সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের প্রতীক

 মাহবুব নাহিদ 
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫

মন্তব্য প্রতিবেদন
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি যুগান্তকারী ধারণা, যা আমাদের জাতিগত পরিচয়ে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর, যখন পুরো জাতি একটি সত্তার সন্ধানে ছিল, তখন জিয়া তাঁর সাহসী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে উপস্থাপন করেন। তাঁর শব্দগুলো— ‘আমরা ধর্মে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান; ভাষায় বাঙালি, কিন্তু একত্রে আমরা বাংলাদেশি’—আজও আমাদের আবেগতাড়িত করে। এই প্রথাগত চিন্তা আমাদের বিভক্তির প্রাচীর ভেঙে, বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের সীমানা পেরিয়ে একটি সম্পূর্ণ জাতির পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের অসামান্য দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায়, যেখানে ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য সমন্বিত হয়ে একজাতীয়তার ধারণা প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর নেতৃত্বের মূর্তিমান ছবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিভাবে এক শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাসের পটভূমিতে আমরা স্বাধীনতার সূর্য উজ্জ্বল করেছি। আজকের বাংলাদেশে, যখন আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি, জিয়ার আদর্শ আমাদের জন্য একটি প্রেরণার উৎস হয়ে আছে, যা আমাদের ঐক্য ও মানবিকতাকে আরও মজবুত করে। বাঙালি জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল অসীম সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা নিয়ে; চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল, একত্রিত করেছিল এক লক্ষ্য অভীষ্টে। মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধা হিসেবে তাঁর অবদান, জেড ফোর্সের নেতৃত্ব—এগুলো ছিল তাঁর অদম্য সাহসের প্রতীক। শহীদ জিয়া যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন কেউ ধর্ম বর্ণ কোনোকিছুর দিকে তাকায়নি, তাঁর ঘোষণার সাথে ঐক্যমত পোষণ করে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে তিনি যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজও আমাদের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। স্বাধীনতার পর, যখন দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছিল সাহসী নেতৃত্বের উপর, তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর উপপ্রধান পদে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সেই সময়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও সাহস আমাদের অনুপ্রাণিত করে, যেন তিনি ছিলেন আমাদের আশার আলো—যার সাহস ও নেতৃত্বের কথা জাতির ইতিহাসে চিরকাল অমলিন থাকবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের পরিস্থিতি চরম সংকটময় হয়ে ওঠে। শহীদ জিয়া বন্দী হলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, এবং ঠিক তখনই ৭ নভেম্বর সিপাহি বিপ্লব ঘটে। জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হয়ে তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করে, যেখানে তাঁর মূলমন্ত্র ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের স্বনির্ভরতা অর্জন। তিনি সকল বিভেদের ঊর্ধ্বে একটি ঐক্যবদ্ধ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করেন। তাঁর এই অসাধারণ আত্মনিয়োগে জনগণের মধ্যে নতুন একটি বিশ্বাসের সঞ্চার ঘটে। ১৯৮১ সালে শহীদ হওয়ার পরও তাঁর আদর্শ আজও আমাদের মধ্যে বিদ্যমান কারণ তিনি চার বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় আমাদের এগিয়ে দিয়েছেন চার দশকেরও বেশী সময়।
এই সংগ্রামময় পথে খালেদা জিয়া দলের হাল ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে দল ক্ষমতায় ফিরে আসে, এবং এর মাধ্যমে জনগণের মুক্তির নতুন অধ্যায় শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মত্যাগ ও আদর্শ আজও আমাদের পথনির্দেশ করছে, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রেরণার মূল কান্ডারি হিসেবে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে শহীদ জিয়ার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা। তিনি যখন আমাদের জাতিগত পরিচয়ের প্রশ্নে ভাবতে শুরু করেন, তখন একটি গভীর সত্য উপলব্ধি করেন—আমাদের পরিচয় কেবল ভাষা বা ধর্মের দিকেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের জাতীয় সত্তা গড়তে প্রয়োজন ইতিহাসের উজ্জ্বল অর্জন, ভৌগোলিক ঐক্য, এবং ধর্মীয় চেতনার সুষ্ঠু বন্ধন। এই চিন্তা-ভাবনা তাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে যায়, যা আমাদের জাতির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই উপলব্ধি ছিল সময়ের চাহিদা, যখন স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপদের সম্মুখীন ছিল। তিনি জানতেন, বিভক্তি আর সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা আমাদের দুর্বল করবে। তাই তিনি প্রচেষ্টা চালান একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য, যেখানে প্রতিটি জনগণ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে একই ছাতার নিচে থাকবে। তাঁর নেতৃত্বে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সুবিচারের এক সম্মিলিত আলোকবর্তিকা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার পরিচালনার ভিত্তি ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র—সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার, যা দেশের উন্নয়নকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছে। তিনি সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, যা জনসাধারণের মধ্যে সমতা সৃষ্টি করেছে। তাঁর মানবিক মর্যাদা রক্ষার নীতিগুলো প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে, এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে দুর্বল ও অরক্ষিত জনগণের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিল। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা সমাজে গভীর পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
আজকে আমাদের দেশের অনেকেই বাঙালি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দিতে চায়, কিন্তু বাঙালি বলতে গেলেই আমরা যে মানচিত্র রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছি সেই মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত অনেক মানুষকেই অস্বীকার করা হয় বরং ভিন্ন দেশের কিছু মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে যায়। বাংলাদেশ নামের শব্দটার মাঝে যে অন্তর্নিহিত ভাবাবেগ লুকিয়ে আছে তা আমাদের স্বাধীনতার আদর্শকে সমুন্নত করে। আর ঠিক সেই বিষয়টাই বুঝতে পারেন শহীদ জিয়া, অনুভব করেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন।
এভাবে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের শেখান যে একটি জাতির পরিচয় কেবল একাধিক উপাদানে নয়, বরং সেগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। তার চিন্তার মাধ্যমে আমরা আজ বুঝতে পারি, আমাদের শক্তি আমাদের বৈচিত্র্যে; এবং এই বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে আমরা একসাথে গড়ে তুলতে পারি একটি সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক বাংলাদেশ। তাঁর আদর্শ আজও আমাদের প্রেরণা দেয়, যেন আমরা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব অনুভব করতে পারি।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মতো উপজাতীয় নেতাদের গুরুত্ব উপেক্ষা করা যাবে না। লারমা বলেন, ‘আমি একজন চাকমা। আমি বাঙালি নই। আমি বাংলাদেশি।’ তাঁর এই বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জাতীয় পরিচয় কখনও একমাত্রিক নয়। শেখ মুজিবের নির্দেশনায়, উপজাতীয়দের বাঙালি হিসেবে পরিচিত হওয়ার চাপ সৃষ্টি হয়, যা অন্তত ৫৭টি উপজাতীয় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এসময়, জিয়াউর রহমান একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেন, যা বাংলাদেশে জাতিগত ও সাংস্কৃতিক সংহতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষী নয় এই মানচিত্রের সবাই মিলে আমরা এক, এই ধারণা পোষণ করেন শহীদ জিয়া।
তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’ এই সাতটি মৌলিক বিষয়—বাংলাদেশের ভৌগোলিক এলাকা, ধর্ম ও গোত্র নির্বিশেষে জনগণ, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, উপনিবেশের প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ—সবগুলোই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই ভাবনাধারা একটি সমন্বিত জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা করে, যা বাঙালির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আমাদের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যেখানে আমরা একে অপরের বিভিন্নতাকে সম্মান করি এবং সবার অধিকারকে সমান গুরুত্ব দিই। লারমার বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জাতীয় পরিচয় নির্মাণের পেছনে রয়েছে গভীর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের সমন্বয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে প্রবলভাবে স্থান পেয়েছে, যা আমাদের সাম্প্রদায়িক ঐক্যকে আরও মজবুত করেছে। তাঁর চিন্তা ও দর্শন আজও আমাদের হৃদয়ে জীবন্ত, আমাদের পথপ্রদর্শক—একটি গর্বিত ও স্বাধীন জাতির স্বপ্নের চেতনায়। জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা আজও আমাদের সামনে প্রেরণা জোগায়।
শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে ভাবনা আমরা দেখতে পাই, যেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশ থাকবে ঐক্যবদ্ধ, প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে মর্যাদা এবং আইনের সুশাসন পাওয়ার অধিকার। তাঁর সেই আদর্শের জায়গায় যদি আমরা এক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম, তবে আজ আমাদের বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন করতে হতো না কারণ শহীদ জিয়ার আদর্শে বৈষম্যের কোনো স্থান ছিল না। লেখক: কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com