রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের ৩০টি কেন্দ্রে ফয়যে বর্ণভী সাবাহী মক্তব বোর্ডের ২য় কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কলমাকান্দায় ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প জগন্নাথপুরে পলাতক আসামী গ্রেফতার-৫ চকরিয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী, সড়ক দুর্ঘটনা, সংঘর্ষ ও মসজিদের বাথ রুমে মুসল্লীর লাশ সহ ৪ খুন : খুনিসহ আটক ৩ মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নে বিএনপি’র কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থাকায় সংবাদ সম্মেলন পাঁচবিবিতে ওলামা মাশায়েখ ও সুধী সমাবেশ ফটিকছড়িতে আকষ্মিক সফরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সদরপুরে এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন গলাচিপায় তারুণ্যে উৎসবে বিভিন্ন পর্বে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ আমাদের মূল সংগ্রাম একনায়কতন্ত্র উৎখাত করা : সাক্ষাৎকারে কেএনডিএফ নেতা

ভ্যাট-ট্যাক্স না বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির সুপারিশ

সাইফুর রহমান:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাট-ট্যাক্স না বাড়িয়ে বিকল্প পথ খোঁজার সুপারিশ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
হুট করেই একশটিরও বেশি পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, নতুন করে আরোপ এবং কিছু পণ্যের কর অব্যাহতি তুলে নিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের আলোচনা-সমালোচনা করছে বিভিন্ন মহল। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট তৈরির শঙ্কা করছে। অবিলম্বে বর্ধিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার ও সরকারকে খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সরকার ১২টি উৎস ও উপায় খুঁজে দেখতে পারে বলে জানিয়েছে।
গতকাল শনিবার (১৮ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। এসময় তিনি এসব সুপারিশ তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত মেগা প্রজেক্টের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত বন্ধ রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। পতিত সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নিজেদের স্বার্থে বছরের পর বছর বাড়ানো হয়েছে এগুলোর মেয়াদ। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরের পর বছর ক্যাপাসিটি চার্জের নামে চলেছে হরিলুট। গত ১৪ বছরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে এমন লুটপাট হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর। শ্বেতপত্র কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশই লুটপাট করা হয়েছে। অধিকন্তু, বাজেটের এমন অনেক খাত রয়েছে, যেমন অবকাঠামো খাতগুলোতে বরাদ্দকৃত বাজেটের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এসব খাতে তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ হ্রাস করে বাজেটের আকারকে আরও যৌক্তিকভাবে
ছোট করে আনা সম্ভব। এভাবে খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকার এমন কিছু উৎস ও উপায় খুঁজে বের করতে পারে যা জনগণের, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর অর্থনৈতিক চাপ ফেলবে না।
ভ্যাট-ট্যাক্স না বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির সুপারিশসমূহ হলো:
১. প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্লাবে ইনকাম ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি এবং সারচার্জ তথা ওয়েলথ ট্যাক্স বাড়ানোর মাধ্যমে কর আদায়ের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। নন-ট্যাক্স এবং নন-রেভিনিউ খাতে আয় বৃদ্ধি করার দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে বরং ভ্যাটের আওতা বাড়ানো যেতে পারে। [নন-ট্যাক্স যেমন নারকোটিক্স ও লিকার ডিউটি, মোটর ভেহিকেল ট্যাক্সেস, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ইত্যাদি এবং নন-রেভিনিউ খাত যেমন ডিভিডেন্ড অ্যান্ড প্রফিটস, ইন্টারেস্ট, অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ ফিস, সার্ভিস ফিস, লিজেস, টোলস ইত্যাদি]।
২. সরকার টিআইএন নম্বরধারীদের রিটার্ন সাবমিট এবং কর আদায় নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। এটি ইনকাম ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে এবং কর সংগ্রহের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
৩. করযোগ্য আয়কে করের আওতায় নিয়ে আসা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এর মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ করা এবং রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়াও, এটি কর ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ এবং সুবিন্যস্ত করতে সহায়ক হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সরকারি আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
৪.দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সম্পদ, যা জব্দ করা হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, আইনানুগ পন্থায় সেই অর্থ ব্যবহার করা সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। তাছাড়া, যে সব সরকারি সেক্টরে অব্যবহৃত ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তা চিহ্নিত করে ঐ সব অলস অর্থের যথাযথ আইনানুগ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
৫.এ মুহূর্তে কালো টাকা উদ্ধারের জোরালো চেষ্টা করা, ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা এবং নন-পারফরম্যান্স লোনের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা উদ্ধার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এখন অতীব জরুরি।
৬.ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রধানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কারণে সবাই আশা করছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এই প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে তাদের প্রদত্ত কঠিন শর্তগুলো শিথিল করার জন্য বলা যেতে পারে। কারণ বলা হচ্ছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে নাকি কর চাপানো হয়েছে। তাছাড়া, দাতাদেশ ও দাতা সংস্থাগুলো কর্তৃক ঘোষিত অনুদান/ঋণের অর্থ ছাড় করানোর ক্ষেত্রেও সরকারকে আরো প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে।
৭. পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অন্যায়ভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল (করপোরেট ট্যাক্স রিবেট)। তারা অনেকেই এই অন্যায়ের পথ বেছে নিয়ে অনৈতিকভাবে কর ফাঁকি দিয়েছেন। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এই অন্যায় ও আর্থিক অনিয়মের পথ বন্ধ করে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে পারে। এর ফলে, একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিসর বৃদ্ধি পেত, ঠিক তেমনি শুল্ক করারোপের মতো জনবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত এড়ানো যেতো।
৮. বিগত সরকার বৃহৎ ঋণ খেলাপিদের নানা অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণের বোঝা বৃদ্ধি করেছে। মাত্র দুই শতাংশ নগদায়ন করে বৃহদাকার ঋণ পরিশোধের রিশিডিউল করে তাদের ঋণ খেলাপির তালিকা মুক্ত করে রেখেছে। সরকারের উচিত এ সব ঋণ খেলাপি অলিগার্কদের অপরিশোধিত ঋণ পরিশোধে এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাধ্য করা।
৯.বর্তমান ভ্যাট ও রাজস্ব প্রশাসনে পতিত সরকারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। ফলে, পূর্বের মতো এই খাতের চলমান অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির কারণে রাজস্ব প্রশাসন তার কাঙিক্ষত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উচিত ছিল রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নজিরবিহীন দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সরকারের বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। জনগণের কাছ থেকে সহজ পন্থায় পরোক্ষ কর আদায় করে রাজস্ব বৃদ্ধির এনবিআরের অযৌক্তিক পরামর্শ জাতীয় স্বার্থবিরোধী।
১০.এছাড়া কর ফাঁকি রোধ করে এবং কর প্রশাসনের উন্নতি করেও রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়। পরিসংখ্যান বলছে, বিভিন্ন খাতে কর ফাঁকির কারণে বছরে সরকারের প্রায় ৫৬ হাজার কোটি থেকে প্রায় তিন লাখ কোটি পর্যন্ত রাজস্ব আয় কম হয়। নানা রকমের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কর ফাঁকি রোধ করা যায়। মোটকথা, কর ব্যবস্থানায় দুর্নীতি-হয়রানি কমাতে এনবিআরের নিরীক্ষায় অটোমেশন নিশ্চিত করতে হবে।
১১.এনবিআরের বর্তমান কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধি সম্ভব নয় এবং গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী লুটেরা গোষ্ঠী ও তাদের দোসর অলিগার্করা জনগণের সম্পদ লুটের অংশ হিসেবে ধনিক শ্রেণির ওপর আয়করের তুলনায় সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর বেশি বসিয়ে রাজস্ব আহরণ করেছে। ছাগল-কা-ের দুর্নীতিবাজ মতিউররা এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দোসর হিসেবে সহযোগী ভূমিকা রেখেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর পরিণতিতে, সমাজে চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২.অর্থনীতির অন্যতম মূল উৎস কৃষির ওপর আরও জোর দিতে হবে। প্রতিদিনকার কৃষিপণ্য উৎপাদনে তথা শাকসবজি উৎপাদনে বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে সব পতিত জমিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যদিও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় আওয়ামী সরকারের আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, সরকার একদিকে খরচ কমিয়ে এবং অন্যদিকে আয় বাড়িয়ে, বর্তমান বাজেট ঘাটতির কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারে এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। সবশেষে বিএনপির এই নেতা সাধারণ জনগণের ওপর কর এবং ভ্যাট তথা পরোক্ষ কর আরোপের মতো এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জাবিউল্লাহ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com