সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কয়রায় উপকুলের মানুষ নানান প্রতিকুলতার মধ্যে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে কাপাসিয়ায় ৫০ জন সহকারী শিক্ষকের যোগদান : ফুলেল শুভেচ্ছা কমলগঞ্জে ইসলামী যুব মজলিসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক এবং সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সনাক-টিআইবির মানববন্ধন ফটিকছড়িতে ইফতার মাহফিলে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আমরা ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই মাদারীপুরে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেয়া হবে জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা নওগাঁয় ২৫০ জন কুরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা

তুমি রবে নীরবে

হৃদয় বড়ুয়া
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মানবিক চেতনার স্বপ্নবাজ কিডনি যোদ্ধা এস.এম. জাহেদুল হক এর স্মরণে
মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়। পৃথিবীতে মানুষের শারীরিক উপস্থিতি স্বল্পকালীন। এ সময়ের মাঝে কেউ যদি মহৎ অবদান রাখে, সে-ই প্রতিষ্ঠিত হয় মহাকালের ইতিহাসে। অন্যথায় হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। যে মানুষটিকে স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি আজ তাঁর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী তিনি হলেন এস.এম. জাহেদুল হক। পেশায় সাংবাদিক হলেও বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী-সংগ্রামী, পরিশ্রমী সত্যনিষ্ঠ হার না মানা একজন স্বপ্নবাজ মানবিক চেতনার মানুষ। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন আর তা বাস্তবায়নে নিরলস নির্ভিক নির্লোভ ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর কাছে একটা পিতৃস্নেহ, শাসন, অনুরাগ ও ভালোবাসা পেয়েছি। তিনি ছিলেন আমার শিক্ষাগুরু, আদর্শ সমতুল্য। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি আমাকে হাতে কলমে কাজ শিখিয়েছেন ও মানুষের প্রতি দয়া দাক্ষিণ্য অনুকম্পা প্রদর্শন করা শিখিয়েছেন। সর্বদায় দিয়েছেন উদ্যমী হওয়ার অনুপ্রেরণা। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন।
তিনি এ সংস্থার পতাকা তলে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পরিবারসহ বহু গুণী মানুষকে নিজগুণে সমবেত করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি মৃত্যু বরণ করেও বেঁচে আছেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ও তাঁর মানবিক চেতনার কর্মকাণ্ডের মধ্যে। এস.এম. জাহেদুল হক ০১ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলাস্থ উত্তর কাঞ্চনা, মিয়া বাড়ি, মনুফকির হাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মৃত মোজাহেরুল হক, মাতা: মৃত মাহাবুবা বেগম। অত্যন্ত পরোপকারী মেধাবী মানুষটি ১৯৮২ সালে দাখিল, ১৯৮৪ সালে আলিম, কামিল, ১৯৮৭ সালে ফাযিল, ১৯৮৯ সালে বি.এ অনার্স ও ১৯৯৮ সালে এলএল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। স্বপ্নবাজ চেতনার মিষ্টভাষী এস.এম. জাহেদুল হক এর জীবনের সিংহবাগ সময় মানব সেবায় ব্যয় করেন। তিনি সাংবাদিকতার পেশায় সিএমইউজে (ঈগটঔ) এর সাবেক অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক কর্ণফুলী, দৈনিক খবরপত্র, দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকায় ব্যুরো চীফ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় নানা দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছুঁেট আসা এস.এম জাহেদুল হক এর জীবদ্দশায় এতসহজ ছিল না। তিনি সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থারও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আচার-আচারণ, নম্র-ভদ্রতায় জয় করেন মানুষের হৃদয়। পরিচিতি পায় জাহেদ ভাই নামে। তাঁর ১০০ ফুটের অফিসে সকল স্তরের মানুষ ছুটে আসতো। বলা যায়, বুদ্ধিমত্তা ও একজন ভালো পরামর্শক এবং দক্ষ সংগঠক ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হন, নেমে আসে তাঁর জীবন বেয়ে এক কালো অধ্যায়। এ ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস চিকিৎসা চালাতে গিয়ে তিনি হিমশিম খেয়ে যান। এক পর্যায়ে দুটি কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। তিনি ২০১৬ সালে ভারতের একটি মেডিকেলে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেন। ব্যয়বহুল কিডনি চিকিৎসার ভার বহন করতে না পেরে অকালে বিনা চিকিৎসায় বহু মানুষের মৃত্যু তাঁকে ভাবিয়ে তুলে, অংঙ্গীকার করেন তাদের জন্য কিছু করার। জীবদ্দশায় জাহেদুল হক একজন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগী হওয়ার সত্ত্বেও দিন-রাত হতদরিদ্র কিডনি রোগীদের সেবায় সব সময় অতিবাহিত করে যান। কিডনি রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একাগ্রচিত্তে। এমন ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস খরচ ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সামর্থ না থাকা হতদরিদ্র কিডনি রোগীদের কল্যাণের জন্য ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা। তাঁর মেধা, হার না মানা অদম্য প্রত্যয়ে স্বপ্ন নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলা কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা ২০২২ সালে গণপপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধন পায়। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ‘যে ভোর চড়ই-ঘুঘু-বুলবুলির রাজত্বে থাকে সে ভোরে ছিল পেঁচার আত্মনাদ’! স্বপ্নবাজ কিডনি যোদ্ধা এস.এম জাহেদুল হক আর নেই। এমন না ফেরার দেশে পাড়ি দেয়া স্বপ্নবাজকে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাঁর বলা একটি শব্দ হৃদয়ে তীব্র আঘাত করেছে যা এখনও করছে- ‘‘হৃদয় কিডনি রোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল করে যেতে পারলে আমার আত্মা শান্তি পাবে, কিডনি রোগীদের আত্মনাদ আমাকে ঘুমাতে দেয় না’’। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, রাত ৩টায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অত্যন্ত মেধাবী-সংগ্রামী, পরিশ্রমী সত্যনিষ্ঠ হার না মানা এই স্বপ্নবাজ মানবিক চেতনার মানুষটিকে নিজ গ্রামে মসজিদ প্রাঙ্গণে পারিবারিক কবর স্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়। তাঁর ১ম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাচিত্তে স্মরণ করছি। স্মৃতিতে তিনি অমর হয়ে রবে হৃদয়ে। প্রভু দয়াময় তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায় হোন, তাঁর পরিবার-পরিজনের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এটাই আজকের দিনের একমাত্র কামনা।
লেখা: হৃদয় বড়ুয়া (সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, আজীবন সদস্য- কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা (কেপিডব্লিওএ)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com