এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) দশ দিনব্যাপী বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) আজ শনিবার শেষ হয়েছে। গত ২ থেকে ১২ নভেম্বর এই চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়। তবে ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থাকায় ১২ নভেম্বর অঞ্চল ১, অঞ্চল ৬ ও অঞ্চল ৮-এ অভিযান স্থগিত ছিল। আজ শনিবার এই তিনটি অঞ্চলে দশম দিনের চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়।
চিরুনি অভিযানে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ৮৮৩টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। ডিএনসিসির মহাখালী অঞ্চলে (অঞ্চল-৩) সর্বোচ্চ সংখ্যক স্থাপনায় (৩৩৫টি) এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। অভিযানে উত্তরা অঞ্চলে (অঞ্চল-১) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৫টি স্থাপনায়, কাওরানবাজার অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৯টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। চিরুনি অভিযানে মিরপুর ২-এ (অঞ্চল-২) ৬০টি, মিরপুর ১০-এ (অঞ্চল-৪) ৪০টি, হরিরামপুরে (অঞ্চল-৬) ৬৮টি, দক্ষিণখানে (অঞ্চল-৭) ৩০টি, উত্তরখানে (অঞ্চল-৮) ১১টি, ভাটারায় (অঞ্চল-৯) ৪৯টি ও সাতারকুল অঞ্চলে (অঞ্চল-১০) ৬টি স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থানগুলো হলো, স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে, পানির মিটার, ফুলের টব, পানির ট্যাংকি, গ্যারেজ, ভাঙা মগ, রঙের কৌটা, ডাবের খোসা, ফেলে দেয়া দইয়ের পাত্র, প্লাস্টিকের বাটি, পরিত্যক্ত বাসন, দুই বাড়ির মাঝের ফাঁকা অংশ, পরিত্যক্ত বালতি, নির্মাণাধীন বাড়ি, পানির চৌবাচ্চা, টায়ার, ডোবা ইত্যাদি। এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থাপনাগুলোর সামনে ‘এই বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে’ লেখা স্টিকার লাগানো হয়েছে।
এছাড়া ৮২ হাজার ৭২টি স্থাপনায় ময়লা-আবর্জনা ও জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এই স্থাপনাগুলোর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় এবং জমে থাকা পানিতে মশার কীটনাশক প্রয়োগ করে জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া হয়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এবং অন্যান্য অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এই দশ দিনে মোট ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে পানি জমে থাকা বিভিন্ন স্থান, জলাশয়, ডোবা, নর্দমায় যুক্তরাজ্য থেকে সদ্য আমদানিকৃত চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড নোভালিউরন প্রয়োগ করা হয়। এই কীটনাশক যেখানে প্রয়োগ করা হয় সেখানে লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হয় না এবং ৯০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
উত্তরা অঞ্চলে (অঞ্চল-১) মোট ১০ হাজার ৬৯০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৪৫টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৯ হাজার ১৫০টি বাড়ি ও স্থাপনায় জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এ অঞ্চলের আঞ্চলিক নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়নের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মিরপুর-২ অঞ্চলে (অঞ্চল-২) মোট ২৭ হাজার ১৫১টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬০টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৩ হাজার ৬৩৩টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এ অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম শফিউল আজমের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মহাখালী অঞ্চলে (অঞ্চল-৩) মোট ১৬ হাজার ১৪৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩৩৫টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১১ হাজার ১৬০টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় দশ দিনে আঞ্চলিক নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল বাকীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মোট ৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মিরপুর-১০ অঞ্চলে (অঞ্চল-৪) মোট ১৬ হাজার ৫১৩টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪০টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৯ হাজার ৬৬৮টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এ অঞ্চলে নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
কারওয়ান বাজার অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) মোট ২২ হাজার ৩৩৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৩৯টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ১৮ হাজার ২৩৩টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এবং অন্যান্য অপরাধের এ অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
হরিরামপুর অঞ্চলে (অঞ্চল-৬) মোট ১৩ হাজার ৬৭৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬৮টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ১০ হাজার ১২১টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
দক্ষিণখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৭) মোট ৭ হাজার ৮০৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩০টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৬ হাজার ২৮২টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এ অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
উত্তরখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৮) মোট ৭ হাজার ২৫৯টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১১টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৪ হাজার ৭৪৭টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এই এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবেদ আলীর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও কোথাও জরিমানা করা হয়নি। তবে এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থাপনার মালিকদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ভাটারা অঞ্চলে (অঞ্চল-৯) মোট ৫ হাজার ১১১টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৩ হাজার ৩২৬টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় প্রধান ভা-ার ও ক্রয় কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সগীর হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। সাতারকুল অঞ্চলে (অঞ্চল-১০) মোট ৭ হাজার ৩৭৯টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৫ হাজার ৭৫৬টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও কোনো জরিমানা করা হয়নি। তবে এডিসের লার্ভা পাওয়া স্থাপনার মালিকদেরকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪ হাজার ২৬০টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। চিরুনি অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট ৮১ লাখ ১১০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।