বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পাঁচবিবি পৌরসভার প্রধান ড্রেনটি দীর্ঘ ২৫ বছরেও সংস্কার হয়নি: দুর্ভোগে এলাকাবাসী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উলিপুর প্রেসক্লাবের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত জগন্নাথপুর থানার ওসি রুহুল আমীন জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত চকরিয়ায় মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধে সড়ক পুলিশের মাইকিং কালীগঞ্জ পৌরসভায় টিসিবি-র পণ্য বিতরণে অব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক অনিয়ম রূপগঞ্জে টায়ারস কারখানায় আগুনে ১৮২জন নিখোঁজ, স্বজনদের থানায় অবস্থান চরফ্যাসনের চরাঞ্চলে মহিষ পালনে সংকট ও সম্ভাবনা চকরিয়ার বদরখালীতে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আটক ৮ পটুয়াখালীতে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পিরোজপুরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ

কেন ট্রুডোর উত্তরসূরি হিসেবে যাদের নাম আসছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। কয়েক মাস ধরে কানাডার রাজনীতিতে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন ট্রুডো। সেটা হলো ‘আপনি (ট্রুডো) কি পদত্যাগ করবেন?’। এক দশক আগে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন এই নেতা। অথচ সোমবার মেয়াদ শেষ না করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
দলের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে এই সিদ্ধান্ত নেন ট্রুডো। জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল লিবারেল পার্টির পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এর দলনেতার পদও ছাড়ছেন তিনি। দলে অন্তর্বিরোধের জেরে এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হলেও এর নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে দাবি করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
ট্রুডো অটোয়ার রিডো কটেজে তার বাসভবন থেকে বলেছেন, প্রত্যেক সকালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চোখ খোলার পর আমি কানাডিয়ানদের উদারতা এবং সংকল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একজন উত্তরসূরি পাওয়া গেলে তিনি সরে দাঁড়াবেন।
৫৩ বছর বয়সী ট্রুডো ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন। ২০১৯ ও ২০২১ সালে লিবারেলদের জয়ের দিকে নিয়ে যান। ক্যারিশম্যাটিক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর জ্যেষ্ঠ পুত্র, যিনি ২০০০ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জাস্টিন ট্রুডো স্নোবোর্ড প্রশিক্ষক, বারটেন্ডার, বাউন্সার এবং শিক্ষক হিসাবে কাজ করার পরে রাজনীতিতে আসেন। তিনি দলগত নিয়োগের অবসান এবং একটি স্বাধীন, যোগ্যতা-ভিত্তিক নির্বাচন প্রক্রিয়া তৈরি করে সিনেট সিস্টেমকে স্বচ্ছ করার অঙ্গীকার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম দুই মেয়াদে কানাডার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে কার্বন কর প্রবর্তন করেছিলেন।
গাঁজার ব্যবহারকে বৈধতা দেয়া, নিখোঁজ ও খুন হওয়া আদিবাসী নারীদের বিষয়ে জনসাধারণের তদন্ত কমিটি গঠন এবং চিকিৎসা সহায়তায় আত্মহত্যার অনুমতি সংক্রান্ত আইন পাস করে নজরে আসেন ট্রুডো। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ট্রুডোকে বলতে শোনা যায়, মধ্যবিত্তের হয়ে লড়াই করার জন্য ২০১৫ সালে আমরা নির্বাচিত হয়েছিলাম এবং বিগত বছরগুলোতে আমরা ঠিক সেটাই করেছি। আমরা তাদের কর কমিয়েছি, আমরা পরিবারগুলোর সুবিধা বাড়িয়েছি, আমরা নিশ্চিত করেছি যে, অর্থনীতি শুধুমাত্র কয়েকজনের জন্য নয়, সবার জন্য।’ সোমবার কানাডার সংবাদপত্র ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল’-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, নয় বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীত্ব সামলানোর পরে সরকার এবং দলের দায়িত্ব ছাড়তে চলেছেন ট্রুডো। আসন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের আঁচ পেয়েই তিনিও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রুডো ইস্তফার ঘোষণা করেন। লিবারেল পার্টির প্রভাবশালী নেতা তথা প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডর সঙ্গে সংঘাতও ট্রুডোর ইস্তফার অনুঘটক বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রুডোর সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই তিন সপ্তাহ আগে ইস্তফা দিয়েছিলেন ফ্রিল্যান্ড। ভোটারদের হতাশা ক্রমাগত বাড়তে থাকার পরও লিবারেল পার্টির নেতার পদটি আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিলেন ট্রুডো। বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বৈরিতা ক্রমাগত বাড়ছে। এমনকি নিজেকে ‘যোদ্ধা’ বলা ট্রুডো নিজ দলের ভেতরেই বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। নিজ দলের সদস্যদের অনেকে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ট্রুডো সম্বন্ধে টেসলা কর্ণধার জানিয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনেই নতুন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে কানাডা। ট্রুডো আর ফিরবেন না। নিজের মালিকানাধীন এক্স হ্যান্ডলে এ কথা লিখেছিলেন তিনি। সেই ভবিষ্যদ্বাণীও সত্যি হল। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে জড়িয়ে পড়েছিলেন ট্রুডো। প্রশ্ন উঠছিল তার ভারতবিরোধী মনোভাব নিয়েও। তার সময়ে নয়াদিল্লি-অটোয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরার সূত্রপাত খলিস্তানি নেতা নিজ্জরের হত্যাকা- থেকে। খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার বৃটিশ কলাম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাকে হত্যা করা হয়। নিজ্জর হত্যাকা-ে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। বস্তুত, তার পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে।
ট্রুডোর ইস্তফায় ট্রাম্পের ‘হাত’ও দেখছেন অনেকে। দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার কথা শোনা গিয়েছে ট্রাম্পের গলায়। ট্রুডো ইস্তফা দেয়ার কথা ঘোষণার পর সেই মন্তব্য আবার করেন ট্রাম্প।
উত্তরসূরি হিসেবে যাদের নাম সামনে আসছে
ঘোষণা অনুযায়ী, নিজ দল লিবারেল পার্টি তাদের নতুন নেতা বেছে না হওয়া পর্যন্ত ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। দলীয়ভাবেই নতুন নেতা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। নতুন নেতা খুঁজতে দলকে সময় দিতে ট্রুডো আগামী মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত রাখার কথা বলেছেন। এর মধ্যেই লিবারেল পার্টি প্রধানের জন্য কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী নাম আলোচনায় আসছে।
মার্ক কার্নি: একজন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার যিনি ব্যাংক অব কানাডার প্রাক্তন গভর্নর হিসাবে কাজ করেছিলেন, তিনি অর্থনৈতিক বিষয়ে লিবারেল সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেন: ২০২১ সাল থেকে উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্পমন্ত্রী এবং এর আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড: তিনি ইউনিভার্সিটি-রোজেডেল, অন্টারিওর এমপি এবং সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী। ট্রুডোর পর একজন বিশ্বাসযোগ্য এবং স্থিতিশীল বিকল্প হিসাবে তার কথাও ভাবা হচ্ছে। লিবারেল রাজনীতিবিদদের মধ্যে তিনি প্রথম সারিতে আছেন।
মেলানিয়া জোলি: বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জোলি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশিষ্ট নাম এবং তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করলে ট্রাম্প-সম্পর্কিত বিষয়গুলো তাকে পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়া হবে। তিনি ট্রুডোর কট্টর সমর্থক ছিলেন।
ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক: ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ মিত্র। ফ্রিল্যান্ডের প্রস্থানের পরে তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
এই সবকিছু নিয়ে ট্রাম্প কী ভাবছেন?
২০শে জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার তিন বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার কানাডা, মেক্সিকো ও চীন-এর ওপর সুইপিং শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে নভেম্বরের একটি পোস্টে বলেছিলেন ‘মেক্সিকো ও কানাডা উভয়েরই নিরঙ্কুশ অধিকার এবং ক্ষমতা রয়েছে এই দীর্ঘ সমস্যাটির সহজেই সমাধান করার। বাণিজ্য যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ট্রুডো তার মার-এ-লাগো এস্টেটে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে নভেম্বরে ফ্লোরিডায় যান। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রুডোকে আঘাত করেছেন একাধিকবার। তাকে কানাডার ‘গভর্নর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে, কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারে। বিলিনিয়র প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কসহ ট্রাম্পের বেশ কয়েকজন সহযোগীও তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রুডোকে আক্রমণ করেছেন।
পিয়েরে পোইলিভরে কে?
তিনি সেই ব্যক্তি, যিনি কানাডার পরবর্তী নির্বাচনের পরে প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষণশীল নেতা পিয়েরে পোইলিভরে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য অগ্রগামী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ট্রুডোর অভিবাসন নীতি এবং কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে পোইলিভরের তীব্র সমালোচনা তার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পোইলিভরে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
পার্লামেন্ট হিলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এনডিপি-লিবারেল সরকার আমাদের সিস্টেমকে ধ্বংস করেছে।’ তিনি ট্রুডোর অভিবাসনকে ভুলভাবে পরিচালনা করার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। কনজারভেটিভ নেতা প্রস্তাব করেছেন যে, ভবিষ্যতের রক্ষণশীল সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও চাকরির প্রাপ্যতার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই দেশে আসা লোকের সংখ্যাকে বাড়ির সংখ্যা, স্বাস্থ্যসেবার পরিমাণ এবং কাজের প্রাপ্যতার সঙ্গে সংযুক্ত করব। ‘তিনি অস্থায়ী বিদেশী কর্মী এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র প্রোগ্রামকে অপব্যবহার হিসেবে দেখেন, তা মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের মুদ্রাস্ফীতিকে ‘জাস্টিনফ্লেশন’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেকটা ট্রাম্পের মতো তিনিও নিজেকে মিডিয়ার দ্বারা দুর্ব্যবহারের শিকার হিসেবে বর্ণনা করতে পছন্দ করেন। নারীদের মধ্যেও তার সমর্থন কম। ট্রাম্পের সঙ্গে এখানেও তার আরেকটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণার পর ভোটারদের আহ্বান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোইলিভরেকে বলতে শোনা যায় ‘কানাডা সবার আগে, সবসময়।’ সূত্র: আলজাজিরা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com