মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে বদলে যেতে পারে অবহেলিত চরাঞ্চলবাসীর জনজীবন গাউসিয়া কমিটি নিরামিশপাড়া শাখার ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা নড়াইলে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন টেক্সাস বিএনপির সেক্রেটারি জহিরুল ইসলাম কাপাসিয়া রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ফুলপুরে ভিক্ষুক পুনর্বাসন সহায়তা হারাগাছ হাসপাতালের মসজিদের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন কোম্পানীগঞ্জে এস,এ,এইচ কনস্ট্রাকশনে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন প্রতিযশা শিক্ষক প্রফেসর আশরাফ আলী আর নেই শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র উপহার প্রদান ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা

ঝুঁকির মুখে সুইসগেট, সেতু, চা-বাগানের প্লান্টেশন এলাকা

এহসান বিন মুজাহির (শ্রীমঙ্গল) মৌলভীবাজার
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামে অবস্থিত বড়ছড়া থেকে প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকার সাতটি গ্রামের ২০ থেকে ২৫ হাজার কৃষকদের চাষাবাদের জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুইসগেট, সরকারি সেতু, চা বাগানের প্লান্টেশন টিলার অংশবিশেষ। ইতোমধ্যে সুইসগেটটির পেছন দিকে ছড়া অনেকটাই নিচের দিকে দেবে গেছে এবং দিনারপুর চা বাগানের একটি সেকশনের কিছু অংশ ছড়াগর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া দিনরাত ট্রাক ও ট্র্যাক্টর দিয়ে বালু পরিবহণের কারনে গ্রাম্য আভ্যন্তরীণ সড়ক ও চা বাগানের মেঠোপথ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। এ ব্যাপারে স্থানীয় বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হলে উচ্চ আদালত ওই ছড়া থেকে বালু উত্তোলনে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালুখেকো চক্রটি বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মছদ্দর আলী গত ২৬ ডিসেম্বর খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক, বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরচিালক, দ্বিতীয় ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন সেক্টর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে লিখিতভাবে আবেদন করার পরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। জানা যায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রের মূল হোতা মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা জুয়েল মিয়ার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামলাসহ একাধিক মামলা থাকার পরও এলাকায় সে দাপটের সাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা দক্ষিণ পাচাউন গ্রামের বাসিন্দা ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো. মনু মিয়ার ছেলে। গতকাল সরেজমিন মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত বড়ছড়ার বিভিন্ন অংশে বালু উত্তোলনপূর্বক বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখা হয়েছে। গ্রাম্য আভ্যন্তরীণ মেঠোপথে বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক ও ট্যাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াতের কারনে সড়কটি মারাত্মকভাবে ভংগুর হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক বড়ছড়ার উপর নির্মিত সুইসগেটের পেছনের অংশ ছড়া অনেকটাই দেবে গেছে। এছাড়া দিনারপুর চা বাগানের একটি টিলার চা প্লান্টেশন এলাকা ছড়ায় নিমজ্জিত ও বাগানের রাস্তায় সরকারি পাকা সেতু ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও সরকারি স্থাপনার ক্ষতির ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক শফিক মিয়া বলেন, সরকারি অর্থায়নে নির্মিত বড়ছড়া সুইসগেট আমাদের সাতটি গ্রামের প্রাণ। আজ এটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই সুইসগেটের পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের এলাকার হাজার-হাজার হেক্টর জমি ফসল ফলিয়ে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি। আওয়ামী লীগের কিছু লোকেরা আমাদের এই ছড়ার মধ্যে বালু তোলার ফলে সুইসগেটটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এলাকার ঘর-বাড়ি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের বাঁচান, আমাদের এলাকা বাঁচান। একই গ্রামের কৃষক ইসহাক মিয়া বলেন, সুইসগেট যদি নষ্ট হয় তাহলে এটি আর আমরারে (আমাদেরকে) কে দিবো? সরকার একবার দিছে। আরতো দিতো (দেবে) না। বালু তুইল্লা (উত্তোলন) আমরার (আমাদের) বাড়িঘরও একবারে শেষ। বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শেখ সবুজ আলম বলেন, ‘২০০৬-০৭ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ এই এলাকার সাতটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার মানুষের শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির উৎস হিসেবে এই বড়ছড়া সুইসগেটটি নির্মাণ করে। এর ফলে এই এলাকায় প্রান্তিক কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে সেখানে চাষাবাদ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অথচ এই বালু দস্যুদের কারনে আমরা আজ ক্ষতিগ্রস্থ। ২০১৭ সাল থেকে আমরা এই ছড়া থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য সরকারের উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন মহলে লেখালেখি করে আসছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারনে উনারা আমাদের সেই দাবিটি আমলে নেয়নি। আওয়ামী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা দীর্ঘদিন যাবত বালু তুলে যাচ্ছে। আমাদের সুইসগেটটি যেকোন সময় উল্টে যেতে পারে। এটি উল্টে গেলে ২০-২৫ হাজার কৃষক চাষাবাদ করতে পারবে না। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাবে। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানাচ্ছি। বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোহাম্মদ মছদ্দর আলী বলেন, ‘এলজিইডি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ২০১৯ সালে অফিস থেকে আমাদের জানান, বালু উত্তোলন বন্ধ করতে না পারলে সুইসগেটটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। আপনারা এলাকাবাসী সোচ্ছার হন। কিন্তু বিগত দিনে আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারনে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারিনি। যুবলীগ নেতা জুয়েল, জাহাঙ্গির, শাহজাহান প্রমুখরা এখনো আমাদের হুমকি দেয়। তারা আমাদের সেক্রেটারিকে হুমকি দিয়ে বলে হাইকোর্টে রিট করায় তার যদি বালু তোলা বন্ধ হয় তাহলে ১৬ লাখ টাকা তাকে দেওয়া লাগব। আমরা এখনো আওয়ামী লীগের বালু দস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় রয়েছি। ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) জাকির হোসেন বলেন, এই এলাকায় প্রচুর বালু উত্তোলন হবার ফলে এলাকার সুইসগেটসহ সরকারি নানা স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া এলাকায় সহ¯্রাধিক স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী আছে। গ্রাম্য ছোট সড়কে বড় বড় ট্রাক ঢোকানোর ফলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে পারে। আর অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে সুইসগেটটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি ভেঙ্গে গেলে এলাকার প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কৃষকের কপালে দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে। দিনারপুর চা বাগানের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক মীর জহির উদ্দিন বাবর বলেন, আমাদের বাগানের সাইড দিয়ে বালু দস্যুরা নিয়মিত বালু তোলে। আমরা বাগানের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বাগানের রাস্তার উপর সরকারি ব্রিজটিও যেকোন সময় বসে যেতে পারে। অবৈধভাবে বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় বালু তোলার ফলে আমাদের চা বাগানের একটি সেকশনের প্রায় ২০ শতাংশ ছড়ার মধ্যে চলে গেছে। এই ছড়ায় একটি সুইসগেট আছে, যা বালু তোলার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ। এটি বারবার রিপিয়ারিং করার পরও ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা চাইছি সরকার বালু উত্তোলন বন্ধ করার পদক্ষেপ নেক। নতুবা সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যাবে না। এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়া বলেন, আমি ২ বছরের জন্য বড়ছড়া লিজ এনেছি। বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মছদ্দর আলী আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছে। আমি তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি। তারপরও আমার সরকারিভাবে লিজকৃত বালুর ঘাট তারা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি একাধিক মামলার কারনে এখন আত্মগোপনে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, বালুর লিজ খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়। আমার কাছে হাইকোর্টে রিটকারীরা রিটের একটা ইন্টেরিম অর্ডার এর কাগজ নিয়ে এসেছেন। এবিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত করার জন্য এসিল্যান্ডকে বলেছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com