সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ব্যক্তিমালিকানা জায়গা দখল করে মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেডটি নির্মাণ করছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ব্যয়ভার ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এদিকে একাধিক মামলা করেও জায়গার দখল ও মাছের সেড নির্মাণ আটকাতে পারছেননা ভুক্তভোগীরা। তারা জানিয়েছেন, মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের মহিষলুটী হাটের পেরিফেরির কোনো জায়গা নেই। রেকর্ড সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ ইউনিয়নের গোয়াল গ্রামের জাহের প্রামানিকের আরএস রেকর্ড ১৬৯ খতিয়ান মুলে ৬২২ দাগে ৬৩ শতক জায়গা ছিল নওগাঁ সড়কের পাশে। জাহের প্রামানিক মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হোন তার ছেলে নুর হোসেন। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে ৬২১৯ নং এ্যওয়াজ নামা দলিল মুলে তার স্ত্রী উম্মে কুলছুমকে দেন। ২০০৮ সালের জুন মাসের ১০ তারিখে উম্মে কুলছুম ১৮৪৪ নং দানপত্র দলিল মুলে ১৯ শতক জায়গা মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিমিটেডে দান করেন। ৬২১৯ নং এ্যওয়াজ নামা দলিল মুলে আরো সারে ১৪ শতক এ্যওয়াজ করেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে। পরে মহিষলুটী মাছের হাট ১৯ শতক জায়গার ৬ শতক ফেরৎ দেন উম্মে কুলছুমকে। আবার ৬২১৯ নং এ্যওয়াজ নামা দলিল মুলে ৩ শতক জায়গা মহিষলুটী মাছের হাটে দেন। দলিল নং ১৪৩৯। তিন দলিলের জায়গা মিলে মহিষলুটী মাছের হাটের জায়গার পরিমাণ হয় ৩০ শতক। বাকি ৩৩ শতক উম্মে কুলছুমের নামে রয়ে যায়। উম্মে কুলছুম মারা যাওয়ার পর তার ২ ছেলে আব্দুল কুদ্দুস ও হাফিজুর, ৬ মেয়ে নাজমা খাতুন, হালিমা খাতুন, নাছিমা খাতুন, ছালমা খাতুন, আমিনা খাতুন ও হাসিনা খাতুন ওয়ারিশ সূত্রে জায়গার মালিক হোন। পরে তারা খাজনা খারিজ করে নেন। ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুস, হাফিজুর, নাজমা খাতুন, হালিমা খাতুন, নাছিমা খাতুন, ছালমা খাতুন, আমিনা খাতুন ও হাসিনা খাতুন বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসের ১২ তারিখ সকাল ৯ টার দিকে মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেড মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণের জন্য আমাদের ১৯ শতক জয়গার দখল নেন ও একটি হাফ ওয়ালের ১৮ হাত ঘর ভেঙে দেন। নিরুপায় হয়ে মোকাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সিরাজগঞ্জে ১৪৪ ধারার মামলা করেন উম্মে কুলছুমের নাতি রুবেল আহাম্মেদ। মামলা নং ৩০৬। ২০২৪ সালের জুন মাসের ৫ তারিখে উম্মে কুলছুমের বড় ছেলে আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দেওয়ানী আদালতে উচ্ছেদ মামলা করেন। মামলা নং ৭২/২৪। অপরদিকে মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেড দাবি করেন, নুর হোসেনের অন্যান্য ওয়ারিশরা মৎস্য আড়তের নামে জায়গা দলিল করে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে নুর হোসেন বাটোয়ারা মামলা করেন সিরাজগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে। মামলা নং ১৪৮। তারপর দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ নং আদেশের ১ নং নিয়মের অধিনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হলে আদালত ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা প্রকৌশলী, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলকে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও আদালতে কোনো জবাব দেননি। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, জাহের আলী মারা যাওয়ার পর তার নামে আরএস রেকর্ডে সম্পত্তি রয়ে যায় ১৪৮৯.৫ শতক। ১৮৬ শতক জায়গা ওয়ারিশ সূত্রে পায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী। জাহের প্রামানিকের দুই ছেলে নুর হোসেন ও শাহালম পায় ২৬০.৭ শতক। তার ৬ মেয়ে পায় ১৩০.৩৫ শতক। তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, ১৪৪ ধারা মামলা হওয়ায় মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণ স্থগিত রাখতে বলা হয়। ঐ জায়গায় উভয়পক্ষকে যেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তারা না মানলে আদালতের সরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আজম আলী বলেন, আদালত থেকে মাছের হাটে সেড নিমার্ণের জায়গার রায় পেয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজুলল হক বলেন, মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতিসহ স্থানীয়রা যেখানে জায়গা দিয়েছেন, সেখানেই মাছের হাটের সেড নির্মাণ করা হচ্ছে। কারণ দর্শানোর জবাব শিগ্রই দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, এসিল্যান্ড এক মাসের প্রশিক্ষণে রয়েছেন। মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণের জায়গার বিষয়ে আদালত যে রায় দেবেন, সেভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলাম দৈনিক খবররপত্রকে বলেন, অন্যের জায়গাতে এলজিইডির কাজ করার প্রশ্নই আসেনা। প্রয়োজনে মহিষলুটি হাটের মাছের সেড ছোট করে নির্মাণ করা হবে।