কেউ রাস্তার পাশে কেউ মাটিতে বসে,কেউ বারান্দায় কিংবা বাড়ির আঙিনায়, কেউবা বাড়ি পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে আপন মনে তৈরি করছেন বাঁশের চাটাই। এ কাজের ফাঁকে কেউ মোবাইলে গান শুনছেন কেউ বা আবার মুখে পান চিবিয়ে মেতেছেন খোস গল্পে।এভাবে কখন যে সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় তা বুজার কোন উপায় নেই। এভাবে এ কথাগুলো বললেন নীলফামারী জলঢাকা পৌরসভার মনোয়ারা বেগম(৩০)। মনোয়ারা বেগম পেশায় একজন গৃহিণী। তার বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জ ইউনিয়ন গদা আজিব গ্রামে। তিনি বিবাহিত তার স্বামীর নাম মুসফিকুর রহমান বাবু(৩৫)। তার স্বামীর বাড়ি পৌরসভার ৫নং ওযাড বগুলাগাড়ি বারোঘড়ি পাড়ায়। তিনি তার স্বামীর বাড়িতে থাকেন। বৈবাহিক সূত্রে মনোয়ারা বেগমের এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। মনোয়ারা বেগম বাবার বাড়িতে থাকাকালীন এ কাজ জানতেন না।স্বামীর বাড়িতে এসেই এ কাজ শিখেছেন। সংসারের পাশাপাশি কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব বাঁশের পণ্য তৈরি করে স্বামীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন। স্বামী মুসফিকুর বাঁশ দিয়ে পাতি তুলে আর পরিবারের সবাই মিলে চাটাই বানায়। এভাবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টি বাঁশের চাটাই তৈরি করতে পারেন তারা। যার বাজার মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ৪ টি চাটাই তৈরি করতে পাকাপোক্ত কাঁচা দুইটি বাঁশের প্রয়োজন হয়। যার বাজার মুল্য ২০০ টাকা। এ উপকরণের খরচ বাদ দিলে প্রতিদিন তাদের ইনকাম হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই তাদের কোন রকম সংসার চলে যায়। এ বিষয়ে সরেজমিনে মুসফিকুর জানান,বাপ দাদার পৈত্রিক সুত্রে তিনি এই পেশায় নিয়োজিত আছেন। নিজেদের তেমন বাঁশ ঝাড় নেই বাজার থেকে বাঁশ কিনে আনতে হয়। তাছাড়া হামার তো আর কোন কাজ জানা নেই,হামা পাতি তুলি দেই,হামার পরিবারের সবাই মিলে বাঁশের চাটাই বানায়। তাছাড়া এ গ্রামের বেশ কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান,এ গ্রামের ৩০ থেকে ৪০ টি পরিবার এ বাঁশের চাটাই তৈরির কাজ জড়িত আছেন। বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরির শিল্প এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষেরই একমাত্র পেশা। এখানে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বাচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এ কাজে বাড়ির বউ-ঝি থেকে শুরু করে, স্কুল, কলেজের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়দের কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। তৈরিকৃত এসব বাঁশের চাটাই পরবর্তীতে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। বছরের পর বছর তারা বাঁশ দিয়ে এ চাটাই তৈরি করেন। অপর দিকে এ গ্রামের চাটাই কারিগরা জানান,বর্তমানে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাটাই তৈরিতে খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। সেই সঙ্গে অর্থের অভাবে তারা চাহিদা মাফিক বাঁশ কিনতে পারছেন না। সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে যদি তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করা হয় তাহলে এ চাটাই শিল্প রক্ষা ও প্রসার করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তারা।