বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কিডস ক্রিয়েশন টিভিতে চলছে শিশুদের নিয়ে কুইজ কম্পিটিশন ‘জিনিয়াস কিডস’ মার্কিন নতুন প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক আরো বাড়বে : নজরুল ইসলাম একাত্তরে আ’লীগ মানুষকে বন্দুকের মুখে রেখে পালিয়েছিল, চব্বিশেও তাই করেছে : মঈন খান ১৮,০০০ ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপির সঙ্গে খেলাফত মজলিসের বৈঠক বিধবংসী আগুন তুরস্কের রিসোর্টে, নিহত কমপক্ষে ৬৬ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, সংবিধানের বিপরীতে হাঁটছেন ট্রাম্প ওষুধ-রেস্তোরাঁ-মোবাইলে ভ্যাট বাড়ছে না ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সিদ্ধান্ত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সরে দাঁড়ালেন সারজিস

কবরের চাপ ও সওয়াল জওয়াব

মো: আবদুর রহমান
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

কবর মানে সমাধি। ইসলামি বিধান মতে, মৃত ব্যক্তির দেহ দাফন বা সমাধিস্থ করা হয়। কবর দেয়ার জায়গাকে ‘কবরস্থান’ তথা সমাধিস্থল বলা হয়। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়টুকু মানুষ কবর তথা সমাধিস্থলে অবস্থান করবে। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় এই সময়কালকে ‘আলমে বারজাখ’ বা অন্তর্র্বতীকালীন সময় বলা হয়। বারজাখ জীবনকে সাধারণত কবর জীবন বলা হয়। কারণ স্বাভাবিক অবস্থায় মৃতদেহ বা লাশ কবর দেয়া হয়ে থাকে। যাদের বিশেষ কোনো কারণে কবর বা দাফন হবে না, তাদেরও বারজাখ জীবন একই রকম হবে। কবরের চাপ : যখন কোনো মৃতদেহকে কবরস্থ করা হয়, তখন থেকেই সে মানুষ পরকালীন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে থাকে। মৃত ব্যক্তি প্রথমেই কবরে মাটির প্রবল চাপের সম্মুখীন হবে। এ থেকে কেউ রেহাই পাবে না। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘সবাইকে কবর চাপ দেবে। কেউ যদি কবরের চাপ থেকে বাঁচতে পারত তাহলে আমার প্রিয় সাহাবি সাদ ইবনে মুয়াজ বাঁচতে পারত।’ (মুসনাদে আহমাদ) সাদ ইবনে মুয়াজ (রা:) ছিলেন রাসূল সা:-এর প্রিয়তম সাহাবিদের একজন। খুব নেককার মানুষ ছিলেন তিনি। হাদিসের ভাষ্যমতে, তার মৃত্যুর সময় আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল। আকাশের দরজাগুলো সাদের সম্মানে খুলে দেয়া হয়। এমন জলিলুল কদর সাহাবিও কবরের চাপ থেকে বাঁচতে পারেননি।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘সাদ এমন নেককার মানুষ, তার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপেছিল। তার সম্মানে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছিল এবং তার জানাজায় ৭০ হাজার ফেরেশতা হাজির হয়েছিল। সে সাদকেও কবর চাপ দিতে ছাড়েনি। তবে আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিয়েছেন।’ (নাসায়ি)
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা:) বর্ণনা করেন, ‘সাদকে কবরে রাখার পর রাসূল সা: কয়েকবার সুবহানাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়লেন।’ আমরাও তার সাথে সাথে দীর্ঘ সময় তাসবিহ ও তাকবির পড়লাম। এ সময় রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কেন আপনি এরূপ তাসবিহ ও তাকবির পড়লেন। রাসূল সা: বললেন, ‘এই নেককার বান্দা সাদের কবর অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি এরূপ করলাম। তাসবিহ ও তাকবির পড়ার পর আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, সাদ (রা:) পেশাব থেকে পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে বেখেয়াল ছিলেন। তাই কবর তার ওপর সংকীর্ণ হয়ে যায়। হজরত হাসান (রা:) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল সা: বলেছেন, সাদকে কবর এমন চাপ দিয়েছে, চাপের চোটে সে চুলের মতো চিকন হয়ে যায়। তার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমি দোয়া করলাম, হে আল্লাহ! সাদের কষ্ট দূর করে দিন। আল্লাহ তায়ালা আমার দোয়া কবুল করে সাদের কবর প্রশস্ত করে দিয়েছেন।’ (বায়হাকি)
কবরের চাপের ব্যাপারে সাহাবি ও তাবেয়িরা সব সময় ভীত থাকতেন। মুজাহিদ (রহ:) বলেন, ‘আমরা রাসুলের যত হাদিস শুনেছি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল কবরের চাপ দেয়ার হাদিস। বিশেষ করে জলিলুল কদর সাহাবি সাদও যখন কবরের চাপ থেকে বাঁচতে পারেননি, তখন আমাদের মতো মানুষের কী উপায় হবে, এ চিন্তায় আমরা পেরেশান।’ (মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক)
কবরের চাপের ভয়ে হজরত আয়েশা (রা:) পুরোপুরি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। একদিন তিনি বিষন্ন মুখে নবীজিকে বলেন, ‘ওগো দয়াল নবী! যেদিন আপনার মুখে কবরের চাপের হাদিস শুনেছি, সেদিন থেকে কলিজায় আমার ভয় ঢুকে গেছে। আমার কিছুই ভালো লাগে না। ভয়ে আমার অন্তর শুকিয়ে গেছে।’ ভয় কাটানোর জন্য নবীজি বললেন, ‘ভয় পেও না আয়েশা। কবর মুমিন-কাফের সবাইকে চাপ দেবে এ কথা সত্য। তবে মুমিনের জন্য সে চাপ একেবারেই হালকা করা হবে।’
সওয়াল জওয়াব ও শাস্তি : আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন ফেরেশতা তার কাছে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়।’ (সুনানে তিরমিজি : ১০৭১) শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ‘কবরে সওয়াল জওয়াব’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, কবরে প্রত্যেক মানুষকে আরবিতে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। তা হলো- ‘মান রাব্বুকা? ওয়া মা দ্বীনুকা? ও মান নাবিয়্যুকা?’ অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার দ্বীন বা ধর্ম কী? তোমার নবী কে? প্রশ্নের শেষাংশটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে রয়েছে। যেমন- ‘ওয়া মান হাজার রাজুল?’ প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে, ‘এই ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এসব প্রশ্নের উত্তরে মুমিন বান্দা বলবে, ‘আমার রব আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম, আমার নবী হজরত মুহাম্মদ সা:’ অথবা ‘তিনি হলেন আমাদের মাঝে প্রেরিত নবী হজরত মুহাম্মদ সা:।’ তারপর জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কীভাবে জানো? মুমিন বান্দা বলবে, ‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ঈমান এনেছি এবং তা বিশ্বাস করেছি।’ এরপর আসমান থেকে একজন ঘোষণা করেন, ‘আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। এ ছাড়া তার জন্য কবর হতে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।’ ফলে তার দিকে জান্নাতের কোমল হাওয়া ও সুগন্ধি আসতে থাকবে। এরপর তার কবরকে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির জন্য কবরও জান্নাত।
আর যারা পাপী, গুনাহগার ও অবিশ্বাসী- তারা প্রশ্নের উত্তরে বলবে, ‘হা! লা আদরি।’ ‘হায়! আমি কিছুই জানি না।’ তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণা করেন, ‘সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।’ তখন তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। এ সময় জাহান্নামের আগুনের তাপ ও উত্তপ্ত বায়ু তার কবরে প্রবেশ করতে থাকবে। এ ছাড়া তার কবরকে এতই সংকীর্ণ করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের পাঁজরের হাড় অপর দিকের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। এরপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরশেতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার হাতে একটি লোহার হাতুড়ি থাকে। যদি এই হাতুড়ি দিয়ে কোনো পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড়ও ধুলোয় পরিণত হয়ে যাবে। আর সেই ফেরেশতা এই হাতুড়ি দিয়ে তাকে প্রচ- জোরে আঘাত করতে থাকে। আর সে আঘাতের চোটে এত বিকট শব্দে চিৎকার করে, যা মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব সৃষ্টিজীবই তা শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর আবার তার দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয়। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকে। মূলত পাপী ব্যক্তি কবরেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘কবর হলো জান্নাতের বাগানসমূহ থেকে একটি বাগান কিংবা জাহান্নামের গর্তসমূহ থেকে একটি গর্ত।’ (সুনানে তিরমিজি ২৪৬০)।
দুনিয়ার জীবন আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। তাই প্রতিটি মুহূর্তে সব চিন্তা চেতনায় ও কর্মসাধনায় আখেরাত বা পরকাল এবং বারজাখ বা কবর জীবনকে স্মরণ করে চলতে হবে। লেখক : সম্পাদক মাসিক সারস পূর্ব রূপসা, খুলনা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com