শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন

শীত-কুয়াশা-শিশিরে হেমন্ত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০

ঘুম ভাঙতেই মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো, ‘শীত মানে আনন্দ, শীত মানে খুশি, শীতের পিঠার দাওয়াত না পেলে মারবো এক ঘুষি।’ শীতের আগমন উপলক্ষে এক বন্ধু মজা করেই এমন ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে। সাধারণত হেমন্ত থেকেই আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের সকাল। কিন্তু, প্রকৃতির সচরাচর নিয়ম ভেঙ্গে এবার একটু আগেই ধরায় শীতের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কুয়াশার আগমন ঘটেছে। তাপমাত্রাও রেকর্ড হারে কমছে প্রতিনিয়ত। ঘাসের ডগায় লেগে থাকা বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির তা স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে। সেই ক্ষুদেবার্তার ন্যায় সত্যিই যেন আনন্দের ধুম পড়ে যায় শীতে। ভোরে ঘুম ভাঙতেই খেঁজুরের রস, ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠা, পাটালি গুড়সহ নানা বর্ণের নকশি পিঠা-পুলির উৎসব লেগে যায়। উৎসবের পাশাপাশি ছোটবেলায় শীত এলেই ধুম পড়ে যেত ‘শীতের সকাল’ রচনা মুখস্ত করার। কারণ, সব বার্ষিক পরীক্ষাই শীতকালে হতো। শীতের সকালে এক চিমটি রোদ যেন স্বর্গের ছোঁয়া জায়গায় মনের কোণে। শীতের সকালে রোদ পোহানোর আনন্দটাই অন্যরকম। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে গায়ে লেপ/চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি আর অপেক্ষা কখন সূর্যি মামা হাসিমুখ নিয়ে দেখা দেবে পূর্বাকাশে।
সূর্য পূর্বাকাশে উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কম্বল ছেড়ে ভোঁ দৌড় রোদের দিকে। মনে হয় দীর্ঘ দিন পরে কারো দেখা মিললো। বিশেষ করে যারা উত্তরবঙ্গে বসবাস করেন, শীতের দিনে সূর্য তাদের কাছে যেন ‘অমাবস্যার চাঁদ।’ সূর্য উঠলেই নানা পরিকল্পনা কাজ করতে থাকে গ্রামীণ রমণীদের মনে। অনেকে শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে সারাদিন উঠোনে আগুনের সামনে বসে আগুন পোহান। কথায় আছে, ‘কারো পৌষ মাস, আবার কারো সর্বনাশ।’ শীত কারো জন্য আশির্বাদ আবার কারো জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যারা ধনী তাদের কাছে এই শীত উৎসবমুখর হলেও দরিদ্রদের কাছে শীত সাপের মতো। শীত আসলেই জ্যাকেট, সোয়েটার, হুডির দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। ধনী ব্যক্তিদের কেনাকাটায় উৎসব লেগে পড়ে। লেটেস্ট মডেলের সোয়েটার যেন কিনতেই হবে। এদিকে দরিদ্ররা পরিবারের জন্য একটি করে শীতবস্ত্র কেনার টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খায়। অনেকে আবার এই শীতে সারারাত না ঘুমিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আগুনের সামনে বসে থাকেন।
শীতে যারা কষ্টে ভোগেন, তারা অধিকাংশই আমাদের দেশের কৃষক। তাদের আমরা এ দেশের প্রাণ বলে থাকি। তারা তাদের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তাদের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরীবদের দুর্দশা রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের ভাষায়, ‘রোদে পুড়ে খাইটা মরিরে ভাই পাছায় জোটেনা ত্যানা, বৌয়ের পৈছা বিকায় তবু ছৈলা পায়না দানা।’ আমাদের দেশে এ কষ্টটা বেশি করেন কৃষকেরা। এছাড়াও যারা রেল লাইনের পাশের বস্তিতে বসবাস করেন, তাদের অবস্থাতো আরও দুর্বিসহ। তাদের এই শীতে আনন্দ তো দূরের কথা, শীতের একটি কাপড় পর্যন্ত জোটে না। লেখক: আজাহার ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com