় চিকিৎসক নিশ্চিত হয়েছেন হৃদয়ের দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। তাকে বাঁচাতে হলে জরুরীভাবে কমপক্ষে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। যেখানে অনেক টাকা প্রয়োজন। সামর্থ না থাকায় এখন সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কোন পথ নেই। বাবা মহিন্দ্রনাথ দাস জানান, জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট ঢাকার বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান হৃদয়কে দেখিয়েছেন। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন হৃদয়ের দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। একটি কিডনিও প্রতিস্থাপন করতে পারলেও ছেলেটাকে বাঁচানো সম্ভব। তার আগে সপ্তাহে ২ দিন কিডনি ডাইলোসিস করে কিডনি সচল রাখতে হবে। এখন হৃদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিবেশিসহ স্বজনরা সাধ্যমত সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন। তাদের দেয়া আর্থিক সহযোগীতায় প্রতি সপ্তাহে যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালে ডাইলোসিস করানো হচ্ছে। কিন্ত টাকা না থাকায় ব্যয়বহুল কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা ভাবতেই পারছেন না। এখন পরিবারের সকলের চোখের পানিই হয়েছে শেষ সম্বল। এমন অবস্থায় সন্তানকে বাঁচাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের হৃদয়বান মানুষের সহযোগীতা কামনা করেছেন। হৃদয় জানায়,আমার চিকিৎসায় বাবা মা তাদের মাথা গোজার ভিটেবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে আজ সর্বস্ব হারিয়েছেন। এ অবস্থায় আমি মানুষের উদারতায় বাঁচতে চায়। হৃদয়ের আত্বীয় মানিক কুমার জানান, হৃদয়ের বাবা মনিন্দ্রনাথ দাস একজন গ্রাম পুলিশ। তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। ইতোমধ্যে ছেলে হৃদয়ের চিকিৎসায় সহায় সম্বল সব হারিয়েছেন। বসতভিটে বিক্রি করে দিয়েছেন তারপরও বর্তমান বাড়ির মালিক মানবিক কারনে তাদেরকে আপাতত থাকতে দিচ্ছেন। কিডনির জন্য ১২ লাখ টাকা জোগাড়ের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি। মহারাজপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, ৯ম শ্রেণীর ছাত্র হৃদয়ের পরিবার খুবই দরিদ্র। তার বাবা মহিন্দ্রনাথ দাস অল্প বেতনের গ্রাম পুলিশে চাকুরী করেন। তিনি ছেলের চিকিৎসায় এখন সব হারিয়েছেন। বর্তমানে তারাসহ এলাকার মানুষও সাহায্য করছেন। কিন্ত কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা জোগাড় করা পরিবারটির জন্য একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। মৃত্যুর পথের পথযাত্রী সন্তানকে এখন টাকার অভাবে হারাতে হবে এমন ভাবনাটা যে কোনো বাবা মায়ের জন্যই অত্যন্ত কষ্টদায়ক ব্যাপার।